shono
Advertisement
West Bengal

ল‌্যানসেট-এ সরকারি হাসপাতালের ডোমদের নিয়ে গবেষণা, জরুরি স্বাস্থ‌্যকর্মীর সম্মান চান ‘বৈজু’রা

৩০জন ডোমের সাক্ষাৎকার নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন চারজন চিকিৎসক।
Published By: Suhrid DasPosted: 01:22 PM Mar 22, 2025Updated: 01:22 PM Mar 22, 2025

গৌতম ব্রহ্ম: অন্তর্জলী যাত্রা-র বৈজুর কথা মনে আছে? বৃদ্ধ স্বামীর মৃত্যুর অপেক্ষায় বসে থাকা ‘নতুন বউ’-এর সহমরণ ঠেকাতে জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন। কোভিডের সময়ও কিন্তু বাস্তবের বৈজুরা নিজেদের জীবনবাজি রেখে শত-সহস্র সংক্রমিত দেহ সৎকার করেছে। তাঁরা কাজ না করলে মৃতদেহের স্তূপ জমে ছড়িয়ে পড়ত ভয়ংকর সংক্রমণ। সেই পাহাড়প্রমাণ অবদানকে মাথায় রেখেই ডোমেদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন বাংলার চার চিকিৎসক।  ৩০ জন ডোমের সাক্ষাৎকার নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন চারজন চিকিৎসক। তুলে ধরেছিলেন ডোমেদের কষ্ট যন্ত্রণার কথা। অবশেষে সেই গবেষণা মান‌্যতা পেল আন্তর্জাতিক মঞ্চে। প্রকাশিত হল বিশ্ববরেণ‌্য মেডিক‌্যাল জার্নাল ল‌্যানসেট-এ। আগামী এপ্রিলে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হবে আর্টিকেলটি। তার আগে অনলাইনে ছাড়া হল প্রতিবেদনটি। যা অন্যতম মাইলস্টোন বলেই মনে করছে বাংলা তথা দেশের চিকিৎসমহল। 

Advertisement

কর্মক্ষেত্রে সেই অর্থে কোনও বৈষম্য না থাকলেও, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ডোমেদের হেনস্তার শিকার হওয়ার উদাহরণ ভূরি ভূরি। বাংলার ডোমেদের সেই মনের কথাই প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববরণ্যে মেডিক‌্যাল জার্নাল ল‌্যানসেটে। পাশাপাশি, বাংলার গবেষক-চিকিৎসকদের সঙ্গে সহমত হয়ে আন্তর্জাতিক মহল মেনে নিল সামাজিক ন‌্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে ‘ডেথ কেয়ার ওয়ার্কার’ বা ডোমেদের নামেও পরিবর্তন আনা উচিত। বলা উচিত ‘এসেনশিয়াল হেলথ ওয়ার্কার’। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের এই পেশায় জুড়ে দিয়ে বা়ড়ানো উচিত ডোমেদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা। গবেষক দলের প্রধান বিশিষ্ট ফরেননসিক বিশেষজ্ঞ অধ‌্যাপক সোমনাথ দাস বলেন, “কোভিডের সময় যে পরিষেবা ডোমেরা দিয়েছেন, তা হয়তো আমাদের অনেকের মনে নেই। কিন্তু এটা অনস্বীকার্য। যে, ওঁরা ঠিকমতো কাজ না করলে মৃতদেহের পাহাড় জমে ভয়ংকর সংক্রমণের মুখোমুখি হতে পারতাম আমরা। দিনরাত কাজ করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কোভিডের মৃতদের সৎকার করে গিয়েছেন এই মানুষগুলি।’’

আর জি কর, এনআরএস, মেদিনীপুর মেডিক‌্যাল কলেজ, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক‌্যাল কলেজ–চারটি সরকারি হাসপাতালের ডোমেদের সঙ্গেই কথা বলেছেন সোমনাথবাবুরা। সোমনাথবাবুর সঙ্গী ছিলেন আরও তিনজন। ডা. রিনা দাস, সহকারী অধ‌্যাপক তপোব্রত গুহরায় ও ডা. শাশ্বত সেন। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘প্রশ্নোত্তরের মাধ‌্যমে আমরা ডোমেদের কষ্ট-যন্ত্রণা বোঝার চেষ্টা করেছি। একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে তাঁদের সেরকম হেনস্তার মুখোমুখি হতে হয় না। বরং রাজ‌্য সরকার বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধার ব‌্যবস্থা করেছে।" তবে, সামাজিক ছঁুতমার্গ মাঝেমধ্যেই রক্তাক্ত করে বাস্তবের বৈজুদের। বিশেষ করে বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির সময় এক তৃতীয়াংশ ডোমই নিজেদের পেশার কথা গোপন রাখে বলে জানা গিয়েছে।

এছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া, একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার মতো কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রেও পরিচয় সামনে এলে সমস‌্যা হয়। এখানেই শেষ নয়, নন-ফরেনসিক ডাক্তারদের একটা বড় অংশ, যাঁরা ময়নাতদন্তের কাজ করেন, তাঁরা নিচু চোখে দেখেন ডোমেদের। এই বিষয়টি যথেষ্ট পীড়াদায়ক। অথচ বেশ কিছু ডোম রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে অনেক তরুণ চিকিৎসক বা অটোপসি সার্জেনকে গাইড করেন। তা সত্ত্বেও যথাযথ স্বীকৃতি অমিল। এই কারণে ডোমেদের ছেলেমেয়েরা চাকরি নিশ্চিত জেনেও এই পেশায় আসতে চাইছেন না। গবেষকদলটির মনে হয়েছে, ডোম শব্দবন্ধটি বদলে তার পরিবর্তে ‘এসেন্সিয়াল হেলথ ওয়ার্কার’ শব্দবন্ধটি ব‌্যবহার করা অনেকটাই সম্মানজনক হতে পারে। সেই দাবি রাজ‌্য সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে রাখবেন সোমনাথবাবুরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • অন্তর্জলী যাত্রা-র বৈজুর কথা মনে আছে? বৃদ্ধ স্বামীর মৃত্যুর অপেক্ষায় বসে থাকা ‘নতুন বউ’-এর সহমরণ ঠেকাতে জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন।
  • কোভিডের সময়ও কিন্তু বাস্তবের বৈজুরা নিজেদের জীবনবাজি রেখে শত-সহস্র সংক্রমিত দেহ সৎকার করেছে।
  • তাঁরা কাজ না করলে মৃতদেহের স্তূপ জমে ছড়িয়ে পড়ত ভয়ংকর সংক্রমণ। সেই পাহাড়প্রমাণ অবদানকে মাথায় রেখেই ডোমেদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন বাংলার চার চিকিৎসক।
Advertisement