স্টাফ রিপোর্টার: বাংলার মুকুটে ফের নয়া পালক। তাও আবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিচারে। এবার দেশে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে প্রথম হল পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের অধীন সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি দেশের ২০৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনামূলক বিচার করে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, উৎপাদনের নিরিখে দেশের সেরা পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (West Bengal Power Development Corporation)। শুধু তাই নয়, প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম, অর্থাৎ সেরা প্রথম পাঁচের মধ্যে তিনটি স্থানই বাংলার দখলে।
সর্বভারতীয় তালিকার শীর্ষে বীরভূমের বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি আর পঞ্চম স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেও বাংলা দেশের মধ্যে সামগ্রিকভাবে সেরার সেরা হওয়ায় খুশি মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধেয় টুইট করে বলেছেন, ‘রাজ্যের জন্য খুবই গর্বের বিষয়।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, তৃতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েই বাংলায় কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়নকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন মমতা, তাঁর সেই কর্মসূচি রূপায়ণে বিদ্যুতের এই সাফল্য বিনিয়োগকারীদের বাড়তি উৎসাহ জোগাবে।
[আরও পড়ুন: এবার শুনানির সরাসরি সম্প্রচার দেখবেন সাধারণ মানুষ, যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাই কোর্টে]
সর্বভারতীয় মঞ্চে ফের বাংলার জয়জয়কারের দিনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে কৃতিত্ব দিয়ে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়ে দপ্তরের সমস্ত কর্মীদের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘ডব্লিউবিপিডিসিএল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নয়া মাইলফলক তৈরি করেছে। যা রাজ্যের কাছে অত্যন্ত গর্বের একটি বিষয়।’ এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর ও ক্ষেত্রকে পুরস্কৃত করলেও একসঙ্গে প্রথম পাঁচটির মধ্যে তিনটিই বাংলার সংস্থা হওয়া দক্ষতার বিচারে বিশাল সাফল্য বলে দাবি নবান্নের। ধারাবাহিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির বিচারে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (ডব্লিউবিপিডিসিএল) দেশের সেরা হতেই সার্বিক সাফল্যের সংবাদে আত্মহারা বিদ্যুৎকর্মীরাও।
স্বয়ং বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম পরিবার’-এর সকল সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিভাবকত্বে ডব্লিউবিপিডিসিএল পরিবারের সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই সাফল্য।’’ তবে দপ্তরের সমস্ত ইঞ্জিনিয়র ও কর্মীদের সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, বিভাগীয় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ধারাবাহিক নজরদারি এবং সার্বিক সমন্বয়ের জেরেই দেশের সেরা প্রথম পাঁচের তিনটি কেন্দ্রই বাংলার। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে দায়িত্বে আসার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে ধর্মঘট বা ‘ফাঁকিবাজি’ বন্ধ হওয়ায় যে উৎপাদন বেড়েছে তাও স্বীকার করছেন ইঞ্জিনিয়াররা। বস্তুত এই কারণেই ধারাবাহিক উৎপাদন ও জোগানের জন্যই ভারতের সেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্র হিসাবে বাংলাকে বেছে নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। কারণ এনটিপিসি বা ডিভিসির মতো কেন্দ্রীয় সরকারি এবং আদানি বা টাটা পাওয়ারের মতো প্রখ্যাত বেসরকারি সংস্থার চেয়েও উৎপাদনে অনেকটাই এগিয়ে বক্রেশ্বর বা সাঁওতালডিহি। বস্তুত এই কারণে ২০৫টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে বক্রেশ্বর প্রথম ও সাঁওতালডিহি দ্বিতীয় হলেও এনটিপিসির কোরবা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে এনটিপিসির বিন্ধ্যাচল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পঞ্চম স্থানটিও দখল করেছে সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ওড়িশা বিদ্যুৎ কর্পোরেশনকে পিছনে ফেলে বাংলার বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমই যে দেশের সেরার সেরা তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎমন্ত্রক।