গোবিন্দ রায়: ২০ লক্ষ টাকার কম আদায়ে নেওয়া যাবে না কোনও কঠোর পদক্ষেপ। জমি বা বাড়ি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না। এমনই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের। বিচারকের স্পষ্ট নির্দেশ, ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ঋণদানকারী সংস্থাকে প্রয়োজনে আদালতেরই দ্বারস্থ হতে হবে।
ঘটনা গত ২০২৩ সালের। সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে গোলাম সাবির নামে এক ব্যক্তি ১৩ লক্ষ টাকার গৃহঋণ নেন। ঋণ দিয়েছিল হাউসিং ফিনান্স কোম্পানি বা এইচএফসি। প্রথম কয়েকমাস নির্দিষ্ট সময়মতো ঋণের টাকা ফেরত দেন সাবির। অভিযোগ, গত কয়েকমাস নাকি সমস্যা হচ্ছে। মাসিক কিস্তির টাকা দিতে পারছেন না তিনি। টাকা না পাওয়া ঋণদানকারী সংস্থা সরফেসি আইন প্রয়োগ করে। বলে রাখা ভালো, ২০০২ সালে এই আইন মোতাবেক কেউ গৃহঋণ শোধ করতে না পারলে তাঁর বাড়ি, জমি, কিংবা ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত এবং বিক্রি করে দিতে পারে ঋণদানকারী সংস্থা। সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতির কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই।
এই পরিস্থিতিতে ভিটেহারা হওয়ার আতঙ্কে সাবির কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর তরফে মামলা লড়েন আইনজীবী প্রসিত দেব এবং সুচেতা মিত্র। তাঁরা শুক্রবার আদালতে প্রশ্ন তোলেন, মাত্র ১৩ লক্ষ টাকার জন্য সরফেসি আইন প্রয়োগ কি সত্যি যুক্তিযুক্ত? যুক্তি হিসাবে তাঁরা আরবিআইয়ের একটি বিজ্ঞপ্তি তুলে ধরেন। ২০২০ এবং ২০২১ সালের ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক নয় এমন কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২০ লক্ষ টাকার কম গৃহঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কোনওরকম কঠোর পদক্ষেপ করতে পারবে না। একথা শুনে ওই ঋণদানকারী সংস্থার আইনজীবী সোনি ওঝা দাবি করেন, এইচএফসি মোটেও তেমন সংস্থা নয়। তাই আরবিআইয়ের নিয়ম এক্ষেত্রে খাটে না। আইনজীবীর আরও দাবি, এই ধরনের মামলা নির্দিষ্ট ট্রাইবুনালে করা যায়। তবে হাই কোর্টে করা যায় না।
হাই কোর্টের তরফে এই বক্তব্য তৎক্ষণাৎ খারিজ করে দেয়। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, এইচএফসি-ও আরবিআইয়ের ওই নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনওভাবেই তারা ঋণ আদায়ে সরফেসি আইন প্রয়োগ করতে পারে না। গোলাম সাবিরের থেকে না পাওয়া টাকা আদায়ে হাই কোর্টে মামলা করতে পারে ওই সংস্থা।
