shono
Advertisement

কন্ডোম বিতর্ক থেকে বামপন্থা, মমতার সমালোচক থেকে ফ্যান! একান্ত সাক্ষাৎকারে যুবনেত্রী সায়নী

যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সায়নী ঘোষ।
Posted: 08:34 PM Mar 13, 2024Updated: 10:21 PM Mar 13, 2024

লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের সৈনিক সায়নী ঘোষ। শিবলিঙ্গের মাথায় কন্ডোম লাগানো ছবি দিয়ে তৃণমূল যুবনেত্রী জড়িয়েছিলেন বিতর্কে। ইডি তলবের মুখোমুখিও হতে হয়েছিল তাঁকে। ভোটের আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি সায়নী। শুনলেন রমেন দাস।

Advertisement

যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভাঙড় নিয়ে কী বলবেন? 

শুধু আরাবুল, নওশাদের ভোট নয় এটা। ওঁদের মানুষ সামলাবেন। আমি না। এটা লোকসভা ভোট (Lok Sabha Election)। এখানে ভাঙড়, সোনারপুরের একেবারে আঞ্চলিক সমস্যা গুরুত্বের নয়। যাদবপুরের মানুষ প্রগতিশীল, রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন। এটা মোদি বনাম মমতার লড়াই। তাঁরা বুঝবেন বাকিটা। আইএসএফ (ISF) বিজেপির সুবিধা করছে। হাত মিলিয়ে কাজ করছে।

নওশাদ, আরাবুলদের নিয়ে কী বলবেন?

নওশাদ প্রার্থী হবেন? জিতবেন? কী কাজ করেছেন বিধায়ক হিসাবে সেটা বলুন না! যাদবপুরের মানুষ সুযোগ দিলে দেখিয়ে দেব কাজ। নওশাদ ইয়ং, ডাইনামিক। কিন্তু ওঁকে বুঝতে হবে বিজেপি কী করছে। CAA করে দিচ্ছে। কাল NRC করে দেবে। নওশাদ (Nawsad Siddique) কী ভাঙড়ের মানুষকে বাঁচাবেন? শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রাজ্যের মানুষকে রক্ষা করতে পারেন।

আপনার প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশে কী বলবেন? 

অনির্বাণদা আমার চেয়ে অনেক শিক্ষিত। আমি যাদবপুরে (Jadavpur University)) পড়েছি। আমার তখন রাজনীতিতে আগ্রহ ছিল না। আরও পড়তে চাই। কিন্তু আমি মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকে কাজ করা শুরু করেছি নানা কারণে। মনে হয়, টেক্সট বুক নয়, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে শিক্ষিত হওয়া বেশি প্রয়োজন। আমি মমতাদির স্টাইল দেখে শিখেছি। আমার লড়াই ব্যক্তি অনির্বাণের বিরুদ্ধে নয়, বিজেপির বিরুদ্ধে।

সায়নীর অহংকার বেশি, দলেই রয়েছে অভিযোগ। কী বলবেন?

আমাকে মানুষ ঘিরে থাকে। আমাকে ছোঁয়া কঠিন! কারণ, আমাকে ছুঁতে মানুষকে পেরিয়ে আসতে হয়। আমি মানুষকে ভালোবাসি। তাই তাঁরাও আমায় ভালোবাসেন।

কন্ডোম বিতর্ক নিয়ে কী বলবেন?

২০১৫ সালের টুইট। বিজেপির এমন অবস্থা ৯ বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে কিছু নতুন বের করতে পারে না। মোদি ক্ষমতায় আসার পর যা করেছেন বইয়ে লেখা হয়ে গিয়েছে! সায়নীর টুইটের জন্য কত জনের মৃত্যু হয়েছে? কটা দাঙ্গা বেঁধেছে? দেশের প্রধানমন্ত্রীর (Narendra Modi) জন্য বেঁধেছে! সায়নী এমন কী বলেছে, যে মানুষ মরেছে?

একসময় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ইডির স্ক্যানারে চলে আসে, কী বলবেন?

বিজেপি আমার পিছনে ইডি (ED) লাগিয়েছে। কী পেয়েছে? আমাকে আবার যদি ডাকে যাব। বারবার যাব। কারণ, আমরা পিঠ বাঁচিয়ে পালাই না। আমি যাব দলের জন্য। আর ওই হাজার হাজার ছেলেমেয়ের জন্য, যাঁরা বিচারের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের যেন মনে না হয়, সায়নীদি পালিয়ে যাচ্ছে। আমি তাঁদের জন্য যাব।

[আরও পড়ুন: ভাই বাবুন ‘ত্যাজ্য’, বিরোধীদের ‘পরিবারতন্ত্র’ খোঁচার জবাব দিলেন মমতা]

‘খেলা হবে’ বলে জেলে। অ্যাসিড হামলার হুমকিও পেয়েছেন। কী বলবেন?

বিজেপির গুন্ডারা এসে বলেছিল সায়নীকে বের করো মুখে অ্যাসিড মারব। ওকে বের করো। ত্রিপুরায় বিজেপি গুন্ডামি করেছে। ‘খেলা হবে’ বলে জেল খেটেছি। আমাকে কেস দিয়েছে। সায়নী বাংলার মেয়ে, ভয় পায় না। আমরা অসুরকে ভয় পাই না। এটা মা দুর্গার মাটি। মা কালীর মাটি। আমি এমন কিছু করি না, যে ভয় পাব!

“ভোটের ১৫ দিন আগেই ভোট হয়ে যাবে। কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী-টাহিনি কিছু নয়, আমরা মমতা ব্যানার্জি বাহিনী তাদের সামনে রুখে দাঁড়াব। ” আপনার সামনেই বারুইপুর পূর্বের বিধায়কের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে কী বলবেন? 

উনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভয় পেলে হবে না। কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বলতে হয় অনেক কথা। মানুষের মন তৈরির কথা বলেছেন উনি। ১৫ দিন আগে সেটা করতে হবে। এটা বলেছেন। টুইস্ট করার জন্য অনেকে অনেক কিছু বলেন। যেটা গ্রাউন্ড লেভেলে কাজে দেয় না।

অভিনয় এবং রাজনৈতিক জীবনে আপনার সহকর্মী লাভলি, সায়ন্তিকাকে নিয়ে কী বলবেন?

লাভলি বিধায়ক। কাজ করছেন। আমার জন্য ভোট চাইছেন। এই ভোট সিদ্ধান্ত নেবে, আগামী দিনে কাউন্সিলর, বিধায়ক কোথায় থাকছেন!

সায়ন্তিকা (Sayantika Banerjee) প্রসঙ্গে বলব, এক-একজন মানুষের এক-একরকম আশা। আমি বিধানসভায় টিকিট চাইনি। যুব সভানেত্রী হতে চাই, এটাও মমতাদি, অভিষেকদাকে (Abhishek Banerjee) বলিনি। দল দেখে কে কী কাজ করছেন। লোকসভায় যখন উপনির্বাচন হয় আসানসোলে। শত্রুঘ্ন সিনহা লড়াই করলেন। খবর হয়েছিল, সায়নী দাঁড়াবেন। আমি প্রচুর প্রচার করেছিলাম। ৩০ হাজার ভোট বাড়িয়েছিলাম। আমি আমার কাজে বিশ্বাসী। তখন ভাবিনি। আমি কাজ করে যাই। বাকিটা মানুষের হাতে।

একসময় বামপন্থাকে সমর্থন। মমতার বিরুদ্ধে নন্দনে দাঁড়িয়ে বলেছেন… 

আমাকে কেউ দেখেছেন আমি বামেদের মিছিলে হেঁটেছি? আমি যাদবপুরে পড়তাম, কেউ দেখেছেন? আমি এসএফআই (SFI) করেছি? আমি জানি না, বামপন্থী মনোভাব মানে লড়াকু বলছেন কিনা? সেটা মমতার কাছ থেকে শিখেছি। মমতাদির ব্যাপারে বলেছি! আমার যখন যা মনে হয় বলেছি। কেন বলব না? আমি মমতাদিকে বলেছি, দিদি আপনার সম্পর্কে আমি খারাপ খারাপ কথা বলেছি। উনি আমাকে বলেছেন, বেশ করেছ বলেছ। যেটা নিয়ে প্রতিবাদ করার করব!

সন্দেশখালির অশান্তি প্রসঙ্গে কী বলবেন?

সন্দেশখালি (Sandeshkhali) দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কিন্তু এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাও। সব জায়গায় তো হচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের সুরক্ষায় এগিয়ে। একটা ঘটনা ঘটেছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু কীভাবে ঘটনার পর ব্যবস্থা নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আজকে সিবিআই, ইডি কেন গ্রেপ্তার করেনি? রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা করতে হয়েছে কেন? যা ঘটেছে এটা যেন আর না ঘটে চাইব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিচার দিয়েছেন। সেটা যেন উনি করতে পারেন। আমি ওঁর দলের প্রতিনিধি হিসাবে সেটাই চাইব।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে আদালতের নির্দেশ এবং বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়ে কী বলবেন?

কোন সরকারের ভালো লাগে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভালো লাগে বলুন? উনি এত ভালো কাজ করছেন। কেন কয়েকজন মানুষের জন্য তাঁদের ভুগতে হবে। আমি যুবনেত্রী দলের। আমারও ভালো লাগে না। যুবকরা চাকরি পাচ্ছেন না! কিন্তু কাকে ভরসা করবেন? যিনি রায় দিয়েছেন তিনিই (Abhijit Ganguly) আজ বিজেপিতে। ঠক বাছতে গা উজাড়! ওঁদের স্বপ্ন নিয়ে উনিও তো ছিনিমিনি খেলেছেন। আমার বিশ্বাস আছে, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে না! মমতাদি করবেন, বিচার পাইয়ে দেবেনই।

মানস ভূঁইয়ার ‘লাগাও সায়নী’ মন্তব্যে বিতর্কের ঝড়, কী বলবেন? 

মানুষের কোনও কাজ নেই! মানস ভূঁইয়া কেন বলেছেন? ওঁদের ওখানে ওটাই ভাষা। সেটাই লোকে ধরেছে। আমি কী করেছি, কী কাজ করেছি। সেটা দেখেনি।

বিধানসভা ভোটে আসানসোলের প্রার্থী ছিলেন। সে বার জিততে পারেননি। লোকসভার টিকিট পাওয়ার পর কী মনে হচ্ছে? 

আমি খুশি হয়েছিলাম। সায়নী সাদা শাড়ি পরে মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সেটা ভালো লাগে নাকি স্কার্ট পরে সানগ্লাস মাথায় লাগিয়ে ঘুরছে সেটা শুনতে ভালো লাগে? সে বিচার আমি মানুষের উপর ছাড়ব।

সায়নীর বিয়ে কবে?

মায়ের ইচ্ছা ছিল বিয়ে করি। দুমাস আগে মা চলে গিয়েছেন। মা মানুষের সেবা করতে বলেছিলেন। মা আইসিডিএসের সুপারভাইজার ছিলেন। মানুষের সঙ্গে কাজ করতেন। মমতাদিকে ছাড়বে না কোনওদিন বলেছিলেন। সবাই যদি সংসার সামলায়, তাহলে মানুষকে কে সামলাবে? রাজ্য কে সামলাবে? আমি খুব ফোকাসড ওয়েতে কাজ করতে চাই। বাবা রয়েছেন। আমার দুই পোষ্য ছানা রয়েছে। তিন বছর আমার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই।

[আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের প্রার্থী হতেই ‘দিদি নম্বর ১’ ছাড়ছেন? মুখ খুললেন রচনা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement