ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: সকালে মুখ ধোয়ার সময় হরিপদ দেখতে পেলেন তাঁর জিভে চুল গজিয়েছে! একবার-দু’বার নয়, বার কয়েক চোখ কচলে সেই এক দৃশ্য। জিভের মধ্যে চুল! জিভছোলা দিয়ে বার কয়েক ঘষতে, কেমন খরখরে লাগল। খুব জ্বালা করছিল। ভয় ধরে গেল, ক্যানসার নয় তো?
মাথায় রইল অফিস। ঘর থেকে বেরিয়ে ট্রেনে করে সোজা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (NRS)। আউটডোরে নাক-কান-গলার ডাক্তারবাবু ভাল করে খুঁটিয়ে দেখে বললেন, ‘‘হুম। তেমন বড় কিছু নয়। তবে ভাল করে চিবিয়ে খাবার খাবেন। আর এই মলম ওই জায়গায় দেবেন।’’
এই পর্যন্ত পড়ার পর কেউ বলতেই পারে,‘‘ধুর। জিভে চুল গজায় নাকি?’’ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের অধ্যাপক ডা. প্রণবাশিস বন্দ্যোপাধ্যাযের কথায়, ‘‘জিভে চুল গজায় না ঠিকই। কিন্তু জিভ এমন কালো আর কর্কশ হয় যে রোগী তো বটেই, যে কেউ দেখেই মনে করতে পারেন চুল। আসলে রোগটার নাম,‘লিংগুলা ভিলোসা নিগ্রা’ (Lingua Villosa Nigra)। কোনও বিরল রোগ নয়। প্রতি দু’ হাজারের মধ্যে এক-আধ জনের এই রোগ দেখা দেয়। কিছু নিয়ম মানলেই রোগ উধাও।’’
[আরও পড়ুন: জন্ম থেকেই কানে শুনতে সমস্যা খুদের? জেনে নিন মোকাবিলার পথ]
এবার প্রশ্ন, কেন এমন রোগ হয়?
প্রণবাশিসবাবুর কথায়,‘‘মূলত যাঁরা জিভের ব্যবহার কম করেন বা ভাত-রুটি-সবজি খাওয়ার সময় জিভের কম ব্যবহার করেন বা গিলে খাওয়া অভ্যাস। তাঁদের মধ্যে এই রোগ দেখা দিতে পারে।’’ বছর ৩৬-এর হরিপদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। তাঁকে প্রশ্ন করে জানা গিছে, চোয়ালে ব্যথা, তাই বেশ কয়েকমাস ধরে সবকিছুই গিলে খেতেন। প্রণবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘জিভে অসংখ্য ছোট ছোট গ্ল্যান্ড থাকে। খাবার চিবনোর সময় সেইসব গ্ল্যান্ড থেকে লালা (স্যালাইভা) বের হয়। আরও ভাল করে বললে জিভে ফিলিফর্ম প্যাপিলা নামে ছোট গ্রন্থি থাকে। জিভের ব্যবহার কম হলে এই গ্রন্থি থেকে কেরাটিন নামে একটি রস নিঃসৃত হয়ে জিভে জমতে শুরু করে। এই রস খয়েরি বা কালো রঙের।”
“দীর্ঘদিন ধরে জিভে ওই রস জমতে থাকলে তা চুলের মতো লম্বাটে হয়। সঙ্গে জ্বালা। আমরা রোগীর সমস্যা শুনে প্রথমে বায়োপসি করি। কিন্তু ক্যানসারের কোনও লক্ষণ পাওয়া যায়নি। রোগীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, রোজ গড়ে ২-৩ প্যাকেট বিড়ি খেতেন। প্রথমেই বিড়ি খাওয়া বন্ধ করতে বলি। এরপরে রোগের লক্ষণ দেখে কিছু মাল্টি ভিটামিন আর জিভে লাগানোর মলম দেওয়া হয়। আর বলা হয়েছে খাবার চিবিয়ে খেতে,’’ বলেন প্রণবাশিসবাবু।
এই রোগের কোনও অস্ত্রোপচার হয় না। তেমন কিছু ওষুধের দরকারও হয় না। জীবনযাপনে একটু নিয়ম মেনে চললেই জিভে চুল গজানোর মতো সমস্যায় ভুগতে হবে না। ছুটে ডাক্তারবাবুর কাছেও যেতে হবে না বলেই জানা গিয়েছে।