shono
Advertisement

Kolkata Durga Puja 2023: যিনি ট্র্যাফিক পুলিশ, তিনিই মৃৎশিল্পী! পথসুরক্ষা সামলে প্রতিমা গড়েন বাঁশদ্রোণীর সুকুমার

স্বপ্ন দেখেন সনাতন রুদ্র পালের মতো প্রতিমা নির্মাণের।
Posted: 03:35 PM Oct 10, 2023Updated: 06:23 PM Oct 10, 2023

বিশ্বদীপ দে: ছোট থেকেই ছেলেটার মন পড়ে থাকত ঠাকুর গড়ার কারিগরদের কাছে। কীভাবে তাঁরা মাটির সঙ্গে বাঁশ ও খড় মিশিয়ে তৈরি করে ফেলছেন প্রতিমা, তা দেখে মুগ্ধ হত সে। মনে মনে হয়তো নির্মাণও করে ফেলত দুর্গা-সরস্বতী-কালী মূর্তি। ক্রমে তার হাতে উঠে এল মাটি। মূর্তি গড়া শুরু করল সে। আজ সেই ছেলেই ট্র্যাফিক পুলিশের চাকরির অপরিসীম চাপ সামলেও তৈরি করে বহু প্রতিমা। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে প্যাশন পেয়েছে পরিপূর্ণতা। তিনি সুকুমার মণ্ডল। পেশায় ট্র্যাফিক গার্ড। আর প্যাশনে মৃৎশিল্পী। যাঁর তৈরি মূর্তি দেখলে তাক লেগে যায়।

Advertisement

ছোটবেলার কথা জিজ্ঞেস করতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সুকুমার। জানান, ”স্কুল থেকে ফেরার পথে ব্যাগ কাঁধেই ঢুকে পড়তাম প্রতিমা তৈরির জায়গাগুলোয়। দেখতাম কীভাবে তৈরি হচ্ছে মূর্তি। ভালো লাগত। সেই দেখে নিজেও বাড়ি ফিরে মাটি দিয়ে নানা মূর্তি বানাতাম। ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি, সেই সময় পাড়ার ক্লাবের জন্য সরস্বতী প্রতিমা বানালাম। সকলের খুব পছন্দ হল। পরের বছর কালী প্রতিমার ভার পড়ল আমারই উপরে।”

[আরও পড়ুন: Kolkata Durga Puja: দুর্গাপুজোর মুখ ঢেকেছে বিজ্ঞাপনে! উৎসবের অন্য ছবি খিদিরপুরের এই পুজোয় ]

বাঁশদ্রোণীর (Bansdroni) রানিয়া উদয়ন পল্লিতে রাতারাতি নাম হয়ে যায় ছোট্ট সুকুমারের। তার মধ্যেই নিকটবর্তী তিরপুকুরের ‘বারো মাস তেরো পার্বণ’ পরিকল্পনার অংশীদার হিসেবে ডাক পড়ল মূর্তি গড়ার। ব্যাস, এলাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ল নামডাক। আসতে লাগল অর্ডার। তখন সবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। পাড়ার ক্লাব থেকে জানানো হল, এবার পঞ্চদুর্গা তাঁকেই গড়তে হবে।

ভয় পাননি? উত্তর দিতে গিয়ে হেসে ফেলেন সুকুমার, ”টেনশন হচ্ছিল একটু। কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন আমার গুরু। বাঁশদ্রোণীরই রাইফেল ক্লাবের রাজেশ সমাদ্দার। তিনিও ঠাকুর (Durga idol) বানান। তাঁর কাছেই গিয়ে পড়লাম। তিনিই পাশে দাঁড়ালেন। তাছাড়া ভাই সুধাংশু তো আমাকে প্রথম থেকেই সাহায্য করত মূর্তি গড়ার কাজে। সেই ভরসাতেই এগিয়ে যাই। সেই থেকে উনিশ বছর হয়ে গেল, আমিই পাড়ার ক্লাবের দুর্গাপ্রতিমা বানাই। প্রতিবারই পঞ্চদুর্গা। সেই সঙ্গে আশপাশের আরও ক্লাবের অর্ডার। সব মিলিয়ে আট-দশটা কাজ। আরও গোটা দশেক অর্ডার নিতে পারিনি। কাজের চাপ সামলে এর বেশি পারি না।”

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2023: দু’কামরার ফ্ল্যাটে মাথা গুঁজেই হরগৌরীর পুজোর প্রস্তুতি চালাচ্ছেন রূপান্তরকামীরা]

কিন্তু যা পারেন, তা কি কম? সুকুমার জানাচ্ছেন, কেবল দুর্গা নয়, কালী প্রতিমাও গড়েন তিনি। ফাল্গুন-চৈত্র থেকে শুরু করে দেন কাজ। যত চাপ বাড়ে, বাড়ির লোকেরাও পাশে এসে দাঁড়ান। ভাই অবশ্য পেশার তাগিদে আর সময় পান না। তাঁর জায়গায় সুকুমারকে সাহায্য়ের হাত বাড়িয়ে দেন স্ত্রী। পাশাপাশি বৃদ্ধ বাবাও যতটা পারেন করেন। বাদ নেই তাঁর পুত্রও। ক্লাস ফোরের ছোট্ট ছেলেটিও বাবার পাশে বসে সাহায্য করেন। তবে এরপরও চাপ থাকেই। আর এখানে অফিসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলছেন না সুকুমার। জানাচ্ছেন, যখন চাপ বাড়ে অর্থাৎ পুজো একেবারে সামনে সেই সময় মূলত ২টো থেকে ১১টার শিফটই দেওয়া হয় তাঁকে। মাঝে মাঝে অবশ্য মর্নিং কিংবা নাইট ডিউটিও পড়ে। দুপুরের শিফট সেরে বাড়ি এসে সারা রাত কাজ করে যেতে হয়। ”বড়জোর তিন-চার ঘণ্টা ঘুমোই”, জানাচ্ছেন সুকুমার। পুজোর সময় ছুটি থাকে না। টানা ডিউটি। সেই কারণে প্রাপ্য ছুটিগুলি জমিয়ে রেখে পরের বছর পুজোর আগে অবশ্য নিয়ে নেন। এই ভাবেই কাজ শেষ হয়।

পরিবারের অনটন সামলাতে একদিন প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি টিউশনিও করতেন। কিন্তু বুঝতে পারছিলেন এভাবে চলবে না। তাই শুরু করেন একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দেওয়া। শেষপর্যন্ত ২০০৯ সালে পেয়ে যান সরকারি চাকরি। প্রথমে রিজার্ভ ফোর্স, পরে মেয়র অফিসে ডেপুটেশন। ২০১৮ সাল থেকে ট্র্যাফিক গার্ড। কলকাতা ম্যারাথন রেসে এক ঘণ্টায় দশ কিলোমিটার পেরিয়ে যান অনায়াসে। দৌড় কিংবা ফায়ারিং, ড্রিল এসবেও তিনি সিদ্ধহস্ত। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁর সবচেয়ে বড় ভালোবাসা মাটির মূর্তি নির্মাণই। কার গড়া ঠাকুর সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে? সুকুমারের কথায়, ”সনাতন রুদ্র পালের তৈরি প্রতিমা দেখলে চোখ ফেরাতে পারি না। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, তাঁকেই অনুকরণ করতে চাই। স্বপ্ন দেখি একদিন ওঁর মতো কাজ আমিও করতে পারব।” বলতে বলতে আবেগে ভেসে যান শিল্পী। তারপর সংবিৎ ফিরে পেয়ে ফের কাজে মন দেন। চক্ষুদান করতে হবে যে (Kolkata Durga Puja 2023)। ঢাকে কাঠি পড়তে আর তো বেশি দেরি নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement