রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: পাঁচটি দপ্তর ও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারীর এই আত্মপ্রচার একেবারেই দলের নাপসন্দ! তা এবার প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিলেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। বিরোধী দলনেতাকে ‘অনুজপ্রতিম’ সম্বোধন করে শমীক বলেন, ‘‘আমার আগে বিরোধী দলনেতা তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন যে তিনি দপ্তর ছেড়ে এসেছেন। এসব অতীত। আমি আবেদন করব, ভবিষ্যতে কোনও মিটিংয়ে এই কথা আর বলবেন না। কারণ, আপনি বিজেপিতে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছেন।’’ দলের একাংশের ব্যাখ্যা, একথা বলে শুভেন্দু যে অন্যদের থেকে আলাদা সেটাই বারবার বোঝাতে চান। আর এধরনের মন্তব্য ভবিষ্যতে আর করা চলবে না বলে বিরোধী দলনেতাকে এদিন কার্যত শাসনই করলেন শমীক।
শুভেন্দু এদিনও বলেন, একটি অংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অন্য দল থেকে বিতাড়িত হয়ে বা সেখান থেকে কিছু না পেয়ে। আর একটি অংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অন্য দল স্বেচ্ছায় ছেড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এই গোত্রে পড়ি। পাঁচটা দপ্তর (মন্ত্রিত্ব) ছেড়ে, তিনটে সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম অমিত শাহর আমন্ত্রণে, তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের আমন্ত্রণে।’’ আর তারপরই ভাষণ দিতে উঠে প্রকাশ্যেই বিরোধী দলনেতাকে শাসন করেন শমীক।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে আসার আগে বৃহস্পতিবার বঙ্গ বিজেপির আদি নেতাদের পুনর্মিলন উৎসব হয় ন্যাশনাল লাইব্রেরির অডিটোরিয়ামে। ২৫ ডিসেম্বর প্রাক্তন প্রধামন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন পালনের পাশাপাশি দলের বসে যাওয়া, বাদ যাওয়া পুরনো নেতাদের নিয়ে এদিন এই সভায় কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল-সহ মঞ্চে ছিলেন শমীক ভট্টাচার্য, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী। বঙ্গ বিজেপিতে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব চলছেই। আর সেই পরিস্থিতি ছাব্বিশের ভোটের আগে পুরনোদের সক্রিয় করতেই এই সভা ডাকার নির্দেশ দিয়ে দলের পুরনো মুখ রাজ্য নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সুনীল বনসল। দলের আদি নেতা-কর্মীরা কার্যত বিরোধী শিবিরে অবস্থান করছেন শুভেন্দু-সুকান্তদের। তবে মঞ্চে এদিন সুকান্ত-শুভেন্দু-অমিতাভ চক্রবর্তীরাও ছিলেন। আদি-নব্য দ্বন্দ্বের মধ্যেই দলের পুরনোদের মন জয়ে শুভেন্দু এদিন বলেন, ‘‘আপনারা যে কোনও সময়ে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ডেকে পাঠাতে পারেন বা কলকাতায় আসতে পারেন। আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে সব সমস্যার সমাধান হতে পারে।’’
এদিন ছিলেন সুকান্ত জমানায় গুরুত্ব না পাওয়া রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজকমল পাঠক, দুধকুমার মণ্ডলরা আবার সেই সময় সাসপেন্ড হওয়ার পর সাসপেনশন ওঠা রীতেশ তিওয়ারি, অভিজিৎ দাসরা (ববি)। মঞ্চে সুকান্ত-অমিতাভদের সামনেই শমীক দলের পুরনোদের উদ্দেশে এদিন বলেন, ‘‘আগে একটা গাড়ি ছিল, ছয়জন চড়তেন। কর্মীরা জানতেন কিছু পাব না। নির্বাচনে জিতব না। পদ, লোভ বা কমিটির জন্য তখন বিজেপি কেউ করতেন না। কে কাকে সাসপেন্ড করবে, রাজনীতি একটা বহমানতা। আমিও যা, আপনিও তা।’’ শমীকের কথায়, ‘‘কে বড়, কে ছোট। কে ডাকল, কে ডাকল না-এসব আপনাদের ভাবতে হবে না। আপনি বিজেপি এটাই আপনার পরিচয়।’’ শ্রোতাদের মধ্যে হাততালির ঝড় ওঠে। এদিন ভাষণে দলের ব্রাত্য হয়ে পড়া পুরনো কর্মীদের একাধিক জনের নাম উল্লেখ যেমন করেন শমীক, আবার ৬ নম্বর মুরলিধর সেন লেনের পার্টি অফিসের গুরুত্বও বুঝিয়ে দেন। যা বলে দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের একাংশকেই যে রাজ্য সভাপতি নিশানা করেছেন তা স্পষ্ট।
