ডায়াবিটিস শুধুই বড়দের রোগ নয়। শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে। কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন অভিভাবকরা? আদৌ কি শিশুদের মধুমেহ পরিত্রাণযোগ্য? জানালেন পেডিয়াট্রিশিয়ান ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি। শুনলেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
মধুমেহ-র (Diabetes) প্রকারভেদ
ডায়াবিটিস মূলত দু-প্রকার। টাইপ ১ এবং টাইপ ২। বাচ্চাদের সাধারণত টাইপ ১ ডায়াবিটিস হয়। বড়দের দেখা যায় টাইপ ২ ডায়াবিটিস। তবে কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে বাচ্চাদেরও টাইপ ২ ডায়াবিটিস হতে পারে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বয়ঃসন্ধিকালে টাইপ ২ ডায়াবিটিসের প্রকোপ বাড়ছে।
শিশুদের মধ্যে ডায়াবিটিসের ধাত কি আগের তুলনায় বেড়েছে? উত্তর, হ্যাঁ। গত দুই শতকে আস্তে আস্তে বাড়ছে টাইপ ২ ডায়াবিটিস। এও দেখা গিয়েছে যে, কোভিড পরবর্তী সময়ে টাইপ ১ ডায়াবিটিসের প্রকোপ বাড়ছে। যে সব শিশু আক্রান্ত হয়েছে, তাদের প্রত্যেকরই কোভিড অ্যান্টিবডি পজিটিভ ছিল। ব্যাখ্যা হল – কোভিড সংক্রমণে হয়তো অগ্ন্যাশয়ে বিটা সেল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ফলে টাইপ ১ ডায়াবিটিস হচ্ছে। তবে বিষয়টি গবেষণাধীন।
ফারাক আগে বুঝুন
টাইপ ১ ডায়াবিটিসে ইনসুলিন শরীরের মধ্যে কম তৈরি হয়। শরীরে অগ্ন্যাশয়ের মধ্যে থাকে বিটা সেল, যা ইনসুলিন তৈরি করে। কোনও কারণে কোষ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে শরীরে ইনসুলিন হয় তৈরি হয় না বা হলেও খুব কম হয়। তখন শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি হয় এবং টাইপ ১ ডায়াবিটিস দেখা যায়। টাইপ ২ ডায়াবিটিসে শরীরে ইনসুলিন ঠিকই তৈরি হয় কিন্তু তা শরীরের যে অংশে থেকে কাজ করে, সেখানে ‘রেজিস্ট্যান্স’ তৈরি হয়।
[আরও পড়ুন: বিয়ের মরশুমে ফাটাফাটি কালেকশন সেনকোর, আকর্ষণীয় ছাড় সোনা-হিরের গয়নায়]
নিও-নেটাল ডায়াবিটিস
এমনও হতে পারে যে, কোনও শিশু জন্ম থেকেই ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। একে নিও-নেটাল ডায়াবিটিস বলা হয়। জিনগত ব্যাধি। এতে বাচ্চারা খুবই অসুস্থ হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক থাকে। জীবন সংকটও হতে পারে।
মধুমেহ রোগের আঁতুড়ঘর
মধুমেহ থেকে একাধিক শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তালিকায় সবচেয়ে ভয়ংকর ডায়াবিটিস কিটোঅ্যাসিডোসিস। প্রায় ৬০ শতাংশ বাচ্চাদের টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস প্রথম যখন ধরা পড়ে, সঙ্গে ডায়াবিটিস কিটোঅ্যাসিডোসিস-ও দেখা দেয়। রোগটি প্রাণঘাতী।
ডায়াবেটিস সঠিক চিকিৎসা না হলে তার থেকে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়, যাকে বলে ডায়াবিটিক রেটিনোপ্যাথি, কিডনির জটিলতা হতে পারে যার পোশাকি নাম ডায়াবিটিক নেফ্রোপ্যাথি, হার্টের সমস্যাও হয়।
অস্বাভাবিকতা লক্ষণ করুন
যদি দেখেন, শিশু হঠাৎই প্রচুর জল খাচ্ছে, প্রচুর প্রস্রাব করছে, তার খিদেও হঠাৎই খুব বেড়ে
গেছে কিন্তু খেলেও ওজন বাড়ছে না। বরং দ্রুত গতিতে ওজন কমছে – সতর্ক হোন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা বেশি জল খেলে বাবা-মায়েরা ভাবেন, এ তো ভালো কথা! কিন্তু সেটা যে আদপে অস্বাভাবিকতা, তা বাকি লক্ষণগুলি দেখলে ধরা সম্ভব। সময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে আক্রান্ত শিশুর অন্য সমস্যা যেমন শ্বাসকষ্ট, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা প্রভৃতি হতে পারে।
প্রতিরোধ কি সম্ভব?
টাইপ ১ ডায়াবিটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। টাইপ ২ ডায়াবিটিস ‘প্রিভেনটেবল’।
ডায়াবিটিসের জন্য জীবনযাত্রা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী। তাই সঠিক ‘লাইফস্টাইল চেঞ্জেস’ দরকার।
শিশুর জন্মের পর প্রথম ছ’মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ খাবে। কৌটোর দুধ দেবেন না। ফাস্ট-ফুড খাওয়া চলবে না। বড় হওয়ার সময়ে নিয়মিত ব্যায়াম করান। স্থূলতা যেন বাসা না বাঁধে। শিশুকে হাই ফাইবার ডায়েট দিন।
আপাতত টাইপ ১ ডায়াবিটিসের চিকিৎসা একটাই। ইনসুলিন ইঞ্জেকশন। সারা জীবন নিয়ে যেতে হবে। সঙ্গে দরকার উপযুক্ত ডায়েট এবং কায়িক পরিশ্রম। এখনও পর্যন্ত এই ব্যাধি ‘কিউরেবল’ নয়, তবে ‘ট্রিটেবল’।