shono
Advertisement

হাঁটাচলার ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে মায়োসাইটিস, সাবধান থাকুন, পরামর্শ বিশেষজ্ঞর

এই সমস্যা হঠাৎ করেই কয়েকদিনের মধ্যে শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে।
Posted: 05:11 PM Jan 10, 2024Updated: 05:11 PM Jan 10, 2024

হঠাৎ করে হাতে-পায়ে অক্ষমতা দেখা দিলে চিন্তার আছে বই কী! এমন যদি হয়, ধীরে ধীরে অঙ্গ সঞ্চালন বিকল হচ্ছে, প্রায় পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী, তাহলে বুঝতে হবে আড়ালে বড়সড় অসুখই আছে। মায়োসাইটিস এমনই এক অসুখ। অনেক কারণে হতে পারে। তা নিয়েই কথা বললেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. চন্দ্রমৌলি মুখোপাধ্যায়। শুনলেন জিনিয়া সরকার।

Advertisement

কিছুদিন খবর প্রকাশ্যে এসেছিল।  অসুস্থ ‘ফ্যামিলি ম্যান ২’ -র রাজি তথা জনপ্রিয় দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু। জানা যায়, মায়োসাইটিস নামে এক অটো ইমিউন রোগে ভুগছেন তিনি। সেই কারণে বেশ কিছু ছবির কাজও ছেড়েছেন। এখনও চলছে চিকিৎসা।
এটি এমনই একটি অসুখ যা একজনকে পুরোপুরি শয্যাশায়ী করে দেয়। হাঁটাচলার ক্ষমতা একেবারেই চলে যায়। বলা যায়, প্রায় পঙ্গু করে দেয়। এদেশের এই অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাংশ। মোট জনসংখ্যার নিরিখে এটা মোটেই কম কিছু নয়। বলা ভাল, প্রতি এক লাখে প্রায় ৫-২২ জন এই অটোইমিউন ডিজিজে আক্রান্ত হন।

ঠিক কী হয়?
এই রোগে শরীরের মাসল বা পেশিতে ইনফ্লেমেশন অর্থাৎ প্রদাহ শুরু হয়। কখনও কখনও সেটা পেশিতে সংক্রমণও হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে ইনফিল্টারেশন বা কিছুর অনুপ্রবেশেও শরীরে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এটি একটি অটোইমিউন ডিজিজ।
এই অসুখে পেশি একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে, জ্বর আসে, রোগীর হাঁটতে অসুবিধা শুরু হয়। ধীরে ধীরে রোগী একেবারেই হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পঙ্গু হয়ে পুরো শয্যাশায়ী হয়ে যায়।
এই সমস্যা হঠাৎ করেই কয়েকদিনের মধ্যে একজনের শরীরে প্রভাব ফেলে। মানুষটা হেঁটেচলে দিব্যি বেড়াচ্ছে, দেখা যাবে মাস দুয়েকের মধ্যে রোগীর শরীরে বাসা বাঁধল অসুখটি। রোগী একেবারে বিছানায় পড়ে যায়।

প্রকার প্রবচন
এই রোগের আবার নানা প্রকার রয়েছে। যেমন, পলিমায়োসাইটিস, ডার্মাটোমায়োসাইটিস।
পলি মায়োসাইটিসে সাধারণত পেশি যুক্ত থাকে। শরীরে বিভিন্ন স্থানের পেশি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। ঘাড়, কাঁধ, থাই ইত্যাদির পেশিতে বেশি প্রভাব পরে।
ডার্মাটোমায়োসইটিসে সাধারণত ত্বকের সমস্যা থাকে তার সঙ্গে পেশি দুর্বলতা দেখা দেয়।

[আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট মানেই ফুসফুসজনিত নয়, এই সমস্যা নাকেরও হতে পারে, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞর]

কারণ এমন
ইনফ্লেমেটরি অটোইমিউন রেসপন্স – এক্ষেত্রে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই শরীরের পেশির উপর অ্যাটাক করে। শরীরের অ্যান্টিবডি- অ্যান্টিজেন রিঅ্যাকশন হয়ে এই সমস্যা শুরু হয়। ফলে ক্রনিক প্রদাহ শুরু হয় পেশিতে। পলিমায়োসাইটিস, ডার্মাটোমায়োসইটিস এই কারণেই হয়।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া – কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলি খেলে তার প্রভাবে পেশিতে প্রদাহ শুরু হতে পারে।
ট্রমা বা ইনজুরি – শারীরিক ট্রমা বা আঘাত থেকে পেশিতে মায়োসাইটিস হতে পারে। এই ধরনের মায়োসাইটিসের চিকিৎসা আলাদা।
ক্যানসার – মারণরোগে আক্রান্ত হলে তার প্রভাবে শরীরের অটোইমিউন রিঅ্যাকশন বেড়ে যায়। ফলত পেশিতে প্রদাহ তৈরি হয়। একে বলা হয় প্যারানিওপ্লাস্টি সিনড্রোম। ফলে হাঁটাচলায় সমস্যা শুরু হয়।
এছাড়া বয়সজনিত কারণেও বয়সকালে মায়োসাইটিস হতে পারে। অনেক সময় কোনও সিফুড খেয়ে তা থেকে পয়জনিং হয়ে এমন হতে পারে। অথবা কারও কারও ক্ষেত্রে কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া থেকে সংক্রমণ হয়েও এমন হয়।


যে লক্ষণ সাবধান
পেশির দুর্বলতা – এই অসুখ শরীরের বিভিন্ন পেশিতে প্রভাব ফেলে। যার জেরে নিত্য কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে।
পেশিতে ব্যথা – অসহ্য পেশিতে ব্যথা হয়।
পেশি শিথিল হয়ে যাওয়া – এক্ষেত্রে পেশি শিথিল হয়ে পড়ে। তাই কোনও অঙ্গই নাড়ানো যায় না।
ত্বকে র‌্যাশ – এক্ষেত্রে স্কিনে লাল লাল র‌্যাশ বের হয়। যা খুবই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায়। এক্ষেত্রে চোখের উপরের পাতায় র‌্যাশ বেরতে পারে। নীলচে একটা প্রদাহ তৈরি হয়। এতে হিলিওট্রোপ র‌্যাশ বলে।
জয়েন্ট পেন – এই অসুখ করলে শরীরের গাঁটে গাঁটেও কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যথা হয়। অনেকেই তাই আর্থ্রাইটিস ভেবে ভুল করেন।
ক্লান্তি – পেশি দুর্বল হলে, ব্যথা শুরু হলে তা থেকে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে রোজের কাজ ব্যাহত হয়।
এই সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে রোগীর হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায় সঙ্গে নিশ্বাসের সমস্যা শুরু হয়। এতটাই সমস্যা হয় যে ভেন্টিলেশনের দরকার হয়।

রোগ নির্ণয়ে
এই রোগ নির্ণয় করতে গেলে রোগীর পেশিতে বায়োপসি করার দরকার পড়ে। এছাড়া কিছু রক্ত পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করার দরকার পড়ে। ইমেজিং টেস্ট ও ইলোকট্রোমায়োগ্রাফি করেও রোগ নির্ণয় করা হয়। তবে কখন কার কী টেস্ট দরকার সেটা চিকিৎসক
রোগীর অবস্থা বুঝে নির্দেশ দেন।

চিকিৎসায় মুক্তি সম্ভব?
এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য রোগীকে স্টেরয়েড, ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও বায়োলজিক্যালস দেওয়া হয়। যা শরীরের অতিরিক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কন্ট্রোল করে ও নিউরোলজিক্যাল ফাংশন ঠিক করে। এই সমস্যা হলে সাধারণত মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে নিউরোলজিস্ট ও রিউমাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া দরকার। সাধারণত এই অসুখের দীর্ঘ চিকিৎসা দরকার। ওষুধের রোগ সেরে যায়। তবে সময় লাগে। রোগ ধীরে ধীরে ঠিক হতে থাকলে তখন ফিজিওথেরাপি করার দরকার পড়ে। ফিজিওথেরাপি করে আস্তে আস্তে পেশির ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। আর পরোক্ষভাবে ডায়েটেরও ভূমিকা রয়েছে। এই অসুখে হাই প্রোটিন ডায়েট অনেক বেশি কার্যকর। এটাও মাথায় রাখা দরকার।

[আরও পড়ুন: সঙ্গীর যৌন আকাঙ্ক্ষা কম? এই ভিটামিনের অভাব নয়তো?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement