রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পাশ মার্কসও তুলতে পারল না বঙ্গ বিজেপি। সদস্য সংগ্রহের যে 'টাস্ক' কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিয়েছিল, তার সিকিভাগও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। দলের এই ছন্নছাড়া অবস্থা নিয়ে কড়া সমালোচনা করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
লক্ষ্য ছিল এক কোটি। এখনও পর্যন্ত মিসড কল দিয়ে সদস্য করা গিয়েছে মাত্র ২৬ লক্ষ ৯৩ হাজার জনকে। যা মূল টার্গেটের থেকে শত যোজন দূরে। হাতে আর মাত্র ১১দিন সময়, ৩১ ডিসেম্বর শেষ দিন সদস্য সংগ্রহের। তার মধ্যে যদি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব পাশ করতে পারে তাহলে ভালো, না হলে ফল ভুগতে হবে। একপ্রকার হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গল পাণ্ডের। বৈঠকে মঙ্গল পাণ্ডে বলেন, ১০০—তে ৩০ পেলে পাশ করা সম্ভব। কিন্তু শতাংশের হিসাব বলছে বঙ্গ বিজেপি এখনও পর্যন্ত অর্জন করতে পেরেছে ২৬.৯৩ শতাংশ নম্বর। তখন এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে পাশ মার্কস ১০০-তে ৩৪।’’ তখন মঙ্গল পাণ্ডে বলেন, ‘‘তাহলে তো আপনারা ডাহা ফেল করেছেন।’’ পাশ মার্কসের সঠিক নম্বর বলতে গিয়ে উলটে কেন্দ্রীয় নেতারই তোপের মুখে পড়তে হয় রাজ্য নেতাদের। বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরোধী গোষ্ঠীর কয়েকজন এই গোটা বিষয়টি দেখে মজা পেয়ে মুখ চেপে হেসে ফেলেন।
বৃহস্পতিবার সল্টলেকে বঙ্গ বিজেপির ‘সক্রিয় সদস্য’ নিয়ে কর্মশালা ছিল। সেখানে বিধায়ক, সাংসদদের পাশাপাশি মোর্চার সভাপতি ও রাজ্য পদাধিকারীদের ডাকা হয়। শুধু সাধারণ সদস্য সংগ্রহের লক্ষমাত্রার ক্ষেত্রেই দল ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, দলের ‘অ্যাক্টিভ মেম্বার’ এর লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হচ্ছে না চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। সেক্ষেত্রেও সম্ভবত ‘পাশ মার্কস’ তুলতে পারবে না বঙ্গ বিজেপি। বুথ ও মণ্ডলস্তরে সংগঠনের বেহাল অবস্থা, কর্মী সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে ‘অ্যাক্টিভ মেম্বার’ হওয়ার ক্ষেত্রে যে যোগ্যতা লাগে তার মাপকাঠি কমানো হয়েছিল। ‘অ্যাক্টিভ মেম্বার’ হতে গেলে সেই নেতা বা কর্মীকে ৫০জন সাধারণ সদস্য করতে হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা আগে ছিল ১০০জন করে। কিন্তু তা কমিয়ে ৫০ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ১ লক্ষ ‘অ্যাক্টিভ মেম্বারে’র লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও তা ১৮ হাজারের কিছু বেশি হয়েছে। ফলে বিজেপির সক্রিয় কর্মীর সংখ্যাও কমে গেল। এই সক্রিয় মেম্বারদেরই দলের বিভিন্ন পদে রাখার কথা বলেছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বলা হয়েছিল, যারা ‘অ্যাকটিভ মেম্বার’, শুধু তাঁরাই পদ পাবেন। কিন্তু বুথ, জেলা ও মণ্ডলস্তরে ‘অ্যাকটিভ মেম্বার’ হয়েছেন ১৮ হাজারের কিছু বেশি। ১ লক্ষ সক্রিয় কর্মীর লক্ষ্যমাত্রা তো দূর অস্ত।
পাশাপাশি সদস্যতা অভিযানে খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য বাংলায় দলের সাংসদ ও বিধায়কদের কার্যত ভর্ৎসনা করলেন রাজ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। যে বিধায়ক বা সাংসদদের এলাকায় মেম্বারশিপের হাল খারাপ তাদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে দল এটা নিয়ে ভাববে। অর্থাৎ মুখে পরিষ্কার না বললেও কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গল পাণ্ডে বোঝাতে চেয়েছেন, যে বিধায়কদের এলাকায় সদস্য সংগ্রহের কাজ খারাপ হয়েছে তাদের ছাব্বিশের ভোটে প্রার্থী করা হবে কি না, তা দল ভাববে।