অর্ণব আইচ: কোটি কোটি টাকা সেক্সটরশন চক্রের হাতেও। সেই টাকাও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে (Cryptocurrency) পরিবর্তিত হয়ে পাচার হচ্ছে বিদেশে। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের। লোন অ্যাপ থেকে শুরু করে গেমিং অ্যাপ – একের পর এক জালিয়াতির হদিশ পাচ্ছে পুলিশ। আর এসবের মাধ্যমে জালিয়াতদের রোজগার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই বিপুল টাকার একটি বড় অংশ পরিবর্তন করা হয়েছে বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। ইতিমধ্যে গার্ডেনরিচে গেমিং অ্যাপ (Gaming App) প্রতারণা চক্রের আমির খানের বেশ কয়েক কোটি টাকার ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজেয়াপ্ত করতে সক্ষম হয়েছে কলকাতা পুলিশ ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)।
কিন্তু এবার সেক্সটরশন চক্রের তদন্ত করতে গিয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) হাতে। ভিডিও কল করলেই অপর পারে সুন্দরী মহিলার অশ্লীল আচরণ। পিছনে যাঁকে ফোন করা হয়েছে, তাঁর ছবি। সেই ভিডিও ক্লিপিংস তুলে রেখে টানা ব্ল্যাকমেল। কোনও পুলিশকর্তার ছবি হোয়াটসঅ্যাপের (WhatsApp) ডিপিতে রেখে মেসেজ পাঠায় জালিয়াতরা। আর তাতে ভয় পেয়ে অনেকেই টাকা পাঠাতে শুরু করেন জালিয়াতদের। রাজস্থানের (Rajasthan) ভরতপুরের জালিয়াতরা প্রথমে এই ধরনের জালিয়াতি শুরু করলেও পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে, কলকাতা ও তার আশপাশে বসেই অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে বা ‘সেক্সটরশন’ করে টাকা তুলছে এই রাজ্যের কয়েকজন বাসিন্দাও।
[আরও পড়ুন: অনুব্রত-সুকন্যার পঞ্চম লটারির হদিশ পেল সিবিআই! অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল ৫০ লক্ষ টাকা]
এই ব্যাপারে তদন্ত করে একটি চক্রের সন্ধান পান লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকরা। এই চক্রের ছ’ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। লালবাজারের গোয়েন্দাদের দাবি, তাদের মধ্যে সুভাষ আচার্য নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটেই মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই ‘সেক্সটরশন’ জালিয়াতি চক্রের মাথা সুভাষের অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রতি লেনদেন হয়েছে দেড় কোটি টাকা। ওই বিপুল টাকার প্রায় পুরোটাই জালিয়াতির। ওই টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির অ্যাকাউন্টে। এভাবেই সেক্সটরশন চক্রের জালিয়াতরাও ওই টাকা পাঠাচ্ছে বিদেশে। এবার গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন, সেক্সটরশন করে এখনও পর্যন্ত কত কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে এই চক্র।
[আরও পড়ুন: কেরলে রাজ্যপাল-সরকার সংঘাত তুঙ্গে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে সরানো হল আরিফকে]
লালবাজারের (Lalbazar) এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানান, রেকর্ড করা ভিডিও দেখিয়েই ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করে জালিয়াতরা। সচেতনতার ফলে সেক্সটরশন কিছুটা কমেছে। যদিও অনেকেই লজ্জায় ও সামাজিক সম্মান হারানোর ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে চান না। ইতিমধ্যেই যে সেক্সটরশন করে বিপুল পরিমাণ টাকা জালিয়াতরা রোজগার করেছে, তার প্রমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা বিদেশে পাঠানো। পুলিশের কর্তাদের পরামর্শ, অচেনা কেউ ভিডিও কল করলে তা রিসিভ না করতে। আর যদি কেউ ফোন তুলেও ফেলেন ও ব্ল্যাকমেল শুরু হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে যেন তিনি সাইবার থানা বা নিজেদের এলাকায় সাইবার সেলে অভিযোগ জানান। তাতেই তিনি ব্ল্যাকমেলের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।