ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) জমি ইসুতে সরব হয়ে একেবারে হাটেবাজারে নেমে পড়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Bidyut Chakraborty)। পাল্টা রবিবার উপাচার্যকে তুলোধনা করে তাঁর উপাচার্য পদ আঁকড়ে বসে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন বিদ্বজ্জনেরা। কলকাতা প্রেস ক্লাবে এদিন ছিলেন অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার, নাট্যকার মনোজ মিত্র, গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়দের মতো বিশিষ্টরা। বিশ্বভারতীর উপাচার্যর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ফ্যাসিস্ট, গেরুয়া, তালিবানি স্বেচ্ছাচার বন্ধ হোক’ এই দাবি তুলে সরব হন তাঁরা। ছিল বিশ্বভারতীয় বাঁচাও কমিটিও। বললেন, বাংলার গর্বকে অপমান করা হচ্ছে।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বারবার দু’টি ইসুতে নোবেলজয়ীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রথম অভিযোগ, নোবেলজয়ী বিশ্বভারতীর জমি দখল করেছেন। আর দুই, তিনি নোবেলও পাননি। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার প্রথমেই বলে দেন, “অমর্ত্য সেন যখন বলছেন ওই জমি ওঁরই তখন সেই কথাই যথেষ্ট।” সেই সঙ্গে নোবেল পাওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “অমর্ত্য সেন যে নোবেল পেয়েছেন তাও মেনে নিতে রাজি নন উপাচার্য। অর্থনীতিতে প্রতিথযশা যাঁরা তারাই ওই পুরস্কার পেয়েছেন। এটাকে যদি বলেন নোবেল নয়, তাহলে নোবেল কোনটা? এনিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও কথা হয় না। উপাচার্যর তো একথা না জানার কথা নয়।” এর পরই সরাসরি উপাচার্যর পদত্যাগের দাবি তুলে বলে দেন, “উপাচার্য যা করছেন তার পিছনে তাঁর ব্যক্তিগত লাভ রয়েছে। এই উপাচার্যের পদে থাকার কোনও যুক্তি নেই।”
[আরও পড়ুন: টেবিল সাজানো খাবার, ফাঁস নতুন দড়িতে! রিজেন্ট পার্কের রহস্যমৃত্যু কি পূর্ব পরিকল্পিত? উঠছে প্রশ্ন]
বিশিষ্টদের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন তোলা হয়, কেন রবীন্দ্রনাথের কর্মক্ষেত্রে বিশিষ্ট মানুষদের অপমান করা হচ্ছে। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে? একজন নোবেলজয়ীকে কেন অপমান করা হচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিশিষ্টরা জানিয়ে দেন, তাঁরা সমবেতভাবে শান্তিনিকেতন যাবেন। অনশনও করবেন এ নিয়ে। বিশ্বভারতীর সঙ্গে জমি ইসুতে নোবেলজয়ীর বাড়ি গিয়ে তাঁর কথাকেই সমর্থন করে তাঁর হাতে জমির নথি তুলে দিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। কিন্তু তার পরেও পিছু হঠতে রাজি নন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। এই প্রসঙ্গেই মুখ খোলেন নাট্যকার মনোজ মিত্র। উপাচার্যর ব্যক্তিগত স্বভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, “কোনও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এত হতাশ হইনি। এই উপাচার্য যা ইচ্ছে তাই বলেন। কাউকে বসতে পর্যন্ত বলেন না। ওঁর আচরণ অত্যন্ত খারাপ। একটা এক নায়কতন্ত্রের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে!”
সিঙ্গুর আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায় একটা উদাহরণ দেন। বলেন, “তখন অমর্ত্য সেন পক্ষপাতী ছিলেন না। সেই সময় বামপন্থীদের নয়নের মণি ছিলেন। কিন্তু মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে এই কথাটা বলার জন্য নাকি তাঁর মান কমে গিয়েছে!” সেই সঙ্গে বলেন, অমর্ত্য সেনকে অপমান করা হচ্ছে বলে একটা পদযাত্রা করা উচিত ছিল। তাঁর প্রশ্ন, “বাংলা তো কই ফুঁসে উঠল না! উপাচার্য তল্পিবাহক অনুচর মাত্র। ওঁকে করুণা করুন। যিনি বাংলার গর্ব তাঁকে অপমান করা হচ্ছে।” বিশ্বভারতী বাঁচাও কমিটির তরফে মনোজিত মণ্ডল একপ্রকার হুমকি দেন। বলেন, “বিদ্যুৎবাবু আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন। আপনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখান। আপনাকে যাদবপুর দেখিয়ে দেবে।”
[আরও পড়ুন: সুখবর! পুজোতেই কলকাতায় নয়া মেট্রো, শুরু হবে গঙ্গার নিচ দিয়ে পাতালপথে যাতায়াত]