কলহার মুখোপাধ্যায় ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নতুন করে বিপদ ডেকে এনেছে করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন। বেশ কয়েকটি দেশে নতুন করে জারি লকডাউন। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পিছিয়ে যাচ্ছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা (Kolkata International Bookfair)। রবিবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ড। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সময়ে বইমেলার আয়োজন হতে পারে। পরিবর্তিত দিনক্ষণ জানিয়ে দেবে গিল্ড। আগামী সপ্তাহে এজিএমে (AGM) সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর।
২০২১এ কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। মুজিবের জন্মশতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশকে নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কেউ আসতে পারছেন না কলকাতায়। এছাড়া ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেও চলছে লকডাউন। ফলে তাঁদেরও আসা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় মেলা পিছিয়ে দিতে চেয়ে এজিএমে প্রস্তাব দেবেন আয়োজকরা।
[আরও পড়ুন: ‘পর্যটক বলে লাভ নেই, বাংলাকে তৃণমূলমুক্ত করবই’, কাকলি ঘোষদস্তিদারকে পালটা অনুপমের]
এদিন গিল্ডের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ”আমরা, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড-এর সদস্যরা অত্যন্ত আশাবাদী এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমাদের দেশের গর্ব ৪৫ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ২০২১ আমরা আয়োজন করে উঠতে সক্ষম হব। কিন্তু বর্তমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে আমরা কিছুসময়ের জন্য বইমেলা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করছি, যে মুহূর্তে পরিস্থিতি অনুকূল হবে, আমরা ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্মতি নিয়ে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ২০২১-এর পরিবর্তিত তারিখ ঘোষণা করব।”
আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যে কোনও বইমেলা ১০ দিনের হয়। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা জানুয়ারির শেষ বুধবার থেকে শুরু হয়ে টানা দশদিন ধরে চলত। তবে সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে মেলা চলছে ১২ দিন। এ বছর সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তা হওয়ার কথা ছিল ২৭ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ হওয়ায় সেখানকার প্রায় ৫০টি স্টল থাকার কথা বইমেলা প্রাঙ্গণে। কিন্তু তাঁরা কেউই আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। যেখানে থিম কান্ট্রিই থাকতে পারবে না, সেখানে মেলার আয়োজনের অর্থ নেই। এছাড়া মেলার ভিড় কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তাও আলোচনাসাপেক্ষ। তাই গিল্ডের এক্সিকিউটিভ কমিটি ঠিক করেছে, মেলার সময় পিছিয়ে দেওয়া হোক। বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে জানিয়েছেন, ”আগামী সপ্তাহে AGM’এর কাছে আমরা এই প্রস্তাব রাখব। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া জেলায় জেলায় যে বইমেলা হয়, সেসব কীভাবে হবে, তা নিয়েও এজিএমে আলোচনা হবে।”
[আরও পড়ুন: কাটা হাতে পাঁচ মেডিক্যালে ঘুরপাক কিশোরের, ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা]
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে দুই আন্তর্জাতিক বইমেলা – ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং লন্ডন মেলা আয়োজিত হয়েছিল নির্দিষ্টে সময়ে, তবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যমে। আলোচনাসভা থেকে পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠান – সবই হয় অনলাইনে। কিন্তু কলকাতা বইমেলা নিয়ে যে চিরন্তন আবেগ, তাকে মাথায় রেখে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই মেলার আয়োজন সম্ভব নয়। তাই তা পিছিয়ে দেওয়ার ভাবনা। এখন নতুন করে কবে বসে কলকাতা বইমেলা, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন বইপ্রেমীরা।