অর্ণব আইচ: নিজের ক্ষমতা জাহির করে ডাক্তারিতে ভরতি করানোর নাম করে লাখ লাখ টাকার প্রতারণা (Fraud)। এক ছাত্রীর অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে অসমের বিজেপি (BJP) নেতাকে গ্রেপ্তার করল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। রবিবার রাতে ভাস্কর চক্রবর্তী নামে ওই নেতাকে গুয়াহাটি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন দক্ষিণ কলকাতার গল্ফগ্রিন থানার আধিকারিকরা। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, একটি মামলায় ওই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ৫৫ লক্ষ টাকা তছরূপের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। সবমিলিয়ে ডাক্তারি কোর্সে ভরতি করানোর নাম করে তাঁর আর্থিক কেলেঙ্কারির পরিমাণ কোটি টাকার উপর, এমনই মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা।
পুলিশের অভিযোগ, ধৃত ভাস্কর ডাক্তারি কলেজে ভরতির নামে প্রতারণা চক্রের মাথা। এই চক্রে কলকাতা ও অসমের (Assam) আরও বেশ কয়েকজন রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত বিজেপি নেতা ভাস্কর চক্রবর্তী অসমের বাসিন্দা হলেও কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে অফিস খুলেছিলেন দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর এলাকায়। তিনি অসমের কিষাণ মোর্চার নেতা বলে পুলিশের কাছে খবর। গত বছর এক ছাত্রীর অভিভাবকের সঙ্গে ভাস্করের পরিচয় হয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে। ওই অভিভাবক তাঁর মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানোর জন্য যে কোনও একটি মেডিক্যাল কলেজে ভরতি করানোর চেষ্টা করছিলেন। যাদবপুরে গিয়ে তিনি ভাস্করের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভাস্কর তাঁকে বলেন, যেহেতু অসমে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে, তিনি নিজে অসমের বিজেপি নেতা, তাই ওই রাজ্যে তাঁর অসীম ক্ষমতা। তিনি অসমের ভাল মেডিক্যাল কলেজে কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে ভরতি করিয়ে দিতে পারেন। এ ছাড়াও এই রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও তাঁরা সহজেই ভরতি করাতে পারেন ছাত্রছাত্রীদের।
[আরও পড়ুন: সরকারি স্কুলে নীল-সাদা পোশাকে থাকবে ‘বিশ্ব বাংলা’ লোগো, নির্দেশিকা সমগ্র শিক্ষা মিশনের]
ভাস্করের কথায়, বিশ্বাস করেন ওই ব্যক্তি। তিনি কয়েক দফায় ভাস্করকে ৫৫ লক্ষ টাকা দেন। কিন্তু এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ভাস্কর ও তাঁর লোকেরা। শেষ পর্যন্ত কোনও কলেজেই এমবিবিএস (MBBS) কোর্সে ভরতি হতে পারেননি ওই ছাত্রী। অনেক ঘোরাঘুরির পরও ভাস্করের কাছ থেকে তিনি টাকা ফেরত পাননি। যার জেরে গত বছর প্রতারণার অভিযোগে তিনি ভাস্কর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যাদবপুর থানার পুলিশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও তাঁর সন্ধান পাননি।
এরপর যাদবপুর থানা ভেঙে গল্ফগ্রিন (Golf Green) থানা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই মামলাটি গল্ফগ্রিন থানায় আসে। পুলিশ ফের মূল অভিযুক্ত ভাস্করের সন্ধান শুরু করে। সম্প্রতি পুলিশ জানতে পারে যে, অসমের গুয়াহাটির খলিলপাড়া এলাকায় রয়েছেন। সেইমতো গল্ফগ্রিন থানার পুলিশ গুয়াহাটি শহরের ভগদত্তপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে। অসম পুলিশের সঙ্গে যৌথ তল্লাশিতে খলিলপাড়ার কল্যাণীনগরের বাড়ি থেকে আটক হয় ভাস্কর চক্রবর্তী। আটকের পর ভগদত্তপুর থানায় নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন তিনি। গুয়াহাটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে তিনদিন ভরতি থাকেন। যদিও কলকাতা পুলিশও হাল ছাড়েনি। বেসরকারি হাসপাতালটি থেকে নথিপত্র জোগাড় করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তিনদিন পর ‘সুস্থ’ হন ভাস্কর। তাঁকে গ্রেপ্তার করে গুয়াহাটির আদালতে পেশ করে ট্রানজিট রিমান্ড নেওয়া হয়। সোমবার ওই বিজেপি নেতাকে আলিপুর আদালতে তোলা হতে পারে।
[আরও পড়ুন: কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ, ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনে ক্লোজ করা হল ৫ পুলিশকর্মীকে]
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই বিজেপি নেতা অসমে অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তাঁর একাধিক গাড়ি রয়েছে। সেই গাড়িগুলির সঙ্গে ভাস্কর চক্রবর্তী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও পোস্ট করেছেন। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও তাঁর বহু ছবি রয়েছে। পুলিশের কাছে আসা অভিযোগ, ওই ছবিগুলি দেখিয়ে নিজের ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করতেন অসমের ওই বিজেপি নেতা। তাঁকে জেরা করে এমবিবিএস কোর্সে ভরতির নামে টাকা হাতানোর চক্রের অন্য সদস্যদের সন্ধান চালানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।