নব্যেন্দু হাজরা: বছর পাঁচেক ধরেই পশ্চিম ভারত থেকে গণপতিদেব ঘাঁটি গেড়েছেন বাংলার মাটিতে। কে বলবে, কয়েক বছর আগেও এই পুজোর দিনক্ষণ জানতে চাইলে ঢোক গিলত বাঙালি। এখন সেই পুজোই ঘরে ঘরে। এবার গণেশ পুজো উপলক্ষেই কলকাতার বুকে বানানো শুরু হয়েছে লাড্ডুর হরেক আইটেম। সঙ্গে নানা ফ্লেভারের মোদক। দিন দুই ধরে ভিড়ে ঠাসাঠাসি নামজাদা মিষ্টির দোকানগুলোয়। বাজারের খবর, গণেশ চতুর্থীর (Ganesh Chaturthi 2022) পুজোর দৌলতে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে একলাফে লাড্ডু-মোদকের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
রাত পোহালেই গণেশ চতুর্থী। তার তোরজোরও তাই চলছে জোরকদমে। মিষ্টির দোকানগুলোতে ভালোই ভিড়। শহরের এক নামী হালুইকর সংস্থা জানাচ্ছে, ৩০ রকমের মোদক এবার বানিয়েছে তারা। চকোলেট, ম্যাঙ্গো থেকে শুরু করে কেসর, গোলাপ বাটার স্কচ মোদক। কিছুই বাদ নেই। এমনকি ক্যালরির মাপ ধরে বানানো হয়েছে এইসব মোদক। যাতে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ সুগার বা ক্যালরির মাপ বুঝে সেই মোদক কিনতে পারেন। সঙ্গে লাড্ডু দিয়ে সাজানো ট্রে। তাতে হরেক আইটেম। এলাচ লাড্ডু, কেসর লাড্ডু থেকে ব্রাউনি মোদক, বাদ থাকছে না কিছুই।
[আরও পড়ুন: লাগাতার হুমকি দিচ্ছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ! ফেসবুক লাইভে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘আত্মঘাতী’ হুগলির বিজেপি নেতা]
গত কয়েক বছর গণপতিবাবা বারোয়ারিতে স্থান পেলেও করোনাকাল কাটিয়ে এবছর তা যেন ঘরে ঘরে। লক্ষ্মীপুজোর মতো পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে গণেশ চতুর্থীর আয়োজন। আলোয় সেজেছে সবার বাড়ি। আয়োজনেও কার্পণ্য নেই। “আসলে গজাননকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে না! না হলে গণপতিবাপ্পা কী করে খুশি হয়ে ধনসম্পদ দেবেন?”, জানান লেক গার্ডেন্সের গৃহবধূ তানিয়া চৌধুরী। আল্পনা দেওয়া থেকে সিংহাসন সাজানো, ঠাকুর ঘর দেখে চোখ ফেরানো দায়। কেসিদাসের কর্ণধার ধীমানচন্দ্র দাস বলেন, “মোদকের অনেকরকম ফ্লেভার এবার বানানো হয়েছে। প্লেন মোদকের দাম ২৮টাকা। আর অন্য ফ্লেভারের ৩২ টাকা পিস।” ভিখারাম রাজুজি’র কর্তা লক্ষণজি জানান, “ড্রাইফ্রুটস মোদক লাড্ডু থেকে শুরু করে মেওয়া মোদক লাড্ডু, এবার তাদের ৫৬ প্রকার গণেশ মোদক লাড্ডু হয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে দেদার।”
মহারাষ্ট্র-গুজরাতে গণেশ পুজো নিয়ে জাঁকজমকের অন্ত নেই। বহুকাল ধরেই তা হয়ে আসছে। তবে বছর কয়েক ধরে সেই সিদ্ধিদাতাই হাজির হয়েছেন যেন শহর-গ্রামের ঘরে-ঘরে। আগে তাও শুধু ব্যবসায়ী পরিবারের মধ্যে এই পুজো সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন অনেকের ঘরেই। কোথাও ছোট, তো কোথাও বড়। এমনকী সিদ্ধিদাতার আরাধনায় ফলের বাজারেও ছেঁকা খাচ্ছে মধ্যবিত্ত। যার চল এখানে ছিলই না, সেই মোদক রাতারাতি হট ফেভারিট এখন। মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মিষ্টির দোকানের মোাদক চালের গুড়ো দিয়ে খুব একটা বানানো হয় না। তঁারা ক্ষীর দিয়েই বানান। আর সেই মোদকেই এবার গণপতিবাপ্পার আরাধনা সারছে বাঙালি—অবাঙালি প্রত্যেকেই। বলরাম মল্লিক রাধারমণ মল্লিক মিষ্টির দোকানের এক কর্ণধার জানান, তঁাদেরও এবার বিভিন্ন ফ্লেভারের মোদক হয়েছে। তার চাহিদাও বেশ ভালই।