কলহার মুখোপাধ্যায়: কলকাতা কি কাজের চাপে ন্যুব্জ? পেশাদারি সময় কি জীবনের আয়ুষ্কালে থাবা বসাচ্ছে? জীবন এবং জীবিকার সামঞ্জস্য রক্ষা করতে গিয়ে হতোদ্যম মহানগরবাসী? এতগুলো প্রশ্নের উত্তর একটাই-‘হ্যাঁ’। অর্থাৎ, কাজের চাপ হোক কাজের সময়, কলকাতাবাসী মানসিক স্বাস্থ্যে (Mental Health) কিন্তু থাবা বসাচ্ছে। যার ফলে মনের উপর বোঝা চাপছে, বাড়ছে অবক্ষয়। সর্বভারতীয় এক সংস্থার সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এল এমনই উদ্বেগের তথ্য।
ভারতের ১৩ টি শহরের বাসিন্দাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষা (Survey) চালায় সর্বভারতীয় এক সংস্থা। ১৩০০ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন সংস্থার কর্মীরা। নাগরিকদের মনোভাব জানার চেষ্টা করেন। তার ভিত্তিতে তৈরি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর দেখা গিয়েছে, কলকাতার বাসিন্দাদের মানসিক চাপ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। পেশাগত স্বার্থে ক্রমশ পরিবারের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। দেশের বাকি অংশের অবস্থা খুব একটা যে ভাল, তা নয়। কিন্তু মহানগরগুলোর মধ্যে তুলনায় কলকাতা বেশ কয়েকটি বিভাগে যথেষ্ট পিছিয়ে বলে দেখা যাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: বাতিল হতে পারে চারটি পরিচিত ওষুধ! করোনা চিকিৎসার পদ্ধতিতে বদলের ভাবনা কেন্দ্রের]
সমীক্ষায় কী উঠে আসছে? কলকাতার ৬৫ শতাংশ মানুষ কাজের চাপে পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। আর ৫৯% মানুষ নিজের শখ পূরণে ব্যর্থ শুধু পেশাদারি চাপ সামলাতে গিয়ে। এই অনুষঙ্গেই যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ব্যবহার। মোবাইল, ল্যাপটপের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে কলকাতার প্রায় ৬২% মানুষ মনে করেন, তাঁর সঙ্গী তাঁকে সময় দিতে পারছেন না, কিংবা চাইছেন না। যন্ত্র সেই পারস্পরিক সময়টুকু কেড়ে নিচ্ছে। তবে শুধু কি সঙ্গীর অনুযোগ? নিজের দিকেও কি খেয়াল রাখতে পারছেন মানুষ? সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, কলকাতার ৬৬% শতাংশ মানুষ শুধু কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ন্যূনতম শারীরিক যত্নটুকুও করার সময় পান না। ৪৩% মানুষ নিজেদের সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না শুধুমাত্র পেশাগত চাপে।
ভারতের বাকি বারোটা শহরের অবস্থা তথৈবচ। প্রায় ৫৬.৫% মানুষ নিজে মনে করেন পেশাগত চাপের কারণে উচ্চাশা পূরণে এবং ব্যক্তিগত শখ-আহ্লাদ মেটাতে ব্যর্থ তাঁরা। তবে কলকাতার তুলনায় দেশের মানুষ একটি ক্যাটাগরিতে একটু এগিয়ে। সেটি হল ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার। সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে, প্রায় ৭২% মানুষ মনে করেন যে মোবাইলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় তাঁর সঙ্গী তাঁকে কম সময় দেন। ৬৮.২% মানুষ মনে করেন, জীবন ও জীবিকার লড়াইয়ে জীবিকার শর্ত জীবনকে হারিয়ে দিয়েছে।
[আরও পড়ুন: বন্ধু গুগল ম্যাপ, ১১ বছর পর নিজের বাড়িতে ফিরল অপহৃত নাবালক]
সমীক্ষক সংস্থার চিফ অপারেটিং অফিসার অনিল মাথুর এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ”নিউ এজ টেকনোলজির ব্যবহার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি হচ্ছে না মানুষের। জীবন ও জীবিকার সঙ্গে অসামঞ্জস্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা কাটিয়ে উঠতে গেলে পরিবারের সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটাতে হবে মানুষকে।” বাড়ি, ঘরদোর এমন হয়ে উঠুক, যাতে সেখানে সময় কাটাতে পছন্দ করেন মানুষ। নিজেরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, এমনভাবেই গড়ে তোলা উচিত বাসস্থান। কাজের চাপ সামলে ঘরে ফেরার জন্য ‘Sweet Home’ আজ যে বড়ই জরুরি।