প্রোটিন, ফ্যাটের মতোই গ্লুটেন (Gluten) মেপে ডায়েট করলে তবেই কিন্তু সুস্থ থাকা সম্ভব। কী এই বিশেষ উপাদান? গ্লুটেন কেন ক্ষতিকারণ তা বিশ্লেষণ করলেন কনসালট্যান্ট ডায়েটিশিয়ান অরিজিৎ দে।
আজকাল বিভিন্ন অসুখ থেকে নিরাময় পেতে চিকিৎসকরা জোর দিচ্ছেন গ্লুটেন ফ্রি ডায়েটে। কিন্তু কী এই বিশেষ বস্তু সে ব্যাপারে অনেকেই জানেন না।
গ্লুটেন হল একধরনের প্রোটিন যা প্রাকৃতিকভাবে শস্যদানার মধ্যে থাকে। সাধারণভাবে গ্লুটেন বলতে গমজাত প্রোটিনকেই বোঝায়। কিন্তু ডাক্তারি শাস্ত্রে গ্লুটেন হল প্রোলামিন ও গ্লুটেলিন প্রোটিন যা গম ছাড়াও অন্যান্য শস্যদানায় থাকতে পারে। এই প্রোটিন যাঁদের ক্ষেত্রে সহজপাচ্য হয় না তাঁরাই সিলিয়াক ডিজিজের শিকার হন। এর পোশাকি নাম গ্লুটেন এনটেরোপ্যাথি (Gluten-Sensitive Enteropathy)।
কতটা বিপজ্জনক?
সিলিয়াক ডিজিজ (Celiac disease) একধরনের জিনগত অটোইমিউন ব্যাধি যাতে পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোগীর দেহে অপাচ্য গ্লুটেনকে ধ্বংস করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যা পরিপাকতন্ত্রে প্রদাহের সৃষ্টি করে। এই ডিজিজে ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্ষতি হয়।
এর থেকে গ্যাস্ট্রোইনটেনস্টিনালে জ্বালাভাব হয়।
গ্লুটেন অ্যাটাক্সিয়া হতে পারে। এটি একটি বিরল স্নায়বিক অটোইমিউন ডিজিড। গ্লুটেনের প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কে আক্রমণ করতে পারে। ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
[আরও পড়ুন: Wrestlers Protest: এখনই নয় পদক বিসর্জন, চোখে জল, কেন্দ্রকে পাঁচদিনের সময়সীমা সাক্ষী-বজরংদের]
বেশি হলে:
কারও গ্লুটেনে সমস্যা আছে কি না তা বোঝার বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। যেমন – ডায়েরিয়া, পেটফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি, বদহজম, অম্বল, ওজন হ্রাস, রক্তাল্পতা, হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, র্যাশ বা ফুসকুড়ি, দাঁতের এনামেল নষ্ট হওয়া, মাথা যন্ত্রণা, মুখে ঘা। গ্লুটেন বেড়ে গেলে বা সিলিয়াক ডিজিজ বেশ কিছু রোগকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। উপসর্গের আড়ালে যে যে সমস্যা লুকিয়ে থাকে তা হল,
হিমোগ্লোবিন কমে গিয়ে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে শোষণ না হওয়ার ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়, ফলে
অকালেই হাড়ের জোর কমে যাওয়া বা গাঁটে ব্যথা হতে পারে।
গ্লুটেন জাতীয় প্রোটিন হজম হয় না বলে তার অভাবে পা ফুলতে পারে। পেটে জল জমা বা খিঁচুনিওহতে পারে।
লিভার বড় হয়ে যেতে পারে। মুখে বারবার ঘা হতে পারে।
মহিলাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে, বন্ধ্যত্ব আসতে পারে।
শিশুরা হুইট অ্যালার্জির শিকার হয়। শিশুদের মধ্যে ঝিমুনিভাব প্রকাশ পায়। যার পোশাকি নাম ‘ব্রেন ফগ’। প্লীহা শুকিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
বয়স্কদের শরীরে গ্লুটেন বেশি হলে তার ফলে খাদ্যানালিতে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঙ্গে হাড়ের জোর কমে, ওজন হ্রাস পায়, পুষ্টিগত বিভিন্ন উপাদান যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটে দ্রাব্য ভিটামিন যেমন (এ, ডি, ই, কে) শোষণে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
নিয়ন্ত্রণে কীভাবে?
সিলিয়াক ডিজিজ ছাড়াও গ্লুটেন ইনটলারেন্স এবং গ্লুটেন সেনসিটিভিটি হয়। গ্লুটেন মৌলিকভাবে যত না সমস্যার সৃষ্টি করে তার চেয়ে বেশি করে যখন গ্লুটেন খাবারের সোডিয়াম ও চিনি ইত্যাদির সঙ্গে সহযোজিত হয়।
আটা ও ময়দা গ্লুটেন যুক্ত হয়। তাই এর ব্যবহার কমাতে হবে।
ব্রাউন রাইস বা কুইনোয়া জাতীয় খাদ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
ফাইবারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
গ্লুটেনমুক্ত হলেও সেই খাদ্য অন্যান্য উপাদান সমৃদ্ধ কি না দেখে নিন।
রান্নায় অলিভ অয়েল, সয়াবিন তেল বা সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করতে হবে।
যেগুলো বাদ:
গমের রুটি, সুজি, পাউরুটি, বিস্কুট, সিমাই, বার্লি, নুডল, পাস্তা, কেক, কুকিস, প্যাটিস, সয়াসস, বিয়ার, জোয়ার, বাজরা গ্লুটেন সমৃদ্ধি। এগুলি কম খেতে হবে।