স্টাফ রিপোর্টার: ‘আমরা কিনলাম অডি গাড়ি। কিন্তু চড়তে পারলাম কই? ওই গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াল পল্লবীর পরিবারের লোকেরাই।’ আলিপুর আদালতে (Alipore Court) আইনজীবীর সেরেস্তায় বসে চোখে জল সাগ্নিকের মা সন্ধ্যা চক্রবর্তীর। নির্বাক বাবা সুভাষ চক্রবর্তীও। বান্ধবী-অভিনেত্রী পল্লবী দে’কে (Pallavi Dey) খুন ও প্রতারণার অভিযোগে এই দম্পতির ছেলে সাগ্নিক চক্রবর্তীকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও বিচারকের এই নির্দেশের পর কিছুটা নিশ্চিত টেলিভিশনের অভিনেত্রী পল্লবী দে’র বাবা নীলু দে। বুধবার আলিপুর আদালতে বসে তিনি জানান, বিচারব্যবস্থার উপর তাঁর ভরসা আছে, সুবিচার তিনি পাবেনই। তাঁর বিশ্বাস, মেয়ে পল্লবীকে খুনই করা হয়েছে। আর তার পিছনে রয়েছে সাগ্নিক ও তাঁর বান্ধবী ঐন্দ্রিলা। তাঁর মেয়ের গালেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে তাঁর দাবি।
সাগ্নিকের মা সন্ধ্যা চক্রবর্তী জানান, তাঁর ছেলে বাবা ও দাদুর কাছে একটি অডি (Audi) গাড়ির জন্য বায়না করেছিল। তাই বাবা সুভাষবাবু ও দাদু মিলে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িটি ৯ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে ছেলেকে দেন। মাত্র কয়েকবার গাড়িটি চড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁরা। সন্ধ্যার অভিযোগ, এরপরই অডি গাড়িটি হস্তগত করেন পল্লবীর পরিবারের লোকেরা। গাড়িটি তাঁদের কাছেই থাকে। তাঁরাই যাতায়াত করেন কালো রঙের অডি গাড়িটি করে। এমনকী, গড়ফা থানায় অভিযোগ দায়ের করার সময় তাঁরা ওই গাড়ি করেই এসেছিলেন। অথচ ওই গাড়ির ইএমআইয়ের (EMI)টাকা তাঁরা এখনও গুনছেন।
[আরও পড়ুন: ‘করোনা টিকার মতো মজুত করতে দেব না খাদ্যশস্য’, ইউরোপকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ভারতের]
পল্লবীর পরিবারের দাবি, নিউ টাউনের একটি নামী আবাসনে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তাঁদেরই মেয়ে। সেখানে সাগ্নিকের বাবা সুভাষ ও মা সন্ধ্যা চক্রবর্তীর মা জানান, ফ্ল্যাটের জন্য এখনও পর্যন্ত ৮০ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪৩ লক্ষ টাকা তাঁরাই দিয়েছেন। বাকি টাকা ইএমআইয়ে মেটাচ্ছেন তাঁরাই। ফ্ল্যাট ও গাড়ির জন্য যত টাকা তাঁরা দিয়েছেন, তার যাবতীয় তথ্য ও প্রমাণ গড়ফা থানায় জমা দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, যেহেতু তাঁরা নিজেদের দিক থেকে পরিষ্কার, তাই চান বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হোক। তাঁদের ছেলে উচ্চমাধ্যমিকের পর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে শুরু করেন। কিন্তু শেষ করতে পারেননি। সাগ্নিক একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। এখন নিজের অফিস খুলে কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজ করেন। সুভাষাবু জানান, তিনি ডেভেলপারের ঠিকাদারের ব্যবসা করেন। বিদেশি পাখি কেনাবেচারও ব্যবস্থা রয়েছে।
[আরও পড়ুন: জেরা শেষের আগেই অনুব্রতকে ছাড়ল সিবিআই, SSKM গেলেন অসুস্থ তৃণমূল নেতা]
সন্ধ্যাদেবী জানান, মঙ্গলবার তাঁর ছেলের সঙ্গে থানায় দেখা করার সুযোগ পান তিনি। তখনই তিনি ছেলেকে ঐন্দ্রিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। কারণ, তিনি ঐন্দ্রিলাকে চিনতেন না। পল্লবীর মৃত্যুর জেরে মামলা শুরু হওয়ার পরই ঐন্দ্রিলার নাম জানতে পারেন। ঐন্দ্রিলা যে ছেলের এক বান্ধবী, তখন তা জানতে পারেন সন্ধ্যা। যদিও ওই গৃহবধূর দাবি, তাঁর ছেলে যে সুকন্যা নামে এক বান্ধবীকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেই খবরই তাঁরা প্রথমে জানতেন না। সুকন্যার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তা জানতে পারেন। আবার পল্লবীর সঙ্গে ছেলে লিভ-ইন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তাঁরা পরিবারের পক্ষ থেকে তা মেনে নেননি। তাই পল্লবীকে নিয়ে কলকাতার ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন সাগ্নিক। ব্যাপারটি পল্লবীর পরিবার মেনে নেয়।