গোবিন্দ রায়: এ যেন উলট পুরাণ। যখন স্ত্রীধন থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগে একাধিক মামলা বিচারাধীন কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta HC), আদালতের নির্দেশ সত্বেও স্বামী পরিত্যক্তাকে স্ত্রীধন ও ভরণপোষণ পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেসময়ই তখনই অসহায় বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে ভাড়াটে গুণ্ডা দিয়ে ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একমাত্র ছেলের বউয়ের (Daughter in Law)বিরুদ্ধে। ছেলের জন্য পছন্দ করে আনা এহেন বউমার কীর্তি শুনে তাজ্জব হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। মনে করালেন গৃহবধূর নিজের বাবা-মায়ের কথা। বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি বললেন, “যে শ্বশুর-শাশুড়ি একদিন পছন্দ করে বাড়ি এনেছিলেন, তাঁদেরকেই বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন!”
জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে সম্বন্ধ করে মধ্য কলকাতার (Kolkata) বাসিন্দা দেবযানীর সঙ্গে সাঁতরাগাছির শুভঙ্করের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অশান্তির সূত্রপাত। গত ২৩ ডিসেম্বর সাঁতরাগাছি থানার দুই পুলিশকর্মীর উপস্থিতিতে ছেলের বউ শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। পরে বছর পঁচাশির শ্বশুর, পেশায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী ও ৭৫ বছরের শাশুড়িকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়ে তাঁদের একমাত্র অবলম্বন বাড়ি ফিরে পেতে চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধ দম্পত্তি।
[আরও পড়ুন: অস্কারে চূড়ান্ত মনোনয়নে ‘ওপেনহাইমার’-এর দাপট, কোনও ভারতীয় ছবি জায়গা পেল?]
শুক্লা বসু ও সুনীল বসুর দায়ের করা সেই মামলাতেই উঠে আসে গুণধর বউমার এহেন কীর্তি। অবিলম্বে সাঁতরাগাছি থানার পুলিশকে ওই বৃদ্ধ দম্পত্তি বাড়ি ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। আদালতের আরও নির্দেশ, কোনওভাবে ওই দম্পতিকে যাতে হেনস্থা হতে না হয়, সাঁতরাগাছি থানাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে, ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতে মামলাকারীর তরফে আইনজীবীদের দাবি ছিল, “আগেই নিম্ন আদালত গার্হস্থ্য হিংসা ও বধূ নির্যাতনের (Domestic Violence Case) অভিযোগে গৃহবধূর আনা মামলা খারিজ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে, স্ত্রীধন পেতে গৃহবধূর আবেদনের ভিত্তিতে হাওড়া আদালত সাঁতরাগাছি থানার পুলিশকে স্ত্রীধন চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল। পরে আদালতে উপস্থিত হয়ে সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ ছিল আদালতের। কিন্তু অভিযোগ, স্ত্রীধন চিহ্নিত করার নামে শ্বশুর বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বউমা। হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা হয় বাড়ির দরজা। এবং বহিরাগত ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বৃদ্ধ দম্পত্তিকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। আদালতে তার ভিডিও ফুটেজও পেশ করা হয়।
আইনজীবী আরও জানান, বৃদ্ধ দম্পত্তির ছেলে ১০০ নম্বর পুলিশকে ফোন করলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে দেখে আগেই ভাঙচুর করা হয়ে গিয়েছে। আদালত জানতে চায়, “কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে?” যদিও রাজ্যের দাবি, “খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কিন্তু পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ জানায়নি।”
[আরও পড়ুন: ‘রামচন্দ্র’ই পেলেন না রামলালার দর্শন! অযোধ্যা গিয়েও হতাশ অরুণ গোভিল]
পালটা আদালতের প্রশ্ন, “আপনারা এতো জায়গায় স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করেন। এখানে কেনও করেননি? যেখানে আপনাদের দুজন অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে এলেন দরজা ভাঙা?” কিন্তু তার প্রেক্ষিতে কোনও যুক্তি দিতে পারেননি সরকারি কৌঁসুলি। আদালতে দম্পতির বউমার আইনজীবীর অবশ্য দাবি, “তালা ভাঙার অভিযোগ আংশিক সত্যি।” তাঁর উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, “আপনি বাড়িতে ঢুকেছেন কোন এক্তিয়ারে? এখন বাড়ি দখল করেছেন কোন অধিকারে? নিম্ন আদালত কি আপনাকে সেই নির্দেশ দিয়েছিল?”