পারমিতা পাল: একুশের নির্বাচনে নিজের রাজনৈতিক ‘দূরদর্শিতা’র প্রমাণ দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। কর্মীদের বিবাদ মিটিয়ে, পাহাড়প্রমাণ দায়িত্ব নিয়ে একাধিক জেলায় তৃণমূলকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইয়েছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে হলে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দূরদর্শিতাতে কাজ হবে না। সেটা তিনি ভালই বুঝেছেন। তাই এবার দলনেতার পাশাপাশি জননেতা হওয়ার দৌড় শুরু তৃণমূল যুব সভাপতির।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে এতদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত চষে বেড়াতেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঝড়-জল মিটতেই কপ্টারে চেপে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চাক্ষুষ করে এসেছেন তিনি। এমনকী, কীভাবে সাজবে বাঁধ, রাস্তা কিংবা দিঘার পুনর্গঠন কীভাবে হবে, তাও তিনি নিজে আধিকারিকদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। এটা তো তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গি। তবে ব্যতিক্রমী হতে দেখা গিয়েছে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদকে।
[আরও পড়ুন: ‘মানসিক অবসাদে সিদ্ধান্ত’, লিভ ইন পার্টনারের বাড়িতে ‘আত্মহত্যা’র আগে ভয়েস রেকর্ড মহিলার]
যশের ঝাপটা স্তব্ধ হতেই সেদিন বিকেলে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে ছুটে গিয়েছিলেন। ঘুরে দেখেন বাঁধের পরিস্থিতি। এমনকী, আশ্রয় শিবিরে থাকা সকলের সঙ্গে কথাও বলেন। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানতে চান। তবে নিজেকে নিজের কেন্দ্রে আটকে রাখেননি অভিষেক। বৃহস্পতিবার ছুটে যান পূর্ব মেদিনীপুরের ‘যশ’ বিধ্বস্ত এলাকায়। হেঁটে ঘুরে দেখেন বাঁধ, ভেঙে যাওয়া রাস্তা। গ্রামে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শোনেন। সে সমস্ত অভিযোগ নিরসনেরও আশ্বাসও দেন। বললেন, “যখন ডাকবেন, তখনই পাবেন। প্রয়োজন হলে ৫-১০ দিন পরই আবার আসব।”
যা দেখে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, গত করোনা পরিস্থিতি হোক কিংবা ভয়াবহ আমফান, কোনওবারই সেভাবে মাঠে নেমে কাজ করতে দেখা যায়নি অভিষেককে। এবার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ইতিমধ্যে তাঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগও তৈরি হয়ে গিয়েছে- #PaseAcheAbhishek। তৃণমূলের তরফে নতুন মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: বিমানভাড়া ফেরত নিতে গিয়ে অনলাইনে প্রতারণার শিকার তরুণী, গায়েব ৬৬ হাজার টাকা]
তৃণমূলের যুব সভাপতির এই ‘বদল’ দেখে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, এতদিন ঠান্ডা ঘরে বসে নির্বাচনের দায়িত্ব সামলেছেন অভিষেক। এবার সেই ট্রেন্ড বদলাচ্ছে। একুশের নির্বাচনে শাহ-মোদি-নাড্ডার লাগাতার আক্রমণ সামলে গা ঘামিয়ে দলকে জিতিয়ে ‘দলনেতা’ হিসেবে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। নিন্দুকদের বুঝিয়েছেন, রাজনীতিতে তিনি একেবারে ‘নাবালক’ নন। কিন্তু অভিষেকের বিরুদ্ধে বরাবরের অভিযোগ, মাটির সঙ্গে যোগ নেই তাঁর। মাঠে নেমে রাজনীতিটা তিনি করেননি ফলে রাজ্যবাসীর চাহিদা বোঝার মতো ক্ষমতা তাঁর নেই। এবার সেই অভিযোগ ওড়াতে গা ঘামাতে শুরু করলেন তৃণমূলের যুব সভাপতি। কিন্তু দলনেতা থেকে কি জননেতা হয়ে উঠতে পারবেন তিনি? সেই উত্তরটা সময়ই দেবে।