অর্ণব আইচ: পোস্তায় প্রেমিকাকে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা করে প্রেমিকের মরণঝঁাপের ঘটনায় নতুন করে দানা বাঁধছে রহস্য। প্রেমিকা শিখা সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও মিলল না বহু উত্তর। শেষ পর্যন্ত সেই প্রেমিকার বিরুদ্ধেই পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করল মৃত যুবকের পরিবার। শনিবার মৃত রাজেন্দ্র শর্মার বাব রাজেন্দ্রর প্রেমিকা যুবতী শিখা সিংয়ের বিরুদ্ধে পোস্তা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার তারই ভিত্তিতে নতুন করে খুনের মামলা দায়ের করে শুরু হয়েছে তদন্ত।
পুলিশের মতে, কয়েকটি বিষয় নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। আদৌ ওই যুবক কি নিজে তিনতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন, না কি প্রেমিকার সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তির সময় তিনি পড়ে যান, অথবা তাঁকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়, তা নিয়ে এখনও রয়েছে রহস্য। কারণ, প্রাথমিকভাবে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা পোস্তার শিবঠাকুর লেনের বাড়িটিতে গিয়ে তদন্ত করেও পুলিশকে কোনও মতামত জানাননি। আবার ময়নাতদন্তের পরও চিকিৎসকরা উপর থেকে পড়ে যুবকের মৃতু্য হয়েছে বলে জানালেও মৃতু্যর কারণ সম্পর্কে কিছু জানাননি। এ ছাড়াও মৃত যুবকের পেটে একটি ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতটি হয় যুবকের মৃতু্য, তথা তিনি পড়ে যাওয়ার আগে। কিন্তু সেটি তিনি নিজে করেছেন, না কি তঁাকে কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে, সেই ব্যাপারেও চিকিৎসকরা পুলিশকে প্রাথমিকভাবে কিছু জানাননি। তাই এই প্রেমিকাকে খুনের চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে প্রেমিক নিজেও খুন হয়েছেন কি না, সেই রহস্য এখনও কাটেনি।
গত ১৬ ডিসেম্বর পোস্তার শিবঠাকুর লেনে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় রাজেন্দ্র শর্মার। তাঁর প্রেমিকা শিখা সিংয়ের শরীরে মেলে কোপের চিহ্ন। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, বিধবা শিখার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে রাজেন্দ্র ছুরি দিয়ে শিখাকে আঘাত করে খুনের চেষ্টা করেন। এর পর তিনি মরণঝাঁপ দেন। তাঁর দেহের কাছ থেকে একটি রক্তাক্ত ছুরি উদ্ধার হয়। সেটিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করছেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শিখা সিং পুলিশকে জানিয়েছেন যে, ওই ছুরি হাতে নিয়েই নিচে লাফ দেন রাজেন্দ্র। তার আগে রাজেন্দ্র তাঁর শরীরে একের পর এক আঘাত করে কোপান। রাজেন্দ্রকে ঝাঁপ দিয়ে দেখে তিনি উপর থেকে দৌড়ে নেমে আসেন। তিনতলার বারান্দায় প্রচুর রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই রক্তের নমুনাও পরীক্ষা হচ্ছে।
শনিবার রাজেন্দ্রর বাবা পোস্তা থানায় শিখার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার পর থেকে ঘটনার মোড় ঘোরে। এই খুনের তদন্ত শুরু করার পর পুলিশের প্রশ্ন, সত্যিই কি রাজেন্দ্র ছুরি হাতে লাফ দেন, না কি ছুরিটি ছিল শিখার হাতেই? আর আদৌ কি রাজেন্দ্র লাফ দিয়েছিলেন, না কি ধ্বস্তাধস্তি চলাকালীন দু’জনই বারান্দার কিনারায় চলে আসেন। তার পর কোনওভাবে শিখা রাজেন্দ্রকে ধাক্কা দেন, আর রাজেন্দ্র কি উপর থেকে পড়ে যান? আর রাজেন্দ্র কি ছুরি দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করেন, না কি শিখা রাজেন্দ্রর পেটে ছুরি চালিয়ে দিয়েছিলেন? এতগুলি প্রশ্নের উত্তর পেটে শিখা সুস্থ হওয়ার পর ফের তাঁকে পুলিশ জেরা করবে। এ ছাড়াও ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিকের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেখেও রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
