অভিরূপ দাস: গাছ কাটার লোক আছে। কিন্তু তিনি কাজ করতে চাইছেন না। গাছে নাকি অপদেবতার বাস! নিছক গল্পকথা নয়। বাস্তবে এমনটাই হচ্ছে খাস কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipality) এলাকায়!
মাটি থেকে উঠে ছাতার মতো ডালপালা মেলেছে চারিদিকে। সে ডালপালা এমনই ঘন, নিকষ সূর্যের আলো ঢোকে না। এমন গাছের পেল্লায় মোটা শিকড় ফাটিয়ে দিচ্ছে গা-ঘেঁষা বাড়ি। কথা হচ্ছে মান্ধাতার আমলের অশ্বথ গাছ নিয়ে। যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শহর জুড়ে। বহু বাসিন্দার কাছেই তা চিন্তার বিষয়। আর্জি একটাই, ‘‘কেটে দেওয়ার বন্দোবস্ত করুন।’’ কিন্তু কাটবে কে? আতঙ্কে তো গাছে হাত দিতে চাইছেন না পুরসভার গাছ কাটার কর্মীরা।
[আরও পড়ুন: দুয়ারে পুরসভা! নতুন বছরে বয়স্ক নাগরিকদের জন্য চালু ‘নগরবন্ধু’ স্কিম]
শুক্রবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানিয়েছেন, ‘‘শহরে যাঁরা গাছ কাটার কাজ করেন তাঁরা বেশিরভাগ ওড়িশার মানুষ। এঁরা কিছুতেই অশ্বথ গাছ কাটতে চান না। ওখানে নাকি ‘ব্রহ্মদৈত্য’ থাকে।’’ উল্লেখ্য, এদিনই মেয়রের কাছে ফোন আসে ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। অবিনাশ চৌধুরী লেনের বাসিন্দা মন্টু প্রামাণিকের কথায়, ‘‘অশ্বথ গাছ নিয়ে অসুবিধায় পড়েছি। বাড়ি ফাটিয়ে দিয়েছে। উদ্যান বিভাগকে চিঠি লিখেও সুরাহা হচ্ছে না।’’
জানা গিয়েছে, অশ্বথ গাছের একটা মোটা শিকড় ফাটিয়ে দিয়েছে তাঁর বাড়ি। ব্রহ্মদৈত্য নিয়ে গাছ কাটার কর্মীদের আশঙ্কার কথা মেয়র জানিয়েছেন তাঁকে। ফিরহাদের কথায়, গাছ কাটার ওড়িয়া কর্মীরা কেউ অশ্বথ গাছ কাটতে চাইছেন না। অন্য গাছ হলে কেটে দিতে রাজি।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত ‘রাণী রাসমণি’ খ্যাত অভিনেতা কিংশুক গঙ্গোপাধ্যায়]
মেয়র জানিয়েছেন, যাঁরা গাছ কাটেন তাদের আবদার ওখানে আগে পুজো, হোম-যজ্ঞ করতে হবে। মন্টু প্রামাণিকের আকুতি, ‘‘যা করতে হয় করে নেব। আপনি একটু গাছটা কাটার বন্দোবস্ত করুন।’’ শেষমেশ উপায় বাতলেছেন ফিরহাদই। ‘‘পুজোর জোগাড়যন্ত্র পুরসভা করবে না। তা স্থানীয়ভাবে করতে হবে। পুরোহিত ডেকে পুজোটা করে নিন। গাছ কাটার কর্মীরা বুঝবে যে ব্রহ্মদৈত্য গাছ থেকে চলে গিয়েছে। তার পর ওরা গাছ কাটবে।’’
পুরসভা ট্রিমিং করলেও গাছ কাটার অনুমতি দেয় বন দপ্তর। মেয়র জানান, বন দপ্তর খতিয়ে দেখে তবে অনুমতি দেবে। একটার বদলে কুড়িটা গাছ বসাবে, পুরসভাকে জানাতে হবে।