দীপঙ্কর মণ্ডল: রাজ্যের বিকল্প শিক্ষানীতিতে আপত্তি নেই কেন্দ্রের। রবিবার কলকাতায় বণিকসভার অনুষ্ঠান শেষে এ কথা জানালেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। রাজ্য সরকারের উদ্যোগ মেনে নিয়েও তাঁর কটাক্ষ, “গোটা দেশ যা করে বাংলার সরকার ভিন্ন কিছু করতে চায়। এটা রাজনৈতিক নাকি অন্য কারণে, তা আমি জানি না। তবে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে কোনও রাজ্য যদি কিছু যোগ করতে চায়, তা সাংবিধানিক অধিকার। তাতে কোনও আপত্তি নেই।”
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির আগেই বিরোধিতা করেছে রাজ্য। রাজ্যের বিকল্প শিক্ষানীতি তৈরিতে ১০ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে। বিকল্প শিক্ষানীতিতে কর্মসংস্থানকে বেশি গুরুত্ব দিতে চায় রাজ্য সরকারের নতুন কমিটি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ানোয় নজর দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
[আরও পড়ুন: আসানসোলের জেতা আসনে হার কেন? ক্ষুব্ধ শাহ-নাড্ডা, অমিতাভ চক্রবর্তীকে তলব দিল্লিতে]
রাজ্যের শিক্ষাবিদদের একটি অংশ মনে করছে, কেন্দ্রীয় নীতি কার্যকর হলে শিক্ষায় বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ হবে। এদিন ধর্মেন্দ্র (Dharmendra Pradhan) বলেন, “ড. কস্তুরীরঙ্গন-সহ দেশের সেরা শিক্ষাবিদরা জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করেছেন। রাজ্যগুলিকে ইতিমধ্যে তা জানানো হয়েছে। তারপরও বিরোধিতা হচ্ছে। আমরা চাই শিশুশিক্ষা শুরু হোক তাদের মাতৃভাষাতেই। বাংলার সরকার হয়তো তা চায় না। এইজন্যই বিরোধিতা করছে।” কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি লাগু না করলে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে গড়িমসি হওয়ার আশঙ্কা করছে শিক্ষামহলের একাংশ। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা স্কুল, উচ্চশিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যৌথ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ করি। ভবিষ্যতেও তাই হবে। রাষ্ট্রীয় শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে। দেশের বেশিরভাগ রাজ্য জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে নিলেও পশ্চিমবঙ্গ তা করছে না। আমরা কর্মসংস্থানমুখী যে শিক্ষা চালু করতে চাই, তা বাংলার সরকার চায় না।”
শিক্ষানীতি অন্য রাজ্যগুলিতে মান্যতা পাচ্ছে কি না বা সেই নীতির কোন কোন দিক প্রয়োগ করা যেতে পারে, তা পর্যালোচনা করতে দশ সদস্যের কমিটি গড়েছে এ রাজ্যের সরকার। কমিটির সদস্যরা দেখবেন মহারাষ্ট্র এবং কেরলে ওই নীতির কতটা গৃহীত হয়েছে। কমিটিতে আছেন আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসু, যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, দুর্গাপুর এনআইটির অধিকর্তা অনুপম বসু, ম্যাকাউটের উপাচার্য সৈকত মৈত্র, শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটির অভীক মজুমদার, সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: সাধারণের উপরে বাড়তে পারে করের বোঝা! তুলে দেওয়া হচ্ছে জিএসটির ৫ শতাংশের ধাপ]
২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গাইডলাইনও খতিয়ে দেখবেন কমিটির সদস্যরা। কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতি লাগু হলে রাজ্য সরকারের উপর আর্থিক বোঝা বাড়বে বলে মনে করছে স্কুল ও উচ্চশিক্ষা দপ্তর। এই ধারণা অমূলক বলে দাবি করেছেন ধর্মেন্দ্র। অন্যদিকে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশে শিক্ষক নিয়োগে তদন্ত চলছে। আইন আইনের পথে চলবে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে রাজ্যগুলির সতর্ক থাকা উচিত।” খড়গপুর আইআইটির রাজারহাট কেন্দ্রে নতুন উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার ঘোষণাও করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী।