এদেশে মহিলাদের শারীরিক সমস্যার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জরায়ুমুখের ক্যানসার (Cervical Cancer)। মৃত্যুহারও বেশি। কারণ দেরিতে রোগ নির্ণয় হওয়া। উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে, তবু প্রাণসংশয় ডেকে আনে। দায়ী মহিলারাই। সচেতনতার মাসে আরও বেশি সচেতন হোন। কোন কোন ব্যাপারে জোর দিতে হবে, বললেন মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. তন্ময় মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য এই প্রতিবেদনে তুলে ধরলেন জিনিয়া সরকার।
মহিলাদের শরীরে যে যে ক্যানসারের প্রবণতা সর্বাধিক, তার মধ্যে একটি হচ্ছে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে উন্নত দেশগুলির তুলনায় এদেশে সার্ভাইক্যাল ক্যানসারে মৃত্যুহারও বেশি। সমীক্ষায় মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সারা বিশ্বে প্রতি বছর নতুন করে সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ। আর প্রতি বছর ক্যানসারে মৃত্যুহার প্রায় ৩.৪ লাখ। এটি মহিলাদের মধ্যে চতুর্থতম ক্যানসার। আর এদেশের নিরিখে, এটি মহিলাদের মধ্যে দ্বিতীয়তম ক্যানসার। এদেশে প্রতি একলাখে ১৪ জন করে নতুন সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের রোগী প্রতিবছর চিকিৎসা করাতে আসেন, আর মৃত্যুহার লাখে ৯ জন। এদেশের জনসংখ্যার নিরিখে সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়।
কারণ কী?
সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের জন্য মূলত দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এই ভাইরাসের অনেক ধরন রয়েছে। তার মধ্যে এই ভাইরাসের ১৬, ১৮, ৩১, ৩৩ স্ট্রেন ক্যানসারের বাহক। সাধারণত যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে ও ক্যানসার ডেকে আনে। মূলত যাদের একধিক যৌনসঙ্গী তাদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মেদ, ধূমপান ও মদ্যপান করার প্রবণতাও এই ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ায়।
কেন এদেশে মৃত্যুহার বেশি?
মূলত এই ক্যানসার নির্ণয় হয় অনেক দেরিতে, তখন হয়তো চিকিৎসা করেও ক্যানসার নির্মূল করা যায় না। এদেশে তথা এ রাজ্যে মহিলাদের মধ্যে অনেক বেশি মাত্রায় এই ধরনের সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। অনেকেই লোকলজ্জায় খোলসা করে যৌনাঙ্গের কোনও সমস্যার কথা পরিবারের কাউকে এমনকী পার্টনারকেও বলতে পারেন না। এড়িয়ে যেতে যেতে বিপদ বাড়ায়, ক্যানসার দেরিতে ধরা পড়ে।
প্রথমেই সজাগ হোন
অতিরিক্ত সাদাস্রাব
মাসিকের পরও রক্তপাত
মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরও রক্তক্ষরণ
কোমরে ব্যথা
এই ধরনের কোমরে ব্যথা সাধারণত ৫০ ঊর্ধ্বদের হলে সাবধান হতে হবে। সঙ্গে মেনোপজ পরবর্তী ব্লিডিংয়ের উপসর্গ রয়েছে, আর ব্যথা যদি কোমরের উপর থেকে ক্রমশ ঊরু হয়ে পায়ের নিচের দিকে যায় তা হলে খুব সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। এই ব্যথা ক্রমাগত চলতেই থাকে। সারতে চায় না।
[আরও পড়ুন: ‘ভেবেচিন্তে কথা বলুন…’, রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনই কেন এমন কথা মিঠুনের মুখে?]
প্যাপস স্মিয়ারে জোড়
৫০ ঊর্ধ্বদের প্যাপস স্মিয়ার টেস্টে অত্যন্ত জরুরি । পেপ টেস্ট এর মাধ্যমে জরায়ু মুখের কোষ নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষায় কোষের এমন কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা হয় যা ধীরে ধীরে ক্যানসারের রূপ নিতে পারে। অর্থাৎ এ পরীক্ষাটি জরায়ু মুখের ক্যানসারের পূর্বাবস্থা নির্ণয় করতে সক্ষম। যা দেখে সহজেই চিকিৎসা সম্ভব। এ পরীক্ষার জন্য চামচের মতো একটি যন্ত্র মাসিকের রাস্তা দিয়ে ব্রাশ এবং কাঠির সাহায্যে জরায়ু মুখ থেকে কোষ নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে আপনি তেমন ব্যথা পাবেন না, তবে সামান্য অস্বস্তি লাগতে পারে। এই টেস্টটি হল সার্ভাইক্যাল বা জরায়ুর মুখের ক্যানসার নির্ণয়ের একটি অন্যতম স্ক্রিনিং পদ্ধতি।
বিকল্প ভিআইএ (VIA)
পেপটেস্ট-এর একটি বিকল্প হচ্ছে VIA (Visual Inspection with Acetic Acid) টেস্ট, যা আরও সহজে এবং কম খরচে করা যায়। বলা ভাল, জরায়ু মুখের ক্যানসার একটি প্রতিরোধযোগ্য ক্যানসার। তাই এই টেস্টের মাধ্যমে ক্যানসার পূর্বেই নির্ণয় হলে চিন্তার কোনও কারণ নেই।
এক্ষেত্রে জরায়ুর মুখে এক ধরনের অ্যাসিড দিয়ে পরীক্ষা করা হয় সেখানে কোনও টিউমার রয়েছে কি না। সংকটজনক কিছু দেখলে সেক্ষেত্রে বায়োপসি করতে বলা হয়। এই পরীক্ষায় খরচও কম।
অল্পবয়সিরা সতর্ক থাকুন
৫০ বছর বয়সের পর এই ক্যানসারের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিন্তু এই ক্যানসারের ভাইরাস কিন্তু অনেক অল্প বয়স থেকে শরীরে প্রবেশ করতে পারে অজ্ঞতার কারণে। তাই অল্প বয়স থেকেই কিছু ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা দরকার। কী কী?
সহবাসের সময় কন্ডোমের ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ।
সেক্স হাইজিন মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ সহবাসের পর পরিষ্কার হওয়া, রক্তপাত হলে সতর্ক হওয়া দরকার।
মাসিকের সময় পরিচ্ছন্ন থাকাটাও খুব জরুরি।
একাধিক পার্টনার থাকলে বেশি সতর্ক হতে হবে।
রয়েছে ভ্যাকসিন
সাধারণত এখন ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামের মধ্যেই সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের ভ্যাকসিন রয়েছে। এটা নিতে হবে। সাধারণত প্রথম যৌন মিলনের আগে এই ভ্যাকসিন নিতে হবে। তবেই এই প্রতিষেধক কার্যকর হবে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে এই ভ্যাকসিন মোটামুটি
১৪-১৮ বছর বয়সের মধ্যে নিয়ে নেওয়া সবচেয়ে ভাল। সার্ভারিক্স, গার্ডাশিল ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ৬ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। যাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ বা বয়স চলে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সঙ্গমের সময় কন্ডোমের ব্যবহার অতি জরুরি। এক্ষেত্রে কন্ট্রাসেপটিভ পিল বা অন্যান্য ধরনের কন্ট্রাসেপটিভ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে কিন্তু প্রতিরোধ করতে পারে না।
ফোন – ৯০৭৩৩৬১০৪২