ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: করোনার সময় ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’য় বাড়তি ৫ কেজি শস্য বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। চলতি বছর সেই বরাদ্দ বন্ধ করে প্রকল্পের নাম বদলে ‘প্রধানমন্ত্রী খাদ্য সুরক্ষা যোজনা’ করে পুরো রেশনটাই (Ration) বিনামূল্যে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। নতুন নাম আবার বদলে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের সেই পুরনো নামেই ফিরে গেল খাদ্য মন্ত্রক। মূল খাদ্য সুরক্ষা যোজনার নাম আবার রাখা হল ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ (PMKAY)। শুধু বাদ গেল ‘গরিবের’ জন্য বরাদ্দের বাড়তি ৫ কেজি শস্য।
কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক (Ministry of Consumer Affairs Food and Public Disctribution) বুধবার বিভিন্ন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীকে নিয়ে যে বৈঠক করে, তার শীর্ষকই ছিল ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’র নামে। এই নাম বদলের পর্বে প্রশ্ন উঠে গেল বিনামূল্যের বরাদ্দ বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রীর এই ‘গরিব প্রেম’ নিয়ে। রেশনে কেন্দ্র সরকার এই মুহূর্তে এ রাজ্যে ৬ কোটি ১ লক্ষ মানুষকে শস্য বিলি করে। রাজ্যে ৩ কোটির বেশি কিছু মানুষকে রেশন দেয় রাজ্য সরকার। সম্প্রতি নানা কারণে রাজ্যের এক কোটির কাছাকাছি কিছু কার্ড (Ration Card) নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, কৌস্তভের গ্রেপ্তারির প্রশ্নে কী বললেন?]
এই পরিস্থিতিতে রেশন ডিলারদের বক্তব্য, গরিবদের কথা ভেবেই তো রেশনে ৫ কেজি বাড়তি বরাদ্দের ঘোষণা হয়েছিল। সেটা বন্ধ করে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরনো প্রকল্পের ‘গরিব’ নাম বেছে নিল কেন্দ্র সরকার। তাঁদের প্রশ্ন, তবে কেন বাড়তি বরাদ্দ বন্ধ করবে। পুরনো প্রকল্পে গোটা দেশে ৮১ কোটি ৩৫ লক্ষ মানুষকে ৩ টাকা কিলো চাল ও ২ টাকা কিলো দরে গম দিত রেশনে। ৫ কেজি করে মাথা পিছু সেই শস্যর সঙ্গে আরও ৫ কেজি শস্য বিনামূল্যে দেওয়া শুরু হয় করোনাকালে। কেন্দ্রের খরচ হত ২০০ কোটি টাকা। বাড়তি সেই শস্য বিলি বন্ধ করে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সমস্ত রেশন গ্রাহককে বিনামূল্যের শস্য দেওয়ার ঘোষণা করল কেন্দ্র। কেন্দ্রের দাবি এতেও তাদের ২০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা ঘিরে ব্যাপক অশান্তি, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ২]
রেশন ডিলারদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার’স ফেডারেশন (AIFSD) এর ভিত্তিতেই কেন্দ্রের আওতাধীন রেশন গ্রাহকদের কাছে আবেদন করেছে যাতে তারা তাদের বাড়তি বরাদ্দের দাবি সরাসরি কেন্দ্র সরকারকে লিখে পাঠায়। তার জন্য রেশন দোকানেই গ্রাহকদের কাছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা শুরু করেছেন ডিলাররা। সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানাচ্ছেন, বাড়তি বরাদ্দের অংশ গ্রাহকরা রেশন দোকানে এসে চান। সেই বরাদ্দ তো কেন্দ্র সরকারই দিচ্ছে না। তাহলে সে কথা গ্রাহকরাই এবার কেন্দ্রকে জানাক। তাঁর কথায়, “কেন্দ্র সরকার যে বাড়তি বরাদ্দের কথা বলেছিল, সেটা বন্ধ করে দিল। অথচ সেই নামটা রেখে দিল। তাহলে গরিব মানুষের বাড়তি বরাদ্দ বাদ দেবে কেন? আমরা গ্রাহকদের কাছে অনুরোধ করেছি, যাতে তাঁরা এবার তাঁদের কথা আবেদনের আকারে জানান।” একইসঙ্গে ডিলারদের এই সংগঠনের দাবি, ২০০ কোটি টাকা খরচের কথা মুখে বললেও কেন্দ্রের রেশনের জন্য খরচ কমেছে।