অরিজিৎ গুপ্ত: পাড়ার মেধাবী ছেলে, মাদ্রাসার (Madrasa) শিক্ষক। সে কি না দেশবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত! খবরটা শোনার পর থেকে নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না হাওড়ার (Howrah) আমিরুদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা। সোমবার জম্মুর (Jammu) রামবান জেলা থেকে আল-কায়েদা (Al Qaeda) জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে হাওড়ার সাঁকরাইলের মাসিলা গ্রামের পাঠানপাড়ার বাসিন্দা আমিরুদ্দিন খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারপর থেকেই পাঠানপাড়ায় ফিসফাস।
মঙ্গলবার সকালে আমিরুদ্দিনের পরিবারের লোকজন বাড়ির ছোট ছেলের গ্রেপ্তারির খবর পান। তাঁদের ছেলেকে যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটাই তাঁরা মানতে পারছেন না। ভেবে পাচ্ছেন না কীভাবে তাঁদের বাড়ির এমনকী গোটা গ্রামের মেধাবী ছেলে মাদ্রাসার শিক্ষক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। শুধু পরিবার নয়, মাসিলা গ্রামের অন্য বাসিন্দারাও আমিরুদ্দিনের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। তবে আমিরের পরিবারের লোক হোক কিংবা গ্রামের বাসিন্দা, প্রত্যেকেই চাইছেন ছেলে দোষী হলে তার বিচার হোক।
[আরও পড়ুন: মনুয়া কাণ্ডের ছায়া নদিয়ায়! প্রেমিকের সাহায্যে স্বামীকে ‘খুন’ বধূর, সেপটিক ট্যাঙ্কে মিলল দেহ]
কাশ্মীরে (Kashmr) জামাকাপড়ের ব্যবসা ও মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে আসলে সক্রিয়ভাবে জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কাজকর্ম করত আমির। এমনটাই দাবি পুলিশের। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে অনেক তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। মঙ্গলবার ভাইয়ের গ্রেপ্তারির খবর শোনার পর মাসিলা গ্রামে বসে আমিরের দাদা আজহারউদ্দিন খান জানালেন, আমিরুদ্দিন বাড়ির ছোট ছেলে। সাঁকরাইলে বানিহাল ফইজুল ইসলাম মাদ্রাসায় থাকত আমিরুদ্দিন। এছাড়া উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) গিয়ে একটি মাদ্রাসাতেও পড়াশোনা করেছে সে। মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও শুরু করে। শিক্ষকতা করার পাশাপাশি পারিবারিক জামাকাপড়ের ব্যবসা থাকায় কাশ্মীরে গিয়ে জামাকাপড়ের ব্যবসা শুরু করে।
[আরও পড়ুন: অধিকারী গড়ে চা-চক্রে কুণাল, চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শুভেন্দুকে]
মঙ্গলবার আমিরুদ্দিনের মা আলম আরা বেগম জানালেন, ‘‘আমার ছেলে কাশ্মীরে জামাকাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি একটি মাদ্রাসায় ১০০ থেকে ১৫০ জন শিশুকে পড়াত বলে জানি। কিন্তু আমার ছেলে জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত তা ভাবতে পারছি না।’’ প্রতি বছরই কাশ্মীর থেকে সাঁকরাইলের মাসিলায় গ্রামের বাড়িতে আসত আমিরুদ্দিন। এ বছরও পাঁচ মাস আগে বকরি ইদের সময় বাড়ি ফিরেছিল সে। এছাড়া মাস ছয়েক আগেই রামবানের বাসিন্দা এক জনকে বিয়ে করে আমির। মঙ্গলবার আমিরুদ্দিনের আরেক ভাই আলমগির খান বললেন, ‘‘সকালে ভাইয়ের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়ার পরই ওকে কাশ্মীরে যতবার ফোন করছি ততবারই ওর ফোন সুইচড অফ আসছে। মনে হচ্ছে ভাই কোনওভাবে ফেঁসে গেছে।’’ এদিকে আমিরুদ্দিনের বাবা মোস্তাফা খান অনেকদিন থেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ। জঙ্গি সন্দেহে ছোট ছেলের গ্রেপ্তারিতে পরিবারের অনেকেই ভেঙে পড়েছেন।