অর্ণব আইচ: বাবার মৃত্যু হয়েছে আগেই। পারিবারিক ব্যবসার অবস্থাও ভাল নয়। তাই এমবিএ পড়তে ‘সেক্সটরশন’ জালিয়াতিকেই বেছে নিয়েছিল যুবক। রাজস্থানের জয়পুর শহরের উপকন্ঠের বাসিন্দা এমবিএ-র (MBA) ফাইনাল বর্ষের ছাত্র অভিষেক সিং শেখাওয়াতকে কলকাতায় নিয়ে আসার পর তাকে জেরা করে লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দাদের হাতে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ‘সেক্সটরশন’ (Sextortion) চক্রের শিকার হয়েছিলেন কলকাতার একটি নামী বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্তা। তাঁর মোবাইলে প্রথমে ভিডিও কল আসে। ভিডিও কলের অন্যদিকে স্বল্পবসনা মহিলাকে দেখা যায়। ওই ব্যক্তির ভিডিও ‘ক্যাপচার’ করে নিজেকে পুলিশকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে তাঁকে হোয়াটস অ্যাপে (WhatsApp) মেসেজ পাঠায় এক জালিয়াত। তাঁকে বলা হয়, টাকা না দিলে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও আপলোড করে দেওয়া হবে। তিনি লোকলজ্জার ভয়ে তাদের চাহিদামতো একাধিক ব্যাংক অ্যাাকউন্টে টাকা পাঠাতে শুরু করেন। এভাবে তাঁর কাছ থেকে ৬৭ লক্ষ টাকা তোলাবাজি বা ‘সেক্সটরশন’ করে জালিয়াতরা। শেষ পর্যন্ত তিনি লালবাজারের সাইবার থানায় (Cyber Crime PS) অভিযোগ দায়ের করেন।
[আরও পড়ুন: বাবা হলেন দক্ষিণী অভিনেতা রামচরণ, বিয়ের ১১ বছর পর সন্তান সুখ পেলেন অভিনেতা]
গোয়েন্দাদের একটি দল তদন্ত করে প্রথমে উত্তরপ্রদেশের বেরিলি থেকে অমিত কুমার নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেন। তাকে জেরা করে ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে জানা যায়, চক্রের বাকিরা রয়েছে রাজস্থানে। সেই সূত্র ধরেই রাজস্থানের জয়পুরের উপকন্ঠে ছান্দওয়াজি এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে অভিষেক সিং শেখাওয়াত নামে ওই যুবকের সন্ধান পায়। তাকে জেরা করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ‘সেক্সটরশন’-এর পাঁচ লক্ষ টাকা। এছাড়াও তাঁর নামেই থাকা একাধিক ই ওয়ালেটে বহু টাকা জমা পড়েছে। ক্রমে আলওয়ার ও অন্য কয়েকটি জায়গা থেকে সেই টাকা জালিয়াতরা তুলেও নিয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই অ্যাকাউন্টটি ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’ বা ভাড়ার অ্যাকাউন্ট নয়। রীতিমতো ভরতপুরের ‘সেক্সটরশন’ চক্রের সদস্য হিসাবে সে এই কাজ করেছে।
[আরও পড়ুন: ভোটের ময়দানে প্রাক্তন মাও এরিয়া কমান্ডারের স্ত্রী, অস্ত্র ছেড়ে গণতন্ত্রের শরিক হওয়ার বার্তা]
তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ওই যুবকের বাবা আগেই মারা গিয়েছেন। পারিবারিক ব্যবসা থাকলেও তার অবস্থা ভাল নয়। এর মধ্যেই মেধাবী ছাত্র অভিষেক এমবিএ পড়ছে। এই বছর তার ফাইনাল বর্ষ। এরপর সে এমবিএ-কে ভিত্তি করেই পেশা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল টাকা। যুবকের দাবি, আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেই সে এই ‘সেক্সটরশন’ চক্রে নাম লেখায়। যদিও তার এই দাবি গোয়েন্দারা যাচাই করছেন। তাকে কলকাতায় নিয়ে এসে জেরা করা হচ্ছে। তাকে জেরা করে এই চক্রের কয়েকজনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজস্থানের (Rajasthan) কয়েকজন প্রভাবশালীও। সোমবার অভিষেক সিং শেখাওয়াত নামে ওই যুবককে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাকে ৩০ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। গোয়েন্দাদের ধারণা, এই রাজ্যেও কয়েকজন এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাদেরও সন্ধান চলছে।