shono
Advertisement

বেহালা জোড়া খুন: দিদি ও ভাগ্নেকে হত্যার পর লুটের গয়না বিক্রি করে মদ কেনে দুই ভাই! প্রকাশ্যে নয়া তথ্য

দিদির মৃত্যুর জন্য সহকর্মীদের কাছে দুঃখপ্রকাশও করেছিল মূল অভিযুক্ত সঞ্জয়।
Posted: 08:26 PM Sep 13, 2021Updated: 08:26 PM Sep 13, 2021

অর্ণব আইচ: বেহালা জোড়া হত্যাকাণ্ডের (Behala Double Murder) তদন্তে নেমে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল লালবাজার। দিদি আর ভাগ্নেকে খুনের পর লুটের গয়না ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল সঞ্জয় ও সন্দীপ। দু’জনে ভাগ করে নিয়েছিল সেই টাকা। সেই টাকা দিয়ে মদের বোতল কিনেছিল দাদা সঞ্জয় দাস। যখন পুলিশ তাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের বাড়ি থেকে নিয়ে আসে, তখনও মদ্যপ অবস্থায় ছিল সঞ্জয়।

Advertisement

রবিবারই বেহালার পর্ণশ্রীর মা-ছেলে খুনের রহস্যভেদ করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মৃতার মাসতুতো ভাই সঞ্জয় দাস ও সঞ্জীব দাসকে। সোমবার তাদেরকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া জিনিসগুলি ফরেনসিক পরীক্ষা ও মালখানায় রাখার আবেদন জানান। সরকারি আইনজীবী শুভাশিস ভট্টাচার্য আবেদনে বলেন, “এটি বিরলতম অপরাধ, যেখানে দুই মামা মিলে এক কিশোরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। খুন করেছে দিদিকেও। এই ঘটনার পুননির্মানের প্রয়োজন। এ ছাড়াও ঘটনার পিছনে আরও কোনও বড় মাথা রয়েছে কি না, তা জানার প্রয়োজন।” তাই তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখার আবেদন জানানো হয়। জামিনের আবেদন জানান ধৃতদের আইনজীবী অসীম সরকার। দু’পক্ষের বক্তব্য সঞ্জয় ও সন্দীপকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

[আরও পড়ুন: কলকাতায় মিলল আফ্রিকায় রোগ ছড়ানো মশা, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া প্রকোপের মাঝে চিন্তা বাড়ল দ্বিগুণ]

পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাই সঞ্জয় ও সন্দীপ দিদি সুস্মিতা ও ভাগ্নে তমোজিৎকে খুনের পর বাড়ি থেকে আংটি, কানের দুলের মতো কয়েকটি গয়না লুট করে। সেগুলি একটি সোনার দোকানে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রির করে। সেই টাকা দিয়ে মদ কেনে সঞ্জয়। তাকে যখন লালবাজারে জেরা করা হয়, তখন সে জানায় তার দিদি খুন হয়েছে। তাই তার মানসিক অবস্থা ভাল নেই। যদিও আগেই পর্ণশ্রীর সেনপল্লি এলাকার একটি সিসিটিভির ফুটেজ পান গোয়েন্দারা। সেখানে দু’ভাইকে বাইকে করে যেতে দেখা যায়। ওই তথ্য তাকে জানানোর পর ভেঙে পড়ে সে। জেরার মুখে জানায়, দিদি ও ভাগ্নেকে খুনের সময় তাদের জামায় রক্তের দাগ লাগে। ছোট ভাই পেশায় গাড়ির চালক সন্দীপের কাছে একটি অতিরিক্ত জামা থাকে। সে রক্তমাখা জামা পালটে সেই টি-শার্ট পরে নেয়। বড় ভাই সঞ্জয় আলমারি থেকে জামাইবাবু তপনের জামা পরে পালিয়ে যায়।

সুস্মিতার ফ্ল্যাটের বেসিনে ধুয়ে ফেলে ছুরি। সুস্মিতার মোবাইলটি তাঁর বাড়ির আশপাশের একটি নোংরা জায়গায় ফেলে দিয়েছে বলে দাবি ধৃতদের। রক্তমাখা জামাকাপড়, ছুরি, মোবাইলের সন্ধান চলছে। জেরার সময় ধৃতদের প্রশ্ন করা হয়, সঞ্জয়ের কথায় ভাই সন্দীপ দিদিকে খুনের ছকে রাজি হল কেন? জেরায় তারা জানিয়েছে, সৎ ছেলেকে ৬ মাস আগে বিয়ে দেওয়ার পর তার মাথার উপর ছিল তিন লক্ষ টাকা দেনা। তার উপর লকডাউনে (Lockdown) বেতন অনেকটাই কমেছে। সেই কারণে সঞ্জয় সংসারের পিছনে বেশি খরচ করতে পারত না। তাই ভাই সন্দীপকেই সংসারের সেই বোঝা টানতে হত। সঞ্জয় তাকে বোঝায়, দু’জন মিলে মাসতুতো দিদি সুস্মিতার গয়না লুঠপাট করলে তাদের সংসারের অবস্থা ফিরবে। সন্দীপ ঘটনার দিন চারেক আগে দাদার কথায় রাজি হয়।

যে শপিং মলে সঞ্জয় দাস চাকরি করত, সেই মলের কর্মীরা এই ভেবে শিউরে উঠছেন যে, এরকম একজন ‘সাংঘাতিক খুনের অভিযুক্ত’ বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে কাজ করেছে। এমনকী, যে ছুরি যে কেবল কাটার কাজে ব্যবহার করত, সেটি দিয়েই খুন করেছে। যেহেতু সঞ্জয় শপিং মলে সিসিটিভি দেখাশোনার কাজ করত, তাই তাকে ‘ক্যামেরাম্যান’ বলেই ডাকতেন সহকর্মীরা। এক কর্মচারী জানান, তার অভিব্যক্তি দেখে কেউই ধারণা করতে পারেননি যে, সে এই ধরনের অপরাধ করেছে। জানা গিয়েছে, দিদি খুন হয়েছেন বলে কর্মক্ষেত্রে দুঃখপ্রকাশও করেছিল সঞ্জয়। তার এই অপরাধে রীতিমতো ক্ষুব্ধ কর্মচারীরা। ধৃতদের জেরা করে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: হেস্টিংসের বিজেপি কার্যালয়ে রইল না রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘর! দল থেকে ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement