সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রয়াত পুনম পাণ্ডে (Poonam Pandey)। শুক্রবার এই খবর যেন বাজ পড়ার মতো প্রকাশ্যে এল। এমন খবর তো বিশ্বাস করাই শক্ত। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় পুনমের ভেরিফাইড পেজ থেকে যে খবরটি নিশ্চিত করেছে তাঁর টিম! জানিয়েছে, জরায়ুমুখের ক্যানসারেই তারকার অকালমৃত্যু। আর শনিবারই ফের চমক। সোশাল মিডিয়ায় পুনম পাণ্ডে নিজেই এসে জানালেন, তিনি বেঁচে আছেন এবং সুস্থ আছেন। মৃত্যুর খবর রটিয়ে দেওয়ার পিছনে রয়েছে জড়ায়ুর ক্যানসারে সচেতনতা বৃদ্ধি।
এদেশে মহিলাদের শারীরিক সমস্যার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জরায়ুমুখের ক্যানসার বা সার্ভাইক্যাল ক্যানসার (Cervical Cancer)। মৃত্যুহারও বেশি। কেন হয় এই মারণ রোগ? মুক্তি পাবেন কীভাবে? মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. তন্ময় মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য এই প্রতিবেদনে তুলে ধরলেন জিনিয়া সরকার।
কারণ
সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের জন্য মূলত দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এই ভাইরাসের অনেক ধরন রয়েছে। তার মধ্যে এই ভাইরাসের ১৬, ১৮, ৩১, ৩৩ স্ট্রেন ক্যানসারের বাহক। সাধারণত যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে ও ক্যানসার ডেকে আনে। মূলত যাদের একধিক যৌনসঙ্গী তাদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মেদ, ধূমপান ও মদ্যপান করার প্রবণতাও এই ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ায়।
মুক্তি পাবেন কীভাবে? আগে থেকেই সজাগ হোন
অতিরিক্ত সাদাস্রাব, মাসিকের পরও রক্তপাত, মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরও রক্তক্ষরণ, কোমরে ব্যথা হলে সাবধান হতে হবে।
৫০ ঊর্ধ্বদের যদি মেনোপজ পরবর্তী ব্লিডিংয়ের উপসর্গ থাকে, আর ব্যথা যদি কোমরের উপর থেকে ক্রমশ ঊরু হয়ে পায়ের নিচের দিকে যায় তা হলে খুব সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। এই ব্যথা ক্রমাগত চলতেই থাকে। সারতে চায় না।
প্যাপস স্মিয়ার টেস্ট অত্যন্ত প্রয়োজন
পেপ টেস্ট এর মাধ্যমে জরায়ু মুখের কোষ নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষায় কোষের এমন কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা হয় যা ধীরে ধীরে ক্যানসারের রূপ নিতে পারে। অর্থাৎ এ পরীক্ষাটি জরায়ু মুখের ক্যানসারের পূর্বাবস্থা নির্ণয় করতে সক্ষম। যা দেখে সহজেই চিকিৎসা সম্ভব। এ পরীক্ষার জন্য চামচের মতো একটি যন্ত্র মাসিকের রাস্তা দিয়ে ব্রাশ এবং কাঠির সাহায্যে জরায়ু মুখ থেকে কোষ নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে আপনি তেমন ব্যথা পাবেন না, তবে সামান্য অস্বস্তি লাগতে পারে। এই টেস্টটি হল সার্ভাইক্যাল বা জরায়ুর মুখের ক্যানসার নির্ণয়ের একটি অন্যতম স্ক্রিনিং পদ্ধতি।
[আরও পড়ুন: একফ্রেমে করিনা, টাব্বু, কৃতী! প্রথম ঝলকেই মন জয় করল ‘দ্য ক্রু’]
বিকল্প ভিআইএ (VIA)
পেপটেস্ট-এর একটি বিকল্প হচ্ছে VIA (Visual Inspection with Acetic Acid) টেস্ট, যা আরও সহজে এবং কম খরচে করা যায়। বলা ভাল, জরায়ু মুখের ক্যানসার একটি প্রতিরোধযোগ্য ক্যানসার। তাই এই টেস্টের মাধ্যমে ক্যানসার পূর্বেই নির্ণয় হলে চিন্তার কোনও কারণ নেই।
এক্ষেত্রে জরায়ুর মুখে এক ধরনের অ্যাসিড দিয়ে পরীক্ষা করা হয় সেখানে কোনও টিউমার রয়েছে কি না। সংকটজনক কিছু দেখলে সেক্ষেত্রে বায়োপসি করতে বলা হয়। এই পরীক্ষায় খরচও কম।
অল্প বয়সের সচেতনতা
৫০ বছর বয়সের পর এই ক্যানসারের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিন্তু এই ক্যানসারের ভাইরাস কিন্তু অনেক অল্প বয়স থেকে শরীরে প্রবেশ করতে পারে অজ্ঞতার কারণে। তাই অল্প বয়স থেকেই কিছু ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা দরকার। যেমন –
সহবাসের সময় কন্ডোমের ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ।
সেক্স হাইজিন মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ সহবাসের পর পরিষ্কার হওয়া, রক্তপাত হলে সতর্ক হওয়া দরকার।
মাসিকের সময় পরিচ্ছন্ন থাকাটাও খুব জরুরি।
একাধিক পার্টনার থাকলে বেশি সতর্ক হতে হবে।
ভ্যাকসিন
সাধারণত এখন ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামের মধ্যেই সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের ভ্যাকসিন রয়েছে। এটা নিতে হবে। সাধারণত প্রথম যৌন মিলনের আগে এই ভ্যাকসিন নিতে হবে। তবেই এই প্রতিষেধক কার্যকর হবে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে এই ভ্যাকসিন মোটামুটি ১৪-১৮ বছর বয়সের মধ্যে নিয়ে নেওয়া সবচেয়ে ভাল। সার্ভারিক্স, গার্ডাশিল ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ৬ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। যাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ বা বয়স চলে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সঙ্গমের সময় কন্ডোমের ব্যবহার অতি জরুরি। এক্ষেত্রে কন্ট্রাসেপটিভ পিল বা অন্যান্য ধরনের কন্ট্রাসেপটিভ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে কিন্তু প্রতিরোধ করতে পারে না।
প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন – ৯০৭৩৩৬১০৪২