স্টাফ রিপোর্টার: হিন্দুত্ব নিয়ে মোহন ভাগবতের (Mohan Bhagwat) বক্তব্যের জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। ভারতকে একটি দৃষ্টান্তমূলক হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। বৃহস্পতিবার তার পালটা জবাব দিয়ে রাজ্যের শাসকদলের অভিযোগ, হিন্দুত্বের তাস খেলার চেষ্টা চলছে। আরএসএসের টিউটোরিয়ালের দরকার নেই ভারতের। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেছেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) শিকাগোর ধর্ম মহাসভায় আসল হিন্দুত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়েছেন। সনাতন ধর্ম হিন্দু ধর্ম কী সেটা বিশ্ববাসী শুনেছে। তার জন্য আরএসএসের টিউটোরিয়ালের দরকার নেই।’’
কলকাতায় সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভাগবত আগের দিনই হিন্দুত্ব নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে প্রতিটি স্বয়ংসেবককে হিন্দু রাষ্ট্রের আদর্শে গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘ভারতকে গোটা বিশ্বের কাছের আদর্শ হিসাবে গড়ে তুলতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে দায়িত্ব নিতে হবে। সেভাবেই স্বয়ংসেবকদের তৈরি করতে হবে। দেশ ও সমাজকে গড়ে তুলতে হবে।’’
[আরও পড়ুন: ববিতা সরকারের পর প্রিয়াঙ্কা সাউ, SSC মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি পেলেন যোগ্য প্রার্থী]
তার জবাব দিতে বসেই এদিন ভাগবতকে পালটা বিঁধেছেন কুণাল। শ্রীরামকৃষ্ণদেব ও স্বামী বিবেকান্দর আদর্শের কথা তুলে সম্প্রীতির বার্তার প্রসঙ্গ টেনেছেন। বলেছেন, ‘‘বিজেপি বা আরএসএস (RSS) যে হিন্দুত্বের সংজ্ঞা বলছে, সেটা বিকৃত ব্যাখ্যা। ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা। মোহন ভাগবতজি নতুন করে এসে আর কী বলবেন? স্বামীজির ধর্মভাবনা ভারতবর্ষের সম্প্রীতির এক নাম। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তাঁর নানা কথায় হিন্দু ধর্মের প্রকৃত অন্তর্নিহিত তথ্য বারবার বুঝিয়েছেন। এই বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলে গিয়েছেন যত মত তত পথ। হঠাৎ করে নয়া হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা কোথা থেকে এলেন ভোট পাওয়ার জন্য?’’
কুণাল আরও বলেন, ‘‘বিশ্বের দরবারে হিন্দুত্ব যদি কেউ তুলে ধরে থাকেন তবে তিনি স্বামী বিবেকানন্দ। যে ভাষণের শুরু হয়েছিল ‘আমার আমেরিকার ভাই-বোনেরা’ দিয়ে। স্বামীজীর সেই ধর্মভাবনা, রবীন্দ্রনাথের ভাবনা আর নজরুল ইসলাম যখন শ্যামাসংগীত লিখছেন তাঁর অন্তরের শক্তির আরাধনার ভাবনা থেকে শুরু করে, সার্বিকভাবে এক ধর্মভাবনার উপর ভারতবর্ষ দাঁড়িয়ে আছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম, আমরা রয়েছি এই সূর্যের এক দেশে– এইটা যেন বিজেপি আর আরএসএসের ভক্তরা মনে রাখেন। ভারতবর্ষ সাম্য, সম্প্রীতির এক নাম। ধর্মীয় মেরুকরণে বিজেপির এই নব হিন্দুত্বের ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই ভারতবর্ষের।’’
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রিত্ব বাঁচাতে রণে ভঙ্গ, কংগ্রেস সভাপতি পদের দৌড় থেকে সরলেন গেহলট]
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ একবার মা দুর্গার পিতৃপরিচয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। কথায় কথায় সে প্রসঙ্গ টেনে আনেন কুণাল। নাম না করে দিলীপ ঘোষের পুরনো সেই উক্তির কথা মনে করিয়ে কুণাল বলেন, ‘‘যাঁরা মা দুর্গার জন্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের কাছে ধর্ম নিয়ে কী জানার আছে? ধর্ম জানতে হলে শিকাগো মহাসভায় দাঁড়িয়ে স্বামীজি যে কথা বলেছেন, সেটাই আদর্শ। আমরা সেই আদর্শকেই মানি।’’