shono
Advertisement

Hilsa Fish: কমছে স্বাদ, বাড়ছে বিপদ! ভোজনরসিকদের ‘তাণ্ডবে’ সংকটে ইলিশের ভবিষ্যৎ

আর মাত্র ১০ বছর! তারপরেই শেষ ইলিশ, আশঙ্কা প্রকাশ বিশেষজ্ঞদের।
Posted: 01:38 PM Jul 22, 2023Updated: 06:12 PM Jul 23, 2023

রমেন দাস: ‘ইলিশ মাছগা কুটে লো বউ পেটির দিকে চায়, আহারে ইলিশার পেডি কার পাতে যায়!’ লোকগান থেকে বাঙালির পাত, রুপোলি শস্যের কদর ছড়িয়ে সর্বত্র। নিরন্তর ‘মাছের রাজা’র স্বাদ নিয়ে চলে কাটাচেরাও। বর্ষা থেকে পুজোর মরশুম বাঙালির ভাতের মোহে থাবা বসায় ইলিশ পাতুড়ি, সরষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ভাজা ইলিশ – হরেকরকম পদ। কিন্তু এই মুহূর্তে যে ইলিশ আপনি খাচ্ছেন সেই ইলিশের স্বাদ কেমন? গন্ধ ছোটে ফুরফুরিয়ে? মাছের পেটি থেকে চুইয়ে পড়ে তেল! এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বসলে একযোগে আপনিও বলে উঠবেন ‘কই না তো!’

Advertisement

বর্ষা এসেছে। সবেমাত্র ট্রলার ভরতি করে সমুদ্রপাড়ে হাজির হচ্ছে চকচকে ইলিশ (Hilsa Fish)। সেই ইলিশই পৌঁছে যাচ্ছে আপনার হেঁশেলে। এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। আজ থেকে কয়েকবছর আগেও যে ওজনের মাছ উঠত বাজারে সেই মাছের জোগান কমেছে। আর তাতেই কমছে স্বাদ! কম ওজনের মাছ আর ‘খোকা ইলিশে’র রমরমায় ক্রমশ নিজের জেল্লা হারাচ্ছে নদীর রাজা। তাহলে এ ইলিশ কেমন ইলিশ আসলে? দুই বাংলার প্রিয় মাছের স্বাদ, গন্ধ আর ভবিষ্যতের তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়েছিল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। এই বিষয়ে ঠিক কী বলছেন মৎস্যবিশেষজ্ঞরা?

সিধু-কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Sidho-Kanho-Birsha University) প্রাণীবিদ্যা (Zoology) বিভাগের অধ্যাপক অসীমকুমার নাথ বলছেন. ”ইলিশের স্বাদ অবশ্যই কমছে। এর সঙ্গেই প্রশ্ন উঠছে এই মাছের ভবিষ্যৎ নিয়েও। আগামী ১০ বছরে এদেশে আর কতটা থাকবে ইলিশ, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও।” কেন? বহু বছর যাবৎ ইলিশ-চর্চায় (Hilsa) ব্যস্ত ওই অধ্যাপকের দাবি, ”মাছের শরীরের কিছু উপাদান, সেই মাছের স্বাদের তারতম্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বের। এখানেই রয়েছে খানিকটা বাধা। মাছের পরিণত রূপলাভের আগেই তাকে ধরে ফেলা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে গভীর সমুদ্র থেকে নদীতে আসার পথেও রয়েছে একাধিক সমস্যা। অকালেই ধরা পড়ছে মাছ। অর্থাৎ যখন তার প্রজনেনর সময় সেই সময়েই হয়তো ধরে খেয়ে ফেলছি ওই মাছটিকে!” শুধু তাই-ই নয় ওই অধ্যাপকের আরও দাবি, ”যেহেতু কম বয়সেই জালবন্দি হচ্ছে ইলিশ। তাই অকালেই ফের প্রজননের দিকে এগোতে বাধ্য হচ্ছে মাছ। ফের একইভাবে অসময়ে ধরা পড়ছে সেই বাচ্চা মাছও। বারবার একই অবস্থানের মুখোমুখি হচ্ছে ওরা।”

ইলিশের আগামী নিয়ে চিন্তিত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের (The University of Burdwan) প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক কৌশিক ঘোষও। তাঁর কথায়, ”শারীরিক একাধিক উপাদান থেকে শুরু করে জলের গভীরতা। ইলিশের স্বাদ বাড়া-কমার জন্য দায়ী সবটাই।” অধ্যাপক ঘোষের দাবি, ”ইলিশের জীবনচক্রের আমূল পরিবর্তন ঘটছে। সার্বিকভাবে দূষণও এর অন্যতম কারণ। কিন্তু তাকে বাঁচার সুযোগ কম দিচ্ছি আমরাই! যখন যেটা করা উচিত নয়, সবটাই করে ফেলা হচ্ছে। বাংলাদেশ (Bangladesh) ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আমরা সেইভাবে হয়তো পারছি না! আর এখানেই বিপদ বাড়ছে ইলিশের।” তাঁর কথায়, ”নদীর ইলিশের জায়গায় বর্তমানে প্রায়শই গভীর সমুদ্র থেকে ধরতে হচ্ছে মাছ। কারণ, ওরা যাতায়াত করতে গেলেই খপ্পরে পড়ছে মানুষের। বড় হওয়ার আগেই উঠে পড়ছে স্থলে!” আর এর কবলে পড়েই আরও সংকটে পড়ছে ইলিশ! কেন অকালেই কুমারীত্বও হারাচ্ছে এই মাছ? দুই অধ্যাপকেরই দাবি, সবকিছুর নির্দিষ্ট সময় থাকে কিন্তু তার আগেই যদি কিছু ঘটে যায়, তাহলেই তো মুশকিল! মাছের জীবনচক্রেও এর প্রভাব রয়েছে। অসময়ে মাছধরা হলে শারীরবৃত্তীয় চাহিদায় ভর করে অকালেই বিপজ্জনক প্রজননের দিকে এগোবে এই মাছও, এটাই স্বাভাবিক! বলছেন তাঁরা। এখানেই ইলিশে অশনি সংকেতও দেখছেন অধ্যাপকরা।

[আরও পড়ুন: বাথরুমের ভিতরে অতিকায় সাপ! মাঝরাতে দেখা মিলল ভয়ংকরের, তারপর…]

দিঘা (Digha) ফিসারম্যান অ্যান্ড ট্রেডার্স সংগঠনের সম্পাদকও ইলিশের স্বাদ এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রকাশ করেছেন উদ্বেগ। শ্যামসুন্দর দাস জানান. ”নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বারবার ছোট মাছ ধরে আনা এই স্বাদ কমার অন্যতম কারণ। মাছ নদীতে আসতেই পারে না আর! প্রতি মুহূর্তে আইন না মেনে অতিরিক্ত লাভের আশায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য ইলিশের বংশ শেষ হচ্ছে!” শ্যামসুন্দরের আরও দাবি, ”শুধু ছোট মাছধরা নয়, জলের অবস্থার কথা ভাবুন! গঙ্গার পাশে একাধিক কারখানা, নোংরা-আবর্জনা। এর ফলে শুধু ইলিশ কেন, সব মাছের অস্তিত্বেই চাপ বাড়ছে!”

যদিও খানিকটা ভিন্ন দাবি পূর্ব মেদিনীপুরের (East Medinipur) মাছ ব্যবসায়ী দীপ ভুঁইয়ার। তাঁর কথায়, ”ইলিশের সত্যিই আর তেমন স্বাদ নেই! বড় ইলিশ বা টাটকা ইলিশ আর কই! যেটুকু আছে সেটাই তো অনেক। আমরা বিক্রি করছি এই ধরনের ইলিশই।” তবে এর কারণ হিসেবে তাঁর যুক্তি, ”বেআইনিভাবে মাছধরা শুধু এর কারণ হতে পারে না। জলের দূষণ, নদীর নাব্যতা হ্রাস এর বড় কারণ। মাছ বড় হতেই পারছে না।” কৃত্রিমভাবে ইলিশের প্রজননের চেষ্টা শুরু হলেও সেই মাছেও ঠিক কতটা জমবে স্বাদ। প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

[আরও পড়ুন: শান্ত বাঘ! খেতের কাজে ব্যস্ত কৃষকের পাশ দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে গেল দক্ষিণরায়]

প্রসঙ্গত, একটি পরিণত মেয়ে ইলিশ নির্দিষ্ট সময়ে ডিম পাড়তে পারে কয়েক লক্ষ। দাবি, কেউ কেউ ডিম পাড়ার সময় পর্যন্ত সুযোগ পেলেও তার জন্ম দেওয়া চারামাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না আর। ছোট বয়সেই মানুষের পেটে যাচ্ছে তারা। এর ফলেই ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ইলিশের জীবনে। অপরিণত বয়সে ডিম পেড়ে ফেলা থেকে শুরু করে ‘জলবিপদে’র বশে নদীর (River) মিষ্টি জলে আসতে ভয়! সবক্ষেত্রেই বেজায় বিপদে পড়ছে রুপোলি শস্য। যাদের স্বাধীন বাঁচার ক্ষেত্রই যেন রূপান্তরিত হচ্ছে বেঁচে থাকার যুদ্ধক্ষেত্রে। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। তাহলে কি ‘জলদস্যু’র কবলে পড়ে স্বাদের অবনমনেই ক্রমশ বিলুপ্ত হবে এই মাছও? উত্তর দেবেন কে!

দেখুন ভিডিও:

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার