নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বিশ্বভারতীতে অমর্ত্য সেনের জমি বিবাদের নিষ্পত্তি হল না বুধবারও। বিশ্বভারতী ও অমর্ত্য সেন – দু’পক্ষের আইনজীবী তাঁদের স্বপক্ষে দাবি পেশ করে যুক্তি খাড়া করেন। বোলপুর ভূমি আধিকারিক জানান, দু’পক্ষের শুনানির বিষয় তিনি উচ্চপর্যায়ে জানাবেন। তাদের সিদ্ধান্ত দু’পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এতদিন শান্তিনিকেতনে ১৩ শতক জায়গা অমর্ত্য সেন জবরদখল করে আছে বলে দাবি করে বিশ্বভারতী। এবার বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস জমি দখলের ক্ষেত্রে অমর্ত্য সেনের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনকে দখলকারী হিসাবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “বিশ্বভারতী ৯৯ বছরের জন্য ১.২৫ শতক জমি লিজ হিসাবে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁর বাবা চালাকি করে আর এস রেকর্ড ১.৩৮ শতক অর্থাৎ ১৩ শতক বাড়তি জমির রেকর্ড করান। তারই ভিত্তিতে অমর্ত্য সেন মিথ্যা দাবি করে রেকর্ডের দাবি করছেন। যা অযৌক্তিক।” যদিও অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, “প্রশাসন শুধু জটিলতা বাড়াচ্ছে। অমর্ত্য সেনের বাবার নামে যে রেকর্ড সেই রেকর্ড শুধু অমর্ত্য সেনের নামে করে দেবে। তাহলেই ঝামেলা চুকে যাবে।”
[আরও পড়ুন: নামকরা রিসর্টে পরিকল্পনার পর শান্তিনিকেতনে আদিবাসী তরুণীকে ‘গণধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ২]
উল্লেখ্য, একই দাবি শান্তিনিকেতনে এসে অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে বলে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী অমর্ত্য সেনের দাবির স্বপক্ষে তিনি সরকারী জমির রেকর্ড জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়ে যান। যার উপর সিলমোহর দিয়ে পরেরদিন প্রশাসনিক কর্তারা অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দিয়ে আসেন। জেলা প্রশাসন তাহলে কীসের ভিত্তিতে, কাদের চাপে মিউটেশনে আটকে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অমর্ত্য সেনের আইনজীবীরা। কিন্তু বুধবার বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার অশোক মাহাতো জানান, “বিশ্বভারতীর ইতিহাসে গত ২৫ বছরে কাউকে দ্বিতীয়বার জমি লিজ দেওয়া হয়নি। কিন্তু যেহেতু জগতবিখ্যাত অমর্ত্য সেন, তাই তাঁকে বিশেষ সন্মান দিয়ে বিশ্বভারতী উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা সংসদ এই জমি তাঁর নামে দিয়েছেন। এবং অমর্ত্য সেনের আবেদন মোতাবেক ২০০৬ সালে ১.২৫ শতক জমি তাঁর নামে মিউটেশন করে দেওয়া হয়েছে।”
তবে বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্বভারতীর স্বার্থের কথা ভেবেই অমর্ত্য সেনকে দ্বিতীয়বার এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অশোক মাহাতো জানান, “বিশ্বভারতীতে বহু জমি এভাবে দখল হয়ে আছে। অমর্ত্য সেনের নাম কোনওভাবে প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আমরা তা করতে চাইনি।” বিশ্বভারতী সূত্রে জানানো হয়, একজন শিল্পপতির জমি উদ্ধার করে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। স্বর্গীয় অমিয় কুমার দাসগুপ্তের জায়গায় গড়ে উঠছে পরিকল্পনা বিষয়ক কেন্দ্র। নীতি আয়োগ সেখানে পাঁচ কোটি টাকার উপর তহবিল দিয়েছে। ব্যারিস্টার সেনগুপ্ত জমি দান করে দিয়েছেন। অশোক মাহাতো জানান, “শুধু অমর্ত্য সেন নন। পূর্ণদাস বাউলের জমি আমরা উদ্ধার করেছি। ৫০০ জনকে নোটিস দিয়েছিলাম। ১০০টি জায়গা উদ্ধার হয়েছে।”