অভিরূপ দাস: ভরা ভাদ্রেও অঝোরে বৃষ্টি। রাস্তায় জমে জল। সেই জল পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকেই বিপত্তি! অসাড় হয়ে গিয়েছে পায়ের পেশি, চোখ টকটকে লাল, ঘাড় এতটুকু নড়াচড়া করছে না। শরীরে বাসা বাঁধেনি তো লেপটোস্পাইরোসিস (Leptospirosis)? স্বাস্থ্যভবনের তরফে জারি করা নয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাস্তায় জমা জলেই মিশে আছে সারমেয় কিম্বা ইঁদুরের প্রস্রাব। আর মানুষের শরীরে প্রবেশ করে বাঁধাচ্ছে মারণ অসুখ।
করোনার (Coronavirus) তৃতীয় ঢেউ শিয়রে। এর মধ্যে অন্য অসুখ মাথাচাড়া দিলে সাড়ে সর্বনাশ। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যদপ্তর সতর্কতা জারি করেছে লেপটোস্পাইরোসিস নিয়ে। প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে স্বাস্থ্যভবনের (Swasthya Bhaban) সেই অ্যাডভাইজরি। এ রাজ্যে এই মুহূর্তে অসুখ মাথাচাড়া না দিলেও লেপটোস্পাইরোসিসের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে যত্রতত্র। তাই সময় থাকতেই সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্যদপ্তর।
[আরও পডুন: প্রবল জ্বরে কাহিল খুদেকে ভরতি নিয়ে টালবাহানা, রাতভর হাসপাতালে বসে অসহায় মা-বাবা]
এই অসুখে মৃত্যুহার যথেষ্ট। অসুখ হওয়ার আগেই তাই সর্তকতা নিতে চায় রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তর। ডায়রেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস এবং ডায়রেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন যৌথ অ্যাডভাইজরি বলছে, আদতে এই অসুখ চারপেয়েদেরই হয়। কুকুর–ইঁদুর কিম্বা গবাদি পশুর শরীরে একধরণের স্পাইরাল ব্যাকটেরিয়ার (Bacteria) দেখা মেলে। তার নাম লেপটোস্পাইরা। এর থেকেই ছড়ায় অসুখ। আক্রান্ত পশুর প্রস্রাবে থিকথিক করে সেই ব্যাকটেরিয়া। যা শরীরে লাগলেই বিপদ। পশুর প্রস্রাব ত্বকের সংস্পর্শে এলেই অসুখ ছড়ায়। ইঁদুর প্রস্রাব করে যেখানে সেখানে। মুষিকের উৎপাত মারাত্মক, এমন কোনও এলাকায় বসবাস করলে তা থেকেও ছড়াতে পারে অসুখ।
জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, বর্ষায় এবং বর্ষা পরবর্তী স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া এই অসুখ ছড়ানোর পক্ষে অনুকূল। শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের পর উপসর্গ দেখা দিতে ৫ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। কোনও কোনও সময় নোংরা প্রস্রাব মাড়িয়ে আসার এক মাস পরেও অসুখ দেখা দিতে পারে। রাজ্যের প্রতিটি চিকিৎসককে এই অসুখ নিয়ে সতর্ক হতে বলেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। চোখ লাল হওয়া, ঘাড় ‘স্টিফ’ বা শক্ত হয়ে যাওয়া, কোনও কারণ ছাড়াই আচমকা জন্ডিস, তলপেটে ব্যাথা এমন কোনও উপসর্গ দেখলেই টেস্ট করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্যদপ্তর। কোন টেস্টে ধরা পরে লেপটোস্পাইরোসিস?
[আরও পডুন: ‘মমতার উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিল যোগী সরকার’, উত্তরপ্রদেশের বিজ্ঞাপন বিতর্কে খোঁচা ডেরেকের]
স্বাস্থ্যভবনের অ্যাডভাইজরি বলছে, রুটিন ইউরিন এক্সামিনেশন, রক্তের টিএলসি, ডিএলসি, ইএসআর, প্লেটলেট কাউন্ট করলেই ধরা পরে অসুখ। এ অসুখে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় যকৃৎ। লিভার ফাংশন টেস্ট করালেও বোঝা যাবে শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করেছে কি না। কীভাবে চিকিৎসা হবে? তাও প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। উপসর্গ কম থাকলে ডক্সিসাইক্লিন দিতে হবে। প্রসূতিদের ক্ষেত্রে প্রতি ৬ ঘন্টা অন্তর অ্যামক্সিসিলিন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। আট বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে শিশুর ওজন বুঝে অ্যামক্সিসিলিন সিরাপ দিতে বলেছে স্বাস্থ্যভবন। যাঁরা নালা পরিষ্কার করেন, তাদেরই সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশিকা, নোংরা ঘাটতে হয় এমন পেশায় থাকা লোকেদের গ্লাভস পরে কাজ করতে হবে। পরতে হবে পা ঢাকা জুতো।