shono
Advertisement

বাইপাস এখন অতীত, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিতেই খুলবে হার্টের ব্লকেজ! কী জানাচ্ছেন কার্ডিওলজিস্ট?

এখন উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করেই একাধিক ব্লকেজ ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে।
Posted: 09:02 PM Aug 04, 2023Updated: 09:02 PM Aug 04, 2023

হার্টে একাধিক ব্লকেজ থাকলে কী করা উচিত? ওষুধ, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, স্টেন্ট নাকি সার্জারি? তবে হার্টে ব্লকের কথা শুনলেই আর নিরাশ হবেন না। আশার কথা শোনালেন বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. উদয়শঙ্কর দাস। 

Advertisement

এ দেশে তথা এ রাজ্যে হার্টের অসুখের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হল ব্লকেজ বা হার্টে রক্ত চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া। আসলে এ দেশের মানুষের মধ্যে হার্টে একের বেশি ব্লক থাকা খুব সাধারণ ঘটনা। নিত্য এমন রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমনকী, অল্পবয়সিরাও বাদ নেই। এর পোশাকি নাম- মাল্টি ভেসেলস করোনারি ডিজিজ (Multi vessels Coronary Disease)।

আমাদের আক্রান্তের সম্ভাবনা কেন বেশি?
প্রথমত, জিনগত কারণ এক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী। পরিবারে কারও থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপানের অভ্যাসকেও হার্টের সমস্যার জন্য দায়ী করা হয়। তার উপরে বিনা চিকিৎসায় রোগী থাকেন নিজের মতো। যখন বোঝেন তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যায়। তারপর চলে একের বেশি ব্লকেজ (Heart Blockage) নিয়ে প্রাণপণ বেঁচে থাকার আর্তি। আসলে, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল থেকে ধীরে ধীরে কিডনি, হার্ট বিকল হতে থাকে। এটা একটা চক্রের মতো। একটা রোগ ধরলে আর একটা রোগ আসার পথ আরও সহজ হয়ে যায়। তাই প্রতি পদে সাবধান হতে হবে।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসও হার্টের সমস্যার জন্য দায়ী।

একাধিক ব্লকেজের উপযুক্ত চিকিৎসা 
রোগীর হার্টে একের বেশি ব্লক থাকলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে অপারেশনই ভরসা। তবে এখন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করেই একাধিক ব্লকেজ ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে। গত কুড়ি বছরে দেখা গিয়েছে, অপেক্ষাকৃতভাবে বাইপাস সার্জারির সংখ্যা কমে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সংখ্যা বাড়ছে। কারণ, বাইপাসের (Bypass Surgery) মতো বড় অপারেশন চলাকালীন বা পরবর্তী সময়ে রোগীর অনেক শারীরিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত তার ও যন্ত্রপাতির গুণগত মান এখন অনেক ভাল, যার দ্বারা যে কোনও ধরনের জটিল হার্টের ব্লকেজ অনেক সহজে ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। আগে অনেক ব্লকেজ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে খোলা দুঃসাধ্য ছিল। এখন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিতে (Angioplasty) ব্যবহৃত টেকনোলজি ও হার্ডওয়্যার দুই খুব বেশি উন্নত। তাই জটিল ব্লকেজও ঠিক করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। 

রোগীর হার্টে একের বেশি ব্লক থাকলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না।

অপারেশনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জটিলতাও এক্ষেত্রে কম। উন্নত প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের দ্বারা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হচ্ছে। ফলে রোগী বুক কেটে বাইপাস সার্জারি এখন অতীত। আসলে এক্ষেত্রে সুবিধা অনেক বেশি। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিতে ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন পড়ে না। রোগী প্রক্রিয়ার দু’ঘণ্টা পর উঠে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন এবং দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে বাড়িও ফিরতে পারেন। তবে যাঁরা খুব বয়স্ক, একাধিক জটিল অসুখ রয়েছে, যেমন লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ,তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার আগে অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। 

[আরও পড়ুন: ডায়াবেটিসে কতটা প্রয়োজনীয় ইনসুলিন? কীভাবে নেবেন? সঠিক পথ দেখালেন চিকিৎসক]

স্কোরিং সিস্টেমেও এগিয়ে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি
সিনট্যাক্স স্কোরিং সিস্টেমের মাধ্যমে হার্টের ব্লকের ধরন দেখা হয়। সঙ্গে ব্লকের সংখ্যা, কোথায় ব্লক, ক্যালশিয়ামের উপস্থিতি, কতদিন ধরে ব্লক রয়েছে, আর্টারি কতটা বাঁকা বা আর্টারির দু’দিকেই ব্লক কি না ইত্যাদি দেখা হয়। এই স্কোরিং ২২-এর নিচে থাকলে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ও ৩৩-এর বেশি হলে বাইপাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো আগে। বর্তমানে কিন্তু এই স্কোরিং বেশি থাকলেও অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা সম্ভব হচ্ছে। তাই ধীরে ধীর বাইপাস সার্জারির প্রয়োজনীয়তা কমছে।

সুস্থ থাকতে হাঁটাচলা বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা প্রয়োজন।

অনেকে উপসর্গ বুঝতেই পারছেন না
আজকালকার জীবনধারা অদ্ভুত। সারাদিন বসে বসে কাজ, হাঁটা-চলার বালাই নেই। যদি হার্টের ব্লকেজ আসে সেটা আগে থেকে কিছু লক্ষণ দেখলে বোঝা যায়। কিন্তু তার জন্য তো হাঁটাচলা করা বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা প্রয়োজন। সেই সময় হাঁপিয়ে গেলে বা কষ্ট হলে তা হার্টের কোনও সমস্যার পূর্বলক্ষণ রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু এখন এইটুকু পরিশ্রমই তো কেউ করে না। তাহলে উপসর্গই বা দেখা দেবে কী করে। ফলে হার্টের সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুপ্তই থেকে যাচ্ছে। তাই সাইলেন্টলি হার্টের ব্লকেজ বাড়ছে। তারপর হঠাৎ করেই একদিন হার্ট অ্যাটাক। 

অনেক সময় কোনও প্রয়োজনে ট্রেডমিল টেস্ট করলে হার্টে একাধিক ব্লকেজ বা মাল্টি ভেসেল বা ট্রিপল ভেসেল করোনারি আর্টারি ডিজিজে কেউ আক্রান্ত কি না তা নির্ণয় হয়। এদিকে রোগী এতদিন কিছু বুঝতেই পারেননি। এমন উদাহরণ ঝুড়ি ঝুড়ি। তাই ভাল থাকতে কায়িক পরিশ্রম করুন ও কম খান। আর যেটুকু খাবেন পুষ্টিকর খাবার খান। তা হলেই হার্ট ভাল থাকবে, হার্টে সমস্যা হলেও তা আগাম জানান দেবে। 

[আরও পড়ুন: কিডনির সমস্যা মোটেও হালকাভাবে নেবেন না, কী খাবেন? কী খাবেন না? জানালেন বিশেষজ্ঞ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement