shono
Advertisement

মহিলাদের লাগাতার প্রতারণা, কলকাতা পুলিশের ‘হানি ট্র্যাপে’ধরা পড়ল অভিযুক্ত

মহিলা পুলিশ অফিসারের পাতা ‘হানি ট্র্যাপে’ পা দিয়ে অন্ধ্র থেকে কলকাতায় আসে অভিযুক্ত।
Posted: 09:45 PM Sep 14, 2021Updated: 09:45 PM Sep 14, 2021

অর্ণব আইচ: এ যেন আরেক চার্লস শোভরাজ।
খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল এই লোকটিও। “ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান।” ‘পারলে ধর।’ কারণ লোকটি নিশ্চিত যে, তাকে ধরা সহজ নয়। কখনও সে অঙ্গদ মেহতা, কখনও সে সার্থক রাও বারবাস, আবার কখনও হর্ষ ওবেরয়।

Advertisement

কিন্তু অসাধ্য সাধন করলেন গড়িয়াহাট থানার আধিকারিকরা। বুনো ওল অঙ্গদ বা সার্থকের জন্য বাঘা তেতুঁলের মতোই গড়িয়াহাট থানার (Kolkata Police) মহিলা পুলিশ অফিসার দিশা মুখোপাধ্যায় হয়ে উঠলেন পায়েল শর্মা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাতা হল ‘হানি ট্র্যাপ’। ভালবাসার ফাঁদে পা না দিয়ে পারেনি সার্থক। গঙ্গার ধারে মিলেনিয়াম পার্কে হাসিমুখে নতুন বান্ধবী ‘পায়েল’এর দিকে আসতেই সাদা পোশাকে থাকা গড়িয়াহাট থানার পুলিশ ৪২ বছর বয়সের ওই ব্যক্তিকে।

[আরও পড়ুন: কবি সুভাষ অবধি যাবে না সব মেট্রো, বুধবার থেকেই কার্যকর নয়া নিয়ম]

মহিলাদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতত চার্লস শোভরাজ। তারই ‘উত্তরসুরী’ সার্থক রাওয়েরও কোনও বিশেষ ধরাবাঁধা কাজ পছন্দ ছিল না। দশম শ্রেণির ড্রপ আউট এই ব্যক্তিটির পছন্দ ছিল বিলাসবহুল জীবনযাপন। আর তার জন্য গয়না আর টাকা হাতানো হয়ে গিয়েছিল তার পেশা। তার বিশেষ কোনও ঠিকানা নেই। তাই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে বেছে নিত কোনও শহরের পাঁচতারা হোটেলকে। নিজেকে কেন্দ্রীয় সরকারের পদস্থ অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে হোটেলে ফোন করত। তার এক আত্মীয়র জন্য হোটেলের একটি বিলাসবহুল ঘর বুক করতে বলত। এর পর নিজেই আত্মীয় সেজে যেত। বলত, চেক আউটের সময় টাকা মিটিয়ে দেবে। সরকারি কর্তার ‘আত্মীয়’কে ঘাঁটানোর সাহস পেত না হোটেল কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে থাকত ভুয়া পরিচয়পত্র। একটি স্যুট বুক করে এন্তার খাবার ও পানীয় নিত। সাধারণত দিন তিনেকের জন্য হোটেল বুক করত। দিন দু’য়েক পর হঠাৎই ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যেত সে। দিল্লি থেকে শুরু করে আহমেদাবাদ, হায়দরাবাদ, লখনউয়ের মতো বহু জায়গায় সে পেতে রেখেছিল প্রতারণার ফাঁদ। তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ দায়ের হয়। প্রথমে ধরা পড়ে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারে। বছর তিনেক আগে ২০১৮ সালে এভাবে হায়দরাবাদে একটি হোটেলে থেকে পালানোর সময়ই ধরা পড়ে যায় ব্যক্তিটি। তার তিন বছর সাজা হয়। হায়দরাবাদের চঞ্চলগুড়া জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কলকাতায় আসে।

[আরও পড়ুন: গণেশ বিসর্জন নিয়ে গোলমাল, চড়ের প্রতিশোধে গুলি, গোর্কি সদনের সামনে শুটআউটে গ্রেপ্তার ১]

গত আগস্টের মাঝামাঝি গড়িয়াহাটের হিন্দুস্থান পার্কের এক সোনার দোকানের মালিককে ফোন করে নিজেকে অঙ্গদ মেহতা বলে পরিচয় দেয়। ১ লক্ষ ৯০ হাজার ১৮৪ টাকার সোনার গয়না একটি গেস্ট হাউসে পাঠাতে বলে। দুই কর্মচারী সেই গয়না ওই গেস্ট হাউসের সামনে নিয়ে আসে। স্ত্রীকে গয়না দেখিয়ে আসার নাম করে অপেক্ষা করতে বলে গেস্ট হাউসের অন্য দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় সে। ওই গয়নার দোকান কর্তৃপক্ষ গত ১৯ আগস্ট পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে।

তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে যে, অন্ধ্রপ্রদেশে পালিয়ে গিয়েছে ওই ব্যক্তি। তাকে ধরা সহজ হবে না। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় পায়েল শর্মা নাম নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করেন মহিলা পুলিশ অফিসার দিশা মুখোপাধ্যায়। পাতা হয় ‘হানি ট্র্যাপ’। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলতে থাকে চ্যাট। তাকে কলকাতায় এসে দেখা করতে বলেন ‘পায়েল’। মিলেনিয়াম পার্কে সে সোশ্যাল মিডিয়ার বান্ধবী পায়েলের সঙ্গে দেখা এসেই হাতেনাতে ধরা পড়ে সে। সল্টলেকের পূর্ব বিধাননগর থানা এলাকার সেক্টর ২ এর একটি হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে অন্তত তিনটি নামে পরিচয়পত্র উদ্ধার হয়। কিন্তু ছবিগুলি এক। তখনই প্রমাণ মেলে যে, নাম আলাদা হলেও ব্যক্তিটি এক। ডেপুটি জেলারের সই করা একটি জেলের কার্ড পাওয়া যায়। তা দেখেই পুলিশের ধারণা, তার আসল নাম সার্থক রাও বাবরাস। ধৃতর কাছ থেকে সোনার গয়না উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement