রোগা মানেই যে একজন সুস্থ তা কিন্তু নয়। অতিরিক্ত রোগা হলে অসুখের ঝুঁকি বাড়ে আবার অসুখের কারণেও রোগা হন অনেকেই। কখন রোগা রোগের ইঙ্গিত জানালেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়।
মোটা হওয়ার পিছনে যেমন কারণ রয়েছে, রোগা হওয়ার পিছনেও কারণ রয়েছে। প্রথমত, বংশগত বা জেনেটিক কারণ তো রয়েছেই। দেখা যায়, যে পরিবারে বাবা-মা রোগা তাঁদের সন্তানও রোগা হয়। এরা প্রচুর খেলেও মোটা হতে পারে না। এর পিছনে হরমোন সংক্রান্ত গতিপ্রকৃতি দায়ী। যেসব হরমোন আমাদের ওজন বাড়ায় যেমন, সোমাটোট্রপিক হরমোন, অ্যাড্রিনালিন, কর্টিকোস্টেরয়েড, ইনসুলিন ইত্যাদি হরমোনের তারতম্যের কারণে বংশগত কারণে অনেকেই অতিরিক্ত রোগা হয়।
যাঁদের বংশগত কারণে গঠন রোগা রোগা, তাঁরা রোগা থাকলে অসুবিধা নেই। কিন্তু যাঁদের গঠন মোটাসোটা তারা যদি অতিরিক্ত রোগা হয় তাহলে কিন্তু এই রোগা হওয়াটাই অনেক রোগ ডেকে আনতে পারে। যেমন অতিরিক্ত মোটা হওয়া একটা সমস্যা, তেমনই অতিরিক্ত রোগা হওয়াও সমস্যা।
জোর করে রোগা হলে কী কী হতে পারে?
সাধারণত যাদের বিএমআই ১৮.৫-এর কম তাদের আমরা রোগা বলব। বেশি রোগা হলে বেশ কিছ সমস্যা হতে পারে।
- প্রথমত, ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে ত্বকে সংক্রমণ দেখা দেয়। চামড়ার তলার ফ্যাট কম থাকায় ওয়েদার ইনটলারেন্স হয়। অর্থাৎ গরম কিংবা ঠান্ডা কিছুই বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না। সামান্য ঠান্ডাতেই কাবু হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রকম সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে। দাঁতের সমস্যাও হয়। শরীরে ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়ামের সমস্যা হয়।
- দ্বিতীয়ত, পেটজনিত নানা সমস্যায় ভোগান্তি হয়। এদের হজমশক্তি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।
- তৃতীয়ত, শরীরে কোষ বিভাজন ঠিক মতো হয় না বলে নানা রকমের সমস্যা হয়। যার ফলে মুখে, জিভে ঘা হতে পারে, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র ও পাকস্থলীর বিভিন্ন স্তরে ঘা হতে পারে।
- চতুর্থত, খুব রোগা যারা তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের নানা সমস্যা হতে পারে। ফুসফুস খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।
- পঞ্চমত, অতিরিক্ত ওজন কম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। তাই রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
এছাড়াও যাদের ওজন কম হয় তাদের অস্টিওস্পোরোসিস, বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।
[আরও পড়ুন: সাবধান! ডেঙ্গুর সঙ্গেই জাঁকিয়ে বসেছে স্ক্রাব টাইফাস, আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার]
কিছু অসুখও রোগা হওয়ার জন্য দায়ী –
জন্মগত কিছু অসুখের কারণে অনেকেরই ওজন ঠিকমতো বাড়ে না। কী কী রোগের কারণে এমন হতে পারে?
- জন্মগত ত্রুটি থাকলে খাবার ঠিকমতো পরিপাক হতে পারে না, খাবার হজম হয় না, পুষ্টি মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। ফলে ওজন কম হয়। এছাড়া হর্সপ্রাং ডিজিজ, ম্যালঅ্যাবজর্বসন সিন্ড্রোম ইত্যাদি জন্মগত অসুখের কারণেও রোগা হওয়ার প্রবণতা থাকে।
- সংক্রমণের কারণেও এমন হতে পারে। টিউবারকিউলোসিস ইত্যাদি কারণে খাবার ঠিকমতো শরীরে দ্রবীভূত হতে পারে না। ফলে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে ওজন কম থাকে।
- ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলেও ওজন কম হয়।
এছাড়া হার্টের রোগ, শরীরে কোনও ক্যানসার বাসা বাঁধলে অনেকেই রোগা হতে পারে।এইচআইভি আক্রান্ত হলেও দ্রুত ওজন কমতে পারে।
দ্রুত ওজন কমলে চিকিৎসকের কাছে যান –
হঠাৎ করে ওজন কমলে একেবারেই সেটা সাধারণ ব্যাপার ভাববেন না। এর পিছনে বিভিন্ন অসুখ দায়ী হতে পারে।
- যদি রোগা হওয়ার কারণ কোনও অসুখ না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ডায়েট ঠিকমতো করা জরুরি।
- ধীরে ধীরে ডায়েটে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেমন- একটু মিষ্টি খেতে হবে, প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
- যাঁরা নিরামিষ খান তাঁদের ডায়েটে ডাল, সোয়াবিন, পনির রাখতে হবে। এতে পেশির শক্তি বৃদ্ধি পায়। শরীরে এনার্জি বাড়ে। ধীরে ধীরে ওজনও স্বাভাবিক হয়।
- রোগাদের চেহারা ঠিক করার জন্যও কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করতে হবে।
এই ধারণা ভুল যে রোগাদের ব্যায়াম করলে ওজন আরও কমবে। তবে এক্সপার্টের পরামর্শ মতো সব করতে হবে। আর কখনওই কোনও ওষুধ খেয়ে মোটা হওয়ার চেষ্টা করা চলবে না।