সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর জি কর কাণ্ডে বারবার 'প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন' নিয়ে নির্যাতিতার বাবা-মাকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর সেই প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে সোশাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট করলেন প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের স্ত্রী নন্দিনী পাল মুখোপাধ্যায়। কুণাল ঘোষকে 'রূঢ়', 'অসংবেদনশীল' বলে আক্রমণ করেন তাপস জায়া। পালটা তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের খোঁচা, "ওঁর স্বামী ঘরে ছেলে ঢোকাতে চেয়েছিল। উনি এখন যদি অন্য কোনও রাগ আমার উপর মেটাতে চায়, সেটা ঠিক হচ্ছে না।"
ফেসবুকে নন্দিনীদেবী লেখেন, "কুণালবাবু, আমি ২০দিনের মধ্যে বাবা ও মা-কে হারিয়েছিলাম। একমাত্র সন্তান হয়েও একফোঁটা কাঁদতে পারিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তাই। কিন্তু, এই শোক আজও বয়ে বেরচ্ছি। সময় সে কষ্ট লাঘব তো করতেই পারেনি, বরং দিন দিন তা আরও বেড়েছে।" কুণাল ঘোষের উদ্দেশে তাঁর আরও বার্তা, "দয়া করে জানুন, কষ্ট-বেদনা ও তার প্রকাশ বড়ই ব্যক্তিগত। সবাই সবার সামনে দেখাতে পারে না। তাই তাঁরা আবেগহীন, ভাববেন না, দয়া করে।" নন্দিনীদেবীর আক্রমণ, "আপনার মন্তব্য এত অসংবেদনশীল ও রূঢ় কেন বলুন তো? গা পিত্তি জ্বলে যায়!" সঙ্গে প্রশ্ন, "দোষী কি একজন ? নাকি বাবা-মা কাঁদছেন না মানেই ওঁরা ওঁদের মেয়েকে মেরেছেন ? কী বলতে চাইছেন বলুন তো!"
তাপস জায়ার এই আক্রমণের পালটা প্রতিক্রিয়া দেন কুণাল ঘোষ। বলেন, "নন্দিনীদির সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। যদিও তাঁর হাজব্যান্ড ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব বলে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তবু নন্দিনীদির সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। আমি অভয়ার বাবা-মাকে কোথাও অসম্মান বা অশ্রদ্ধা করিনি। বারবার বলছি, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা রয়েছে। আমরাও প্রতিবাদী। কিন্তু তারা ঘনঘন বিবৃতি বদল করতে করতে যাচ্ছেন, অবস্থান বদল করতে-করতে যাচ্ছেন। অন্ধ তৃণমূলবিরোধীরা যা যা বলতে বলতে যাচ্ছেন, তাদের সেই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সেই কথাগুলোই তাঁরা বলছেন। এতে তাঁদের আবেগ, তাঁদের গুরুত্ব নষ্ট হচ্ছে। আমি সেই জায়গা থেকেই বলেছি।" 'আবেগহীন' আক্রমণের প্রেক্ষিতে কুণাল আরও একবার নন্দিনীদেবীর স্বামী তাপস পালের কুকথা প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দেন। সঙ্গে জানান, "পরামর্শ নিশ্চয়ই মনে রাখব।" পরিশেষে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের সংযোজন, "আমার প্রিয় কোনও বউদি যদি বলে থাকেন আমি রূঢ়, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি একদমই রূঢ় নই। এখন ব্যাপারটা কহিপে নিগাহে, কহিপে নিশানা। ওঁর যদি অন্য কোনও দুঃখ থাকে, অন্য কোনও রাগ থাকে, সেটা যদি আমার উপর দিয়ে চালানোর চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা ঠিক হচ্ছে না।"
উল্লেখ্য, তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির বিরোধিতা করার পরই কুণাল বলেছিলেন, “কোনও সুস্থ বাবা-মা, সুস্থ নাগরিকরা ভাবতে পারবে, ফাঁসি চাই না? এটা কী করে হতে পারে? আচরণ অত্যন্ত রহস্যজনক। কারা বা কী কী যুক্ত রয়েছে তার সবটা তদন্তের আওতায় আনা দরকার।” এই প্রতিক্রিয়া নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।
