নব্যেন্দু হাজরা ও গোবিন্দ রায়: এবার কানাডার ভ্যানকুভার শহরে ছুটবে কলকাতার চলমান নস্ট্যালজিয়া। ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে কানাডায় যাচ্ছে দুটি ট্রাম। বিশ্বকাপ চলাকালীন ট্রাম দুটি চলবে ভ্যানকুভার সিটিতে। গত ১৯ নভেম্বর কাউন্সিল অফ জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার তরফে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়, ফিফা বিশ্বকাপ উপলক্ষে কানাডার ভ্যানকুভারে দুটি ট্রাম পাঠানো জন্য। এই প্রস্তাব আসার পরে রাজ্য দুটি ট্রাম কানাডায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে যেহেতু ট্রাম সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে, তাই এবিষয়ে আদালতের সম্মতির প্রয়োজন। মঙ্গলবার ছিল সেই মামলার শুনানি। সেখানে রাজে্যর আইনজীবী হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেছেন, ফিফা ২০২৬ উপলক্ষে দুটি ট্রাম কানাডার ভ্যানকুভার সিটি স্থানান্তরের অনুমতির জন্য। ভ্যানকুভার সিটি কর্তৃপক্ষ সরকারের মাধ্যমে পরিবহন দপ্তরে ফিফা বিশ্বকাপের জন্য দুটি ট্রাম চেয়েছে। এবিষয়ে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম প্রশ্ন করেছেন, ‘‘বিশ্বকাপের পরে ট্রামগুলি কি ফিরে আসবে?’’ আইনজীবী জানিয়েছেন, ভ্যানকুভার সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১.৭ কিলোমিটার বিশেষ রুটে দুটি ট্রাম চালাবে চলমান ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য। পরবর্তীকালে ভারত সরকার ও রাজ্য সরকার মনে করলে, তা আর ফেরত আনা হবে না, উপহার হিসেবে কানাডা সরকারকে দেওয়া হবে। প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, ‘‘আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিদেশে যাচ্ছে, এতে আমরা অত্যন্ত খুশি হওয়া উচিত।’’ কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশ থাকায় রাজ্য কোনও পদক্ষেপ এখন করতে পারছে না। তাই এই নিয়ে আবেদন করার অনুমতি চায় রাজ্য। বিচারপতি রাজ্যে আইনজীবীকে পৃথক আবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ট্রাম সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলায় এদিনও ট্রামকে বাঁচিয়ে রাখতে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত এও জানিয়েছে, ট্রামলাইন বুজিয়ে ফেলার কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যেখানে যেখানে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। হাই কোর্টের এই নির্দেশ পালন হচ্ছে কিনা, এবিষয়ে নিশ্চিত হতে রাজ্যকে ছবি-সহ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ট্রাম রাজ্যের ঐতিহ্য। তা তুলে দেওয়া খুব সহজ কাজ। কিন্তু রাজ্যকে ট্রাম বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে হবে। বহু দেশে ট্রাম চলে। কোথাও কোথাও রাস্তার একেবারে মাঝখান দিয়ে।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতার ঐতিহ্য ট্রাম বাঁচাতে জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল হাইকোর্টে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে আগেই একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিল আদালত। এদিন সেই মামলার শুনানিতে ট্রাম সংরক্ষণ কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। সেখানে বলা হয়েছে, ট্রামলাইন বুজিয়ে দেওয়ার অভিযোগে কলকাতা পুলিশের কাছে দুটি জমা পড়েছে। তা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।