স্টাফ রিপোর্টার: কোভিডের পর জ্বর যেন তাড়া করে ফিরছে। ক্যালেন্ডারে এমন কোনও মাস নেই, যখন জ্বর-হাঁচি-কাশি-সর্দির দেখা মেলেনি। বস্তুত, জ্বরে জেরবার বাংলা। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব রাজ্য এখন জ্বর-সর্দি-কাশিতে কাহিল। প্রতি দশজনের মধ্যে ৪-৫ জন আক্রান্ত H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জার বিশেষ সাব টাইপে।
ডেঙ্গুর (Dengue) আতঙ্ক এখনও দগদগে। তার মধ্যেই H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসের একটি সাবটাইপে কলকাতার ৪০ শতাংশ এবং মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের ৭০ শতাংশ রোগী আক্রান্ত–এমনটাই নথিভুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরে। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, বেশিরভাগ রাজ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে জ্বরের দাপটে। তবে ICMR এই জ্বরকে ভাইরাল ফিভার চিহ্নিত করলেও আক্রান্তকে সাবধানে থাকতে বলছে।
ICMR-এর বিশিষ্ট গবেষক ডা. সমীরণ পণ্ডার কথায়, ‘‘তিন থেকে পাঁচদিনের জ্বর। গাঁটে-গাঁটে ব্যথা। নাকে জল ঝরে। মূলত হাঁচি-কাশি থেকে সংক্রমণ ছড়ায়। জ্বর কমলেও শরীর অত্যন্ত কাহিল হয়ে পড়ে। প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে রোগীকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়।’’ রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অন্য ভাইরাসের থেকে H3N2 ভাইরাসের সাবটাইপ অনেক বেশি ক্ষতিকর। ICMR সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বর নিয়ে এসওপি প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: গ্যাস-অম্বলের নিয়মিত সমস্যা ক্যানসারের লক্ষণ নয় তো? গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন বিশেষজ্ঞ]
ভাইরাসের এই সাবটাইপের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল দ্রুত সংক্রমণ। বাড়ির একজনও যদি সংক্রমিত হয় তো সেই পরিবারের প্রায় সবাই জ্বর-সর্দির কবলে পড়বে। ঠিক এমনভাবে বাড়ি থেকে পাশের বাড়ি আর পাশের বাড়ি থেকে গোটা পাড়া হয়ে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে অদৃশ্য শত্রু।
এসএসকেএম হাসপাতালের অধ্যাপক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. যোগীরাজ রায়ের কথায়, ‘‘বলা হচ্ছে মরশুমি জ্বর। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ভাইরাল ফিভারের মধ্যেই ডেঙ্গু লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই জ্বর হলে ভাইরাল ফিভার হলেও একবার অন্তত ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। শত্রুর শেষ রাখা উচিত নয়। অন্যথায় ভাইরাল ফিভারে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে শিশু ও বৃদ্ধরা। বিশেষ করে বাড়ির ছেলে-মেয়ের যদি জ্বর-সর্দি হয় তবে তাকে স্কুলে পাঠানো উচিত নয়।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘হঠাৎ করে গরম আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে এতদিন যেসব ভাইরাস সুপ্ত ছিল সেগুলি এবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গলার মধ্যে বা শ্বাসতন্ত্রের মধ্যে যে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে তা কমে যায়। এই কারণে ভাইরাস সহজেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। শীতকালের শুরুতেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, অ্যাডিনো ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসেটিয়াল ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হয়। শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাগে সংক্রমণ ঘটায়। তাই জ্বর কিছুতেই কমতে চায় না।’’ অনির্বাণের কথায়, ঠান্ডা যত বাড়বে, ততই এই ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ঢুকতে হবে। ছোট ও বয়স্কদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।