নব্যেন্দু হাজরা: ২০১৯ সালের দুঃসহ স্মৃতি ফিরল বউবাজারে (Bow bazar)। মেট্রোর কাজের জন্য মাঝরাতে বেশ কয়েকটি বাড়িতে ফাটল। আতঙ্কে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে তাঁরা হোটেলে যেতে নারাজ। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে (KMRCL) দুষছেন তাঁরা। শুক্রবার সকালে মেট্রোরেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি পরিদর্শনে গেলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বাড়িছাড়া বাসিন্দারা। প্রশ্ন একটাই, কেন বারবার এমন বিপদের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের? কেন অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না? এনিয়ে তিনবার বউবাজারে মেট্রোর কাজের জন্য একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হল।
দুর্গা পিতুরি লেনের পর এবার মদন দত্ত লেন। তিন বছরের ব্যবধানে বিপদের মুখে বউবাজারের পাশাপাশি দুই গলির বাসিন্দারা। ২০১৯ সালে হাওড়া-ধর্মতলা মেট্রো রুটের জন্য সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ চলাকালীন কেঁপে উঠেছিল দুর্গা পিতুরি লেনের একাধিক বাড়ি। ফাটলের (Crack) জেরে থেকে কোনও কোনও বাড়ি আর বাসযোগ্য ছিল না। মাথার উপর ছাদ কার্যত ভেঙে পড়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের রাতারাতি বাড়ি খালি করে দিতে বলে KMRCL. তাঁদের নিকটবর্তী হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। দীর্ঘদিন সেখানে থাকার পর মেরামত করা বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু ততদিনে অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। নানা অসুবিধার মধ্যে বাড়িছাড়া মানুষগুলোকে দিন কাটাতে হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘ওদের শাস্তি দেবে জনতা’, গান্ধীজিকে মহিষাসুর সাজানোয় পুজো উদ্যোক্তাদের আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর]
চলতি বছর মে মাস নাগাদও ফের ফাটল আতঙ্ক দেখা দেয় বউবাজারের স্যাকরাপাড়া লেনে। তারপর ১৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ফের সেই বিভীষিকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাত প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘুমের ঘোরেই তাঁরা টের পান, বাড়ি কাঁপছে। অন্তত ১০ টি বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে ফাটল। কোনওক্রমে প্রাণ হাতে নিয়ে রাতটুকু কাটিয়েছেন তাঁরা। এরপর ভোর হতেই তাঁরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। কারণ, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা এই শিক্ষা নিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: বিপুল চাহিদা, নিত্য অশান্তি সংসারে, স্ত্রীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে দোতলা থেকে ঝাঁপ স্বামীর]
সকাল প্রায় সাড়ে ৬টা নাগাদ KMRCL-এর আধিকারিকরা যান মদন দত্ত লেনে, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান ঘরহারা মানুষজন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। তিনি মেট্রো কর্তৃপক্ষের উপর তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁর কথায়, ”মেট্রো কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য আজ এই অবস্থা। এতগুলো মানুষকে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হল। বারবার সুরক্ষা ছাড়াই মেট্রোর কাজ হচ্ছে। এই যে মানুষগুলোর বিপদে আমি কিছু সাহায্য় করতে পারছি না, এটা তো আমার যন্ত্রণা।” ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের দাবি, তাঁদের যথাযথ নিরাপত্তা দিতে হবে। হোটেল নয়, তাঁদের বাড়িগুলিই দ্রুত মেরামত করে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন।