অভিরূপ দাস: জরায়ুতে আস্ত একটা টর্চ! কয়েক মিনিট, বা কয়েক ঘন্টার জন্য নয়। টানা আট বছর প্রজনন অঙ্গে টর্চ নিয়েই কাটিয়েছেন বছর তেইশের তরুণী। যা তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল মৃত্যুর দোরগোড়ায়। নীলরতন সরকার মেডিক্যালে মৃত্যুঞ্জয়ী অস্ত্রোপচারে জীবন বাঁচে। তবে বাদ দিতে হয়েছে জরায়ু। সদ্য বিবাহিত ওই তরুণী আর কোনওদিন মা হতে পারবেন না।
ঘটনাটিকে খুব বড় একটা শিক্ষা হিসেবে তুলে ধরছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের বক্তব্য, যৌন উত্তেজনা মেটাতে অস্বাভাবিক উপায় অবলম্বন করলে কতটা খেসারত দিতে হতে পারে, এটা তার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। বস্তুত এনআরএস গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুণা বলের কাছে মেয়েটি পরিষ্কার স্বীকার করেছেন, যৌন উত্তেজনা পূরণ করতেই যোনিপথে এটা সেটা ঢোকানোর অভ্যেস ছিল তাঁর। শেষমেশ একদিন পুঁচকে একটা টর্চ ঢোকাতে গিয়েই বিপত্তি। হাত ফসকে তা ভিতরে ঢুকে যায়। লজ্জায় বাড়ির কাউকে বলতে পারেনি কিশোরী।
[আরও পড়ুন: ‘ব্যাপক ভোট হবে’, জেলে থেকেও পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী অনুব্রত]
তখন তার বয়স মাত্র পনেরো। বয়ঃসন্ধি কানায় কানায়। তারপর কেটে গিয়েছে আট আটটা বছর। এর মধ্যে বিয়েও হয়েছে। এদিকে শরীরের মধ্যে ঢুকে থাকা আস্ত টর্চ বাঁধিয়েছে ঋতুস্রাবের মারাত্মক সমস্যা, জরায়ু দিয়ে আসতে শুরু করে দলা দলা পায়খানা। প্রাণঘাতী শারীরিক জটিলতা নিয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগে আসেন ওই তরুণী। এনআরএসের অধ্যাপক ডা. রুণা বলের কথায়, ‘‘রোগীকে পরীক্ষা করতে গিয়ে চমকে যাই। জরায়ুর সঙ্গে পায়ুদ্বার জুড়ে গিয়েছে। যে কারণেই জরায়ু দিয়ে বেরিয়ে আসছিল পায়খানা।’’
বিস্ময়ের তখনও বাকি, যখন জানা যায়, ৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৩ সেন্টিমিটার চওড়া টর্চ ঢুকে রয়েছে জরায়ুতে। রোগীর আল্ট্রা সোনোগ্রাফি, সিটিস্ক্যান করা হয়। হয় এমআরআইও। চিকিৎসকরা দেখেন ভ্যাজাইনাটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রুণা বল, প্লাস্টিক সার্জন ডা. অমিত রায় প্রায় চার ঘন্টার অস্ত্রোপচার করে নতুন জীবন দিয়েছেন তরুণীকে। ওটিতে সাহায্য করেছেন ডা. সৌরদীপ দত্ত। জটিলতর এই অপারেশনে অ্যানাস্থেশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন ডা. মানব সরকার, ডা. দেবানন্দ। ডা. রুণা বল জানিয়েছেন, সদ্য বিয়ে হয়েছে। হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও জরায়ুটা বাঁচানো গেল না। টর্চটা ইউটেরাসের একদম ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল।
এনআরএসের চিকিৎসকরা বলছেন, এমন ঘটনার নেপথ্যে আর্থ সামাজিক অবনয়ন। সঠিক শিক্ষার অভাব। এই মুহূর্তে কিশোর কিশোরীদের হাতে হাতে স্মার্টফোন। যার জেরেই কি এমন কাণ্ড? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নীশান্তদেব ঘটকের কথায়, ছোটরা অপরিণত। তারা স্মার্টফোনে যা দেখে সেটাকেই অনুকরণ করতে চেষ্টা করে। কে জানে এক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছিল কিনা। এই মুহূর্তে তরুণী শারীরিকভাবে স্থিতিশীল হলেও বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। ডা. রুণা বল জানিয়েছেন, আরও একবছর লাগবে মেয়েটির সম্পূর্ণ সুস্থ হতে। দুটো অস্ত্রোপচার হবে আগামী দিনে।