স্টাফ রিপোর্টার: ঘরোয়া কোন্দলে জেরবার বঙ্গ বিজেপি। দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের সঙ্গে সংঘাত প্রকাশ্যে চলে আসছে দলের বড় অংশের। সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar), দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) আর শুভেন্দু অধিকারীরা (Suvendu Adhikari) কার্যত তিন মেরুতে বিভক্ত। আর সেই পরিস্থিতির মধ্যেই ফের সংগঠিত হওয়ার কাজ শুরু করে দিল বঙ্গ বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবির। রবিবার বিজেপি নেতারা যখন কর্মসূচিতে বিভিন্ন জেলায় ব্যস্ত, তখন বিজেপির রাজ্য দফতরের কাছেই সূর্য সেন স্ট্রিটে হয়ে গেল বিক্ষুব্ধ শিবিরের একাংশের গোপন বৈঠক।
বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের ব্যানারে সেই বৈঠকে পাঁচটি জেলা থেকে আসা গেরুয়া শিবিরের প্রাক্তন জেলাস্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আর সেই বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ১৯ জানুয়ারি দলীয় কর্মসূচিতে রাজ্যে এলে জে পি নাড্ডার (J P Nadda) সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হবে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের তরফে। বঙ্গ বিজেপির কোন্দলের বিষয়টি নাড্ডার সামনে তুলে ধরতে চান বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের প্রতিনিধিরা। সাক্ষাতের জন্য আর্জি জানিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে রবিবার রাতে চিঠিও পাঠিয়েছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপির একাংশ।
একুশের নির্বাচনে ভরাডুবির পর বঙ্গ বিজেপির সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হয়েছে। তারপর একাধিক উপনির্বাচন ও পুরভোটে পর্যদুস্ত হয়েছে গেরুয়া ব্রিগেড। ভোটের গ্রাফও ক্রমশ নেমেছে। আর নেতাদের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপের পালা চলছে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ফাটল প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্য বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর থেকে শুরু করে সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। দল পরিচালনা নিয়ে দলীয় বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার ও অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আরেক সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এরপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুকান্ত-দিলীপ ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে দূরত্ব সামনে এসেছে। এসবই দিল্লির নজরে রয়েছে।
[আরও পড়ুন: এবার প্রস্রাবের গতি বলবে রোগের উৎস, মেডিক্যালে চালু ‘ইউরোডায়নামিক স্টাডি’]
এই পরিস্থিতি পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪-এ লোকসভা ভোটের কথা ভেবে দলকে চাঙ্গা করতে হলে অযোগ্য ও কাজ না করা শুধু পদ আঁকড়ে পড়ে থাকা নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরানো প্রয়োজন। পুরনো ও যোগ্যদের গুরুত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছে বিক্ষুব্ধ শিবির। দ্বন্দ্ব মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কড়া বার্তার পরও পরিস্থিতি বদলায়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবিতে সরব দলের বড় অংশ। এরই মধ্যে জে পি নাড্ডার কাছে রাজ্য বিজেপির ডামাডোল অবস্থার ছবিটা তুলে ধরতে চায় বিক্ষুব্ধ শিবিরের বড় অংশ। রবিবার সূর্য সেন স্ট্রিটে ত্রিপুরা হিতসাধিনী সভা হলে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের তরফে প্রাক্তন নেতৃত্ত্ব দীপক সরকার, শামসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, বীরভূম, কলকাতা জেলা থেকে প্রাক্তন মণ্ডল, ওয়ার্ড সভাপতি ও জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য অনেকেই হাজির ছিলেন বৈঠকে।
দীপক সরকারের বক্তব্য, ‘‘২২টি জেলার পুরনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। রাজ্য বিজেপি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বহু জায়গায় প্রার্থী দিতে পারবে না। সেখানে আমাদের দলের পুরনো অনেকে নির্দল হিসাবে দাঁড়াবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য বিজেপিতে পুরনোদের ব্রাত্য রাখা হচ্ছে। কাজের লোকেদের বাদ দিয়ে কাছের ও পছন্দের লোকেদের নিয়ে চলছে অমিতাভ শিবির। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চেয়ে নেতৃত্বে বদলের দাবিতে আমরা নাড্ডাজির দ্বারস্থ হব।’’ ১৯ জানুয়ারি কৃষ্ণনগরে একটি সভা করার কথা রয়েছে জে পি নাড্ডার। সেখান থেকে কলকাতায় ফিরে নিউটাউনের একটি হোটেলে রাজ্য নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। সেখানেই নাড্ডার সঙ্গে দেখা করার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ।