গৌতম ব্রহ্ম: ব্যোমকেশ বক্সির ‘শজারুর কাঁটা’ মনে আছে? হার্ট নিশানা করে হামলা চালিয়েও ব্যর্থ হয় আততায়ী। কারণ, বাঁদিকের বদলে আক্রান্তের হার্ট ছিল বুকের ডানদিকে। শজারুর কাঁটার হাত থেকে না হয় প্রাণে বেঁচেছেন, কিন্তু এমন ‘উলটপুরাণ’ শারীরিক গঠনসম্পন্ন ব্যক্তির যদি পেটের অসুখ হয়? তা হলে কিন্তু ঘোর বিপদ। রোগনির্ণয় থেকে অস্ত্রোপচার সবেতেই বিস্তর সমস্যা। সাম্প্রতিক বাস্তবে যেমন অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন এনআরএসের শল্যবিদরা।
পেটে যন্ত্রণা নিয়ে এনআরএসের সার্জারি বিভাগের আউটডোরে এসেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার সুবল সাহা (নাম পরিবর্তিত)। বয়স ৩৫। সহকারী অধ্যাপক ডা. ঋতঙ্কর সেনগুপ্ত রোগীকে দেখে এক্স-রে, ইউএসজি ইত্যাদির নিদান দেন। ব্যথা ছিল পেটের বাঁদিকে উপরের অংশে, যেখানে সাধারণত পাকস্থলি ও প্লীহার অবস্থান। তাই ডাক্তারবাবু প্রাথমিকভাবে পাকযন্ত্রের সমস্যাই ঠাওরেছিলেন। কিন্তু রিপোর্ট দেখে মস্ত চমক। দেখা যায়, সুবলের সবই উলটোদিকে! ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে ‘সাইটাস ইনভার্সাস টোটালিস’। হার্ট বাঁদিকে থাকার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে ডানদিকে। লিভার-গলব্লাডার, অ্যাপেনডিক্সও প্রথা ভেঙে ডানদিকের বদলে বাঁদিকে। আবার পাকস্থলি, প্লীহা বাঁদিকের বদলে ডানদিকে।
[আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভরতি বর্ষীয়ান সাহিত্যিক Buddhadeb Guha]
এই জাতীয় রোগীর অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা সার্জনদের প্রায় নেই বললেই চলে। তা সত্ত্বেও ঋতঙ্করবাবু চ্যালেঞ্জ নিয়ে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর কথায়, “এপ্রিলে অপারেশন হয়েছে। মাইক্রোসার্জারি করে গলব্লাডার বাদ দেওয়া হয়েছে। রোগী এখন পুরোপুরি সুস্থ, কয়েকদিন আগে চেক-আপেও এসেছিলেন। আর কোনও সমস্যা নেই।
সার্জারিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সবই মানবদেহের স্বাভাবিক অ্যানাটমিকে মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উল্টোদিকে হওয়ায় সুবলের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন সার্জনরা।
ঋতঙ্কর জানালেন, “টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ ছিল। বেশিরভাগ সার্জনরাই এই ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত নন। তা সত্ত্বেও সফলভাবে গল ব্লাডার অপারেশন করেছি।” এই অস্ত্রোপচারে ঋতঙ্করবাবুকে সহযোগিতা করেছেন ডা. ভাস্কর বড়াই ও ডা. অর্চনা রায়। সাইটাস ইনভার্সাস টোটালিস। প্রতি দশ হাজারে একজনের এই জন্মগত সমস্যা হয়। অর্থাৎ সবই উলটোদিকে। ঋতঙ্করবাবুর পর্যবেক্ষণ, এঁদের এমনিতে কোনও শারীরিক সমস্যা হয় না। তবে অসুখ-বিসুখ করলে তা নির্ণয় করতে প্রবল সমস্যার মুখে পড়তে হয় ডাক্তারবাবুদের। সমস্যায় পড়েন রেডিওলজিস্টরা। আর অস্ত্রোপচারের সমস্যা তো রয়েছেই।