অর্ণব আইচ: রুমমেটই চোর। ঘরভাড়া দিয়ে ‘পেয়িং গেস্ট’ (Paying Guest) হিসাবে থেকে চুরির ছক। তার জন্য রীতিমতো গ্যাং তৈরি করেছিল ওয়াটগঞ্জের যুবক। অন্য রুমমেটদের ল্যাপটপ, মোবাইল, এটিএম কার্ডের মতো মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে গ্যাংয়ের অন্যদের হাতে তুলে দিত সে। দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) চারু মার্কেট এলাকায় ঘটে এই চুরির ঘটনা। চারু মার্কেট থানার ওসি সুভাষ অধিকারীর তত্ত্বাবধানে পুলিশের একটি টিম তদন্ত শুরু করে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মহম্মদ ইশাক ও আহমেদ হোসেন নামে দুই দুষ্কৃতী।
পুলিশ জানিয়েছে, চারুচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের উপর একটি বাড়ির হলঘরে থাকেন জনা পাঁচেক ‘পেয়িং গেস্ট’। তাঁদের মধ্যে ইশাক ছাড়া বাকি চারজনই ছাত্র। মঙ্গলবার সকালে উঠে ওই ছাত্ররা দেখেন, তাঁদের ঘর থেকে চুরি গিয়েছে দু’টি ল্যাপটপ, মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যাগ। কিন্তু চোর কোথা থেকে এসে চুরি করল, তা প্রথমে ভেবে কূল পাচ্ছিলেন না ওই ছাত্ররা। বরং প্রোজেক্ট তৈরির কাজে লাগা ওই ল্যাপটপ চুরি হওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁদের।
পরে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাসিন্দা ও ভবানীপুরের একটি কলেজে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ছাত্র মহম্মদ সফিউল্লা খালিদ এই ব্যাপারে চারু মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের টিম তদন্ত শুরু করে পুরো বাড়িটি খতিয়ে দেখে বুঝতে পারে, রাতে বাড়ির ভিতর বাইরের কোনও দুষ্কৃতীর প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। জানালা দিয়েও উপরের ঘর থেকে একসঙ্গে এতগুলি জিনিস চুরি হয়নি। পুলিশের সন্দেহ হয়, এই চুরির পিছনে বাড়ির ভিতরের কারও হাত রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘দুয়ারে হাঁসের পালক’! কাশফুলেও নয়া শিল্প, বিপুল কর্মসংস্থানের দিশা দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী]
তারই ভিত্তিতে পুলিশ ‘পেয়িং গেস্ট’ হয়ে থাকা প্রত্যেক যুবককে জেরা করতে শুরু করে। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর ইশাকের উপর সন্দেহ হয় পুলিশের। পুলিশকে ইশাক জানায়, সে ওয়াটগঞ্জের নাজির লেনের বাসিন্দা। ওই এলাকায় তার একটি মোবাইল ও ল্যাপটপের দোকানও রয়েছে। বাবার সঙ্গে গোলমাল বলেই সে বাড়ির বাইরে পেয়িং গেস্ট হিসাবে ভাড়া থাকে। ক্রমাগত প্রশ্নের মুখে ভেঙে পড়ে ইশাক। জানা যায়, ছাত্রদের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ চুরির জন্য সে রীতিমতো গ্যাং তৈরি করে। সে নিজে চারু মার্কেটে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকতে শুরু করে। তখনই চুরির ছক কষে।
সোমবার রাতে সতর্ক করে দেয় গ্যাংয়ের অন্যদের। তারা ভোররাতে বাড়িটির কাছে চলে আসে। ইশাক নেমে গিয়ে চোরাই জিনিসগুলি তার গ্যাংয়ের লোকেদের হাতে পাচার করে দেয়। সেইমতো তল্লাশি চালিয়ে বুধবার ভোরে ওয়াটগঞ্জের ড. সুধীর বসু রোডের আহমেদ হোসেনকে জেরা করে একটি ল্যাপটপ পুলিশ উদ্ধার করে। দলের বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এর আগে ইশাক নিজের দোকান থেকে চোরাই মোবাইল ও ল্যাপটপ বিক্রি করত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।