স্টাফ রিপোর্টার: সুধা চন্দ্রনকে মনে আছে? কাঠের পা নিয়েই ধ্রুপদী নাচে গোটা দেশকে তাক লাগিয়েছিলেন। অভিনয় করতেন দারুণ। সেই সময়ে সুধার কৃত্রিম পা বিদেশ থেকে আনতে হয়েছিল। কিন্তু এখন দেশের মধ্যেই এ ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যাবে। তাও আবার কলকাতায় (Kolkata), খাস কলকাতার এসএসকেএমের (SSKM) অ্যানেক্স বিল্ডিং শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালেই সরকারি উদ্যোগে সেই সুযোগ মিলবে।
বুধবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এসএসকেএমের অধিকর্তা ডা. মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন “চার বছরের টানা পরিশ্রমের ফসল। রাজ্যের অসংখ্য মানুষ সুবিধা পাবেন। দেশের মধ্যে পিজি প্রথম এমন পরিষেবা চালু করল।” বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রাজেশ প্রামাণিক তখন দু’চোখ ভরে দেখছেন প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের মধ্যে গড়ে ওঠা তাঁর স্বপ্নের নির্মাণ। বললেন, “ইউ ওয়ান্ট। সো ইউ ক্যান। আর কাউকে বাইরে যেতে হবে না। এক ছাদের তলায় সব চিকিৎসা পরিষেবা।” ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগের বহু প্রতীক্ষিত পরিষেবা সম্প্রসারণ শুরু পেডিয়াট্রিক রিহ্যাব, নিউরো রিহ্যাব ও পালমোনারি রিহ্যাব। এর মধ্যে পেডিয়াট্রিক ও নিউরো রিহ্যাবের জন্য বুধবার থেকে চালু হল ২০ বেডের রিহ্যাব ওয়ার্ড (Rehab Ward)।
[আরও পড়ুন: ‘বলি ও ননদি, আর দু’মুঠো চাল ফেলে দে হাঁড়িতে’, গানে গানে শুভেচ্ছা জানালেন ‘জামাই’ মদন]
এদিন রিহ্যাব নিয়ে একটি কর্মশালাও আয়োজিত হয় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে। এক ছাদের তলায় থাকছে ওটি, ইন্টারভেনশনাল রুম, প্রস্থেটিকস ও অর্থোটিক্স ওয়ার্কশপ, অকুপেশনাল থেরাপি এবং অত্যাধুনিক জিম-সহ ফিজিওথেরাপি ইউনিট। এর ফলে স্ট্রোক পরবর্তী রোগীদের পাশাপাশি মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, মেরুদণ্ডে কিংবা মস্তিষ্কে আঘাত, মোটর নিউরন ডিজিজ, পার্কিনসন্স ডিজিজ ও নার্ভ ইনজুরির (Nerve injury) রোগীরা চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পাবেন বিনামূল্যে। থাকছে আউটডোরের সুবিধাও। অদূর ভবিষ্যতেই ইন্ডোরে বেড সংখ্যা বেড়ে হবে ৩৫টি। থাকবে পেন ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাও।
[আরও পড়ুন: জামাইষষ্ঠীর প্রসাদ নিয়ে জেলে জীবনকৃষ্ণের স্ত্রী, খাওয়ানোর অনুমতি দিল না কর্তৃপক্ষ]
বিভাগীয় প্রধান রাজেশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘স্ট্রোকের পর শুধুমাত্র ফিজিওথেরাপিতে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হন না। ফলে অনেকাংশেই পেশির শিথিলতা, যন্ত্রণার পাশাপাশি খাবার গেলা, কথা বলা ও বাথরুমের বিভিন্ন সমস্যা থেকে যায়। এর জন্য প্রয়োজন হয় সর্বাত্মক নিউরো রিহ্যাবের। সেটা এখানে মিলবে।’’ তিনি জানান, একই কথা প্রযোজ্য পেডিয়াট্রিক রিহ্যাব প্রসঙ্গেও। মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্কে আঘাতের পাশাপাশি সেরিব্রাল পালসি, জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস, ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এমন রোগে ভোগা শিশুদের পুনর্বাসনও সম্ভব হবে এখানে।
আগামী দিনে পালমোনারি রিহ্যাব চালু হলে সেখানে সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ), অ্যাজমা, পালমোনারি হাইপারটেনশন, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ইত্যাদির শিকার রোগীদের পুনর্বাসন চিকিৎসা সম্ভব হবে। এসএসকেএমের পিএমআর বিভাগের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, একই ছাতার তলায় প্রস্থেটিকস ও অর্থোটিকস ওয়ার্কশপ থাকায় অসুস্থ ব্যক্তিরা চটজলদি হাতে পেয়ে যাবেন ‘কাস্টমাইজড’ কোমরের বেল্ট, ক্রাচ, ব্রেস ইত্যাদির মতো অনুষঙ্গ। সম্ভব হবে নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী নকল হাত-পা লাগানোর কাজেও।