কৃষ্ণকুমার দাস: মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি থেকে সরে গিয়ে রাজ্য সরকারের কুৎসাকারী ও চক্রান্তকারীদের মুখপাত্র হবেন না। আর জি কর কাণ্ডের অভয়ার বাবা-মায়ের কাছে শনিবার এমনই আবেদন রাখল তৃণমূল কংগ্রেস। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার খবর পাওয়ার পর মুহূর্ত থেকেই অভিযুক্তদের ফাঁসি চেয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে শুক্রবার রাতে মন্তব্য করেন নির্যাতিতার বাবা। যদিও এই অভয়ার বাবা-মা-ই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী সোদপুরের নাটাগড়ে তাঁদের বাড়িতে আসার পর একাধিকবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এদিন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা প্রশ্ন তুলে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের উদ্দেশে বলেন, “যে মুখ্যমন্ত্রী ঘটনা জানার পর থেকেই ফাঁসি চাইছেন, রাজপথে নেমে দাবি করছেন তাঁর দিকে এতদিন পর কেন, কাদের পরামর্শে আঙুল তুলছেন? যে মুখ্যমন্ত্রী আর জি কর-কাণ্ডের জেরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নারী ও শিশুর উপর অত্যাচার বন্ধে বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাস করিয়েছেন, চার-চারটে ঘটনায় ফাঁসি করিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ চক্রান্তকারীদের পরামর্শ ছাড়া হতে পারে না।” সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার অভয়া-কাণ্ডে সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে যে আবেদন করেছে, সেই বিষয়কে সমর্থন জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা।
সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্যকে আইনজীবী করে পুলিশি তদন্তের পরিবর্তে আর জি কর-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে নিয়েছিলেন এই অভয়ার বাবা-মা-ই। এখন আবার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দোষী সাব্যস্ত করে নিজেরাই বলছেন, সিবিআই চাই না। মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের বিষয়টি নিয়ে এদিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সরাসরি অভয়ার বাবা-মায়ের কাছে আবেদন করে বলেছেন, “একের পর এক ওঁদের বয়ান বদল দেখে মনে হচ্ছে, বাম-অতি বাম চক্রান্তকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন তাঁরা। কখনও বলছেন সিবিআই চাই, আবার চক্রান্তকারীদের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা পূর্ণ না হলেই বলছেন, সিবিআই চাই না। আপনারাই কোর্টে গিয়ে সিবিআই চেয়েছিলেন, সেই সিবিআই কোর্টে যুক্ত সাজিয়ে মেয়ের মৃত্যুর মামলায় ফাঁসির রায় করিয়ে আনতে পারেনি। আর এর জন্য যদি কাউকে দায়ী করতে হয় তবে তো কেন্দ্রীয় এজেন্সির দিকেই আঙুল উঠছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সব ছেড়ে দিয়ে কুৎসাকারী-চক্রান্তকারীদের হাতের পুতুল হয়ে আপনারা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে বসলেন। দয়া করে বাংলা-বিরোধী কুৎসাকরীদের হাতের পুতুল বা মুখপাত্র হবেন না।”
অভয়া-কাণ্ডে নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পর একের পর এক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নানা বয়ান দিয়ে চলেছেন অভয়ার বাবা-মা। বিষয়টি উল্লেখ করে এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “আপনাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানিয়ে, সহমর্মিতা জানিয়ে বলছি এবার আপনাদের এই নানা সময়ের বয়ান বদলের বিষয়গুলি তদন্তের আওতায় আনা উচিৎ। কারণ যারাই এতদিন অভয়ার মৃত্যু সামনে রেখে নানা বিপ্লবী বক্তব্য রেখেছেন, সেটিং করেছেন তাদের সঙ্গে আপনাদের কীভাবে যোগাযোগ, কোন কোন পদ্ধতিতে যোগাযোগ, সেগুলি তদন্তের আওতায় আসা উচিত।” এর পরই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “এতদিন তো শুনে এসেছি আন্দোলন নাকি স্বতঃস্ফূর্ত? তাহলে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাকে দিয়ে কী কী কাজ করানো হল? অভয়ার নাম করে যে কোটি কোটি তোলা হল সেগুলি কোন কোন খাতে, কোথায় কাদের হাত দিয়ে খরচ হল? রাজ্যের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের সঙ্গে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের কতটা সম্পর্ক এবং যোগাযোগ আছে, সে বিষয়টিও কি তদন্তের আওতায় আনা উচিত?”