ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রাজ্যসভা আসনে জয়ীর শংসাপত্র আসা সময়ের অপেক্ষা। তার আগেই উত্তরের চা বলয়ে ছাব্বিশের ঘুঁটি সাজিয়ে গড় দখলের কাজ শুরু করে দিলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন বছরে তিন জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত লাগাতার সংগঠনের বুথওয়াড়ি সম্মেলন চলবে চা বলয়ে। কোন বুথে জয়, কোন বুথে হার, জয়ের পিছনে কোন কোন ফর্মুলা কাজ করেছে, হারের জন্যই বা কোন ইস্যু দায়ী, ধরে ধরে সেসবের বিশ্লেষণ হবে এই বুথ সম্মেলনগুলিতে। দুই দফায় জানুয়ারি মাসব্যাপী এই কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। প্রথমে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির ৪৮৩টি বুথ ধরে তিন থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘লাইন মিটিং’ অর্থাৎ বুথ সম্মেলন হবে। ১৫ জানুয়ারি আলিপুরদুয়ারের পিএফ অফিস ঘেরাও হবে। তার পরদিন ঘেরাও জলপাইগুড়ি পিএফ অফিস। ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি দার্জিলিং সমতলের ৭৮টি বুথ ধরে লাইন মিটিং হবে। ২১ তারিখ শিলিগুড়ির প্রধাননগরে পিএফ অফিস ঘেরাও হবে।
এর ফলে তিন জেলার মোট আটটি বিধানসভা এলাকা আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের বুথ সম্মেলনের আওতায় চলে আসবে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এই দুই জেলার ক্ষেত্রে কুমারগ্রাম, মাদারিহাট, ফালাকাটা, কালচিনি, নাগরাকাটা, মালবাজার এই ছয়টি বিধানসভা এলাকা এই বুথ সম্মেলনের আওতায় আসবে। আবার দার্জিলিং সমতলের ক্ষেত্রে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া-খড়িবাড়ি এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্র। তবে শুধু জানুয়ারি মাসেই নয়, ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে একেবারে বার্ষিক কর্মসূচি সাজিয়ে ফেলেছে দলের শ্রমিক সংগঠন।
চা বলয়ের পর পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে চটকল এলাকায় একইভাবে বুথ সম্মেলন করার। গোটা ২০২৫ সালজুড়ে একইভাবে এই সম্মেলন চলবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার এ নিয়ে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় তাঁর। ছিলেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক মন্ত্রী পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারও। ঋতব্রতর কথায়, “যে ৪৮৩টি বুথে প্রথম সম্মেলন হবে, ২০১৯-এর লোকসভায় তার মধ্যে মাত্র ১৫টিতে তৃণমূল জিতেছিল। পরের লোকসভায় তার মধ্যে ২৪৪টিতে জয় এসেছে। চা শ্রমিকদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপরিকল্পিত প্রকল্প আর দলীয় সংগঠনের নিবিড় সংযোগই হাতেনাতে ফলাফল সামনে এনে দিয়েছে। সেখানকার মানুষ সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন, বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী তাঁদের পরিবারের খেয়াল রেখেছে। এর ফলেই সেখানকার মানুষ তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
২০১৯ থেকে ২০২৪, মাঝে সময় পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর উপর জোর দিয়ে বুথওয়াড়ি শক্তিবৃদ্ধির কাজ করেছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন। লোকসভা ভোটে তার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। মাদারিহাট বিধানসভার উপনির্বাচনে তার ফল সকলের সামনে। মাদারিহাটে ২৪টি চা বাগানে ১০০টি বুথ রয়েছে। গত লোকসভা ভোটে যার মধ্যে ১০টি বুথে বিজেপির থেকে পিছিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপির দখলে ছিল ৫৫টি বুথ। তৃণমূলের দখলে ছিল ৪৫টি। সেখানে উপনির্বাচনে ম্যাজিক দেখিয়েছে শাসক দল। ৩৬টি বুথে দখল বাড়িয়ে তৃণমূলের হাতে চলে এসেছে মোট ৮১টি বুথ। বিজেপির দখলে বাকি ১৯টি। এই ব্যবধানেই বিজেপিকে মোট ১৪ হাজার ৭৩৩ ভোটে হারিয়ে মাদারিহাটের চা বলয় দখলে নেয় তৃণমূল। তারা এই চা বলয়ে পেয়েছে ৩৫ হাজার ৩৩৮ ভোট। বাকি ২০ হাজার ৬০৫ ভোট পেয়েছে বিজেপি। ঠিক এই ফর্মুলাকেই ভিত করে এবার উত্তরের গোটা চা বলয় দখলের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে এগোতে চাইছে চা বাগানে দলের শ্রমিক সংগঠন। ঋতব্রতর কথায়, “আমাদের লক্ষ্য সব বুথ জেতা। তাই সংগঠনের শক্তি আর মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সংঘবদ্ধ করে আমাদের কর্মসূচি সাজানো হয়েছে।”