অর্ণব আইচ: বাড়ির মধ্যে আত্মঘাতী (Suicide) হোটেল ম্যানেজমেন্টের প্রাক্তন ছাত্রী। কলকাতার একটি পানশালায় চাকরিও করতেন তিনি। এই মৃত্যু ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। ঘরের মধ্যে থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে তিনি কাউকে দায়ী করে যাননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জেনেছে, পড়াশোনার জন্য টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। সেই কারণেই কি অবসাদ, না কি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ, তা খতিয়ে দেখছেন পুলিশ আধিকারিকরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবতীর নাম পায়েল সাহা (২৬)। তিনি দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানা এলাকার নস্করপাড়া রোডের বাসিন্দা। হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পাস করার পর তিনি ক্যামাক স্ট্রিটের একটি পানশালা ও রেস্তোঁরায় চাকরি পান। যদিও লকডাউনের পর থেকে পানশালা বন্ধই ছিল। রবিবার সকালে পায়েলের বাবা গৌতম সাহা ও মা শীলা সাহা তারাপীঠে রওনা হন। বাড়িতে ছিলেন পায়েল ও তাঁর বোন। রবিবার পানশালায় তাঁর ডিউটি থাকলেও তিনি যাননি, বাড়িতেই ছিলেন। বোন লক্ষ্য করেন, সকাল থেকেই দিদি মনমরা হয়ে রয়েছেন।
[আরও পড়ুন : চিকিৎসকের পিপিই পরতে সময় নষ্ট! টানা ৪০ মিনিট শ্বাসকষ্টের পর অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু রোগীর]
এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, মা-বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর বোনের সঙ্গে বেশি কথাও বলেননি। কেন ডিউটিতে যাননি, সেই সম্পর্কেও ভাল করে কিছু জানাননি। রাতে বোন প্রিয়াঙ্কাকে পায়েল বলেন, বাইরে একটি রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে আনতে। সেইমতো প্রিয়াঙ্কা রাত সাড়ে দশটা নাগাদ খাবার নিয়ে এসে দেখেন, বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তিনি বার বার কলিংবেল বাজানোর পরও তিনি দরজা খোলেননি। এর পর ওই তরুণী দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করেন। তাতেও সাড়া মেলেনি দিদির। তখন তিনি চিৎকার করতে থাকেন। প্রতিবেশীরা এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। দেখা যায়, সিলিং থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন পায়েল। পাশেই একটি সুইসাইড নোটে লেখা “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।” তাঁকে নামিয়ে এনে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, পায়েলের বাবা গৌতম সাহা পেশায় অটোচালক। বাড়িতে অভাবের মধ্যেও পায়েল হোটেল ম্যানেজেমন্ট পড়তেন। সেই কারণে অনেকের কাছে তিনি টাকাও ধার করেছিলেন। পানশালায় চাকরি করে ঋণের টাকা মেটাতে শুরু করেন। কিন্তু লকডাউন হয়ে যাওয়ায় রোজগার ছিল না। পানশালাও বন্ধ ছিল। সম্প্রতি পানশালা খুললেও মাথার উপর ঋণের চাপ ছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে অবসাদে ভুগছিলেন। এলাকা থেকে পাওয়া এই তথ্যগুলি পুলিশ যাচাই করছে। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ মিশুকে ছিলেন পায়েল। আত্মহত্যার কারণ জানতে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।