shono
Advertisement

গ্যাস-অম্বলের নিয়মিত সমস্যা ক্যানসারের লক্ষণ নয় তো? গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন বিশেষজ্ঞ

সাবধান থাকতে এই বিষয়গুলি জেনে রাখুন।
Posted: 05:42 PM Nov 21, 2023Updated: 05:42 PM Nov 21, 2023

গ্যাস অম্বল কিন্তু মোটেই মামুলি কোনও অসুখ নয়। টানা হতে থাকলে হালকা ভাবে নেবেন না। খাদ্যনালির ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে কিন্তু এই লক্ষণই প্রকাশ পায়। বিশদে জানালেন কলকাতা ফর্টিস হাসপাতালের রোবোটিক ও জেনারেল সার্জারির ডাইরেক্টর ডা. উদীপ্ত রায়। তাঁর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করলেন মৌমিতা চক্রবর্তী।

Advertisement

বয়স চল্লিশ পেরোলেই অনেকেই পেটের গন্ডগোলে কাবু হয়ে যান। একবেলা খেয়েই কিছুক্ষণ বাদে গলা জ্বালা, বুকে চাপ ধরা, গ্যাস- অম্বল, বদহজম কাবু করে দেয়। কষ্ট থেকে বাঁচতে একটাই পন্থা, বাজার চলতি অ্যান্টাসিড গলাধঃকরণ করা। অ্যান্টাসিড প্রাথমিকভাবে একজনকে বদহজমে সুরাহা দিলেও এই ভাবে রোগকে দমিয়ে রাখা ঠিক নয়। আসলে যাদের কথায় কথায় পেটের গন্ডগোল, বদহজম হয় সেটা কিন্তু আসলে কোনও বড় রোগের লক্ষণ।

আড়ালে কী লুকিয়ে?
এই গ্যাস অম্বলের সূত্রপাত নানা কারণে হতে পারে। পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ে ক্যানসার, গলস্টোন ইত্যাদি কারণ ছাড়াও খাদ্যনালীতে ক্যানসারের জন্যও কিন্তু টানা হজমগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গ্যাস অম্বল থেকে ক্যানসার কীভাবে?
বুকজ্বালা, খাবার সময় খাবার গলার কাছে আটকে থাকছে মনে হলে, মুখে টক জল উঠে আসার মতো উপসর্গকে গ্যাস্ট্রোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বলে। আমাদের পাকস্থলীতে এক ধরনের অ্যাসিড থাকে, খাবার পরে সেই খাদ্য অ্যাসিডের মধ্যে গিয়ে পড়ে কিন্তু সেগুলো উলটো পথে অর্থাৎ পাকস্থলী থেকে খাদ্যনালিতে চলে আসে। এই ঘটনা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে খাদ্যনালির নিচের দিকে ঘা হতে শুরু করে এবং ঘা থেকে ওখানের কোষগুলো পরিবর্তিত হয়। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় ব্যারেট ইসোফেগাস বলে। যা খাদ্যনালির ক্যানসারের প্রথম ধাপ।

কখন সাধারণ সমস্যা, কখন ক্যানসার?
খাদ্যনালির ক্যানসারের একটি লক্ষণ গ্যাস অম্বল কিন্তু গ্যাস অম্বল মানেই শুধুমাত্র খাদ্যনালির ক্যানসার তা নয়। এই অস্বস্তি যে কোনও রোগের লক্ষণ হতে পারে। ক্যানসারের ক্ষেত্রে গ্যাস, বুকজ্বালার সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ থাকে। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তির হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, গ্যাস- অম্বলের সঙ্গে বুকে ও পিঠের মাঝখানে ব্যথা, দুর্বলতা, পায়খানার সাথে রক্ত, বমি, হেঁচকি ওঠা, অ্যানিমিয়া, গলায় খাবার আটকানোর প্রবণতা থেকে গিলতে কষ্ট হওয়া, টক জল উঠে আসা, খুসখুসে কাশি বা গলার স্বরে পরিবর্তন, প্রভৃতি উপসর্গ হঠাৎ দেখা দিলেই তা খাদ্যনালির ক্যানসারের সংকেত দেয়।

[আরও পড়ুন: টিভি বা মোবাইলে চোখ রেখে খাওয়াই ডাকছে বিপদ! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?]

কারণ কি শুধুই খাদ্যাভ্যাস?
সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে খাদ্যনালীর ক্যানসারের প্রবণতা বেশি। তামাক, অ্যালকোহল, ওবেসিটি, ধূমপান, গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ অর্থাৎ পাকস্থলীর খাদ্যবস্তু মুখ ও খাদ্যনালীর সংযোগস্থলে ফিরে আসা, প্রধান কারণ। তাছাড়া পরিবারের কারও বিশেষ করে মুখের চারপাশের অংশে ক্যানসার হলে, জিনগত ত্রুটি, কিছু ইনফেকশন যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস হলে, অতীতে কোনও কারণে রেডিয়েশন থেরাপি হলেও খাদ্যনালীর ক্যানসার হতে পারে। শরীরে জিঙ্ক, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, আয়রনের মতো নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতিতেও এই ক্যানসার হতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট পেশায় যুক্ত থাকলে যেমন ড্রাই ক্লিন-এর কাজ করতে যে পদার্থগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো নিশ্বাসের সঙ্গে মুখগহ্বরের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলে খাদ্যনালীতে ক্যানসার হতে পারে।

খাদ্যনালীর ক্যানসার কি নির্মূল করা সম্ভব?
খাদ্যনালীর ক্যানসার নির্ণয়ক প্রথম ও প্রধান পদ্ধতি হল এন্ডোস্কোপি। পরবর্তীতে সিটি স্ক্যান। বর্তমানে নতুন পদ্ধতি এন্ডোস্কোপিক আল্টাসাউন্ড অর্থাৎ এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে আল্ট্রাসাউন্ড করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে শুধু ক্যানসার নয়, খাদ্যনালীর বাইরে রোগটি কতটা ছড়িয়েছে সেটিও বোঝা যায়, সঙ্গে বায়োপসির মাধ্যমে ক্যানসারের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়।
রোগ নির্ণয়ের পরবর্তী ক্ষেত্রে ক্যানসার কোন স্টেজে আছে সেটি বিচার করে দেখা প্রধান কাজ।

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথমে অপারেশন, রেডিওথেরাপি, কিছু ক্ষেত্রে রেডিওথেরাপির সঙ্গে কেমোথেরাপি এবং একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শুরুর দিকে এন্ডোস্কোপিক সাবমিউকোসাল ডিসেকশন ট্রিটমেন্টে (ESD) এন্ডোস্কোপির দ্বারা শুধুমাত্র ক্যানসার প্রভাবিত স্থানকে বাদ দেওয়া হয়। খাদ্যনালীর উপরের দুই তৃতীয়াংশের ক্যানসার স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা বলে যা অ্যালকোহল, ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে। এখানে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি খুব ভালো কাজ দেয়। নিচের এক তৃতীয়াংশে যেখানে খাদ্যনালী পাকস্থলীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়, সেখানে ক্যানসারকে অ্যাডেনো কার্সিনোমা বলে, যা ওবেসিটি, গ্যাস্ট্রোফেজিয়াল রিফ্লাক্স প্রভৃতির কারণে হয়।

এখানে অপারেশনে উপকার মেলে। বর্তমানে ল্যাপারোস্কপিক এবং রোবোটিক পদ্ধতি রোগীর কষ্ট লাঘব করছে। তাছাড়া ইমিউনোথেরাপি নির্দিষ্ট কিছু কোষের ওপর প্রয়োগ করা হয়‌। তবে এদেশে এন্ডোস্কোপির পরিমাণ বাড়াতে পারলে খাদ্যনালীর ক্যানসারকে ছড়িয়ে পড়ার আগে শনাক্ত করা ও রোগীর প্রাণ সংশয় আটকানো সম্ভব।

[আরও পড়ুন: জল ছাড়াই তিন বছর বাঁচে লার্ভা! ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তের মাঝে এডিস মশা নিয়ে সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞদের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement