অভিরূপ দাস: জলবৎ তরলং। তাই কিনে খেতে হচ্ছে গুচ্ছের টাকা দিয়ে। কথা হচ্ছে পান্তার (Panta bhat)। রাতের বেঁচে যাওয়া ভাতে জল দিলেই হবে। পরের দিন সকালে হালকা টকে, মজে গিয়ে পান্তাভাত। তাতেই লেবু চটকে, নুন দিয়ে খেলে পেট ঠান্ডা। এ খাবার দেখে নাক সিঁটকায় জেনারেশন জেড। চাঁদিফাটা গরমে রাঢ় অঞ্চলের চেনা খাবার। মামুলি সেই পান্তাভাত কলকাতার অভিজাত রেস্তরাঁয় এখন ‘পান্তা প্ল্যাটার’। বিকোচ্ছে দেদার। কোথাও পাঁচশো, কোথাও-বা ছ’শো টাকা প্লেট।
উলকার গতিতে চড়ছে তাপমাত্রা। ঘেমেনেয়ে অস্থির শরীর। এমতাবস্থায় পান্তা অত্যন্ত উপকারী। চিকিৎসকরা বলছেন, পান্তা শরীর ঠান্ডা রাখে। এদিকে ফাস্ট ফুডের হারাকিরিতে ভাত-রুটির পাট চুকিয়েছেন অনেকেই। বাড়িতে পান্তাভাত তৈরি করতে জানেন না এ প্রজন্মের কেউই। তারাই ঢু মারছেন হোটেল রেস্তরাঁয়। ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন রেস্তরাঁ মালিকরাও। ইতিমধ্যেই শহরের একাধিক হোটেলে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পান্তা। মেনুতে তার নাম ‘পান্তা প্ল্যাটার’।
পূর্ব ভারতের হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতিক্রম গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গরমে পান্তার চাহিদা বাড়ছে। ক্রেতার কথা ভেবেই রেস্তরাঁগুলো পান্তা ভাত তৈরি করছে। শুধু রেস্তরাঁ নয়, অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ্লিকেশনে উপচে পড়ছে পান্তাভাতের অর্ডারে। কোথাও শুধু পান্তাভাত ১১৯ টাকা প্লেট। প্রিন্স আনওয়ার শাহ রোডের এক নামী রেস্তরাঁয় মাছ ভাজার সঙ্গে পান্তাভাত নিলে ১৮৯ টাকা। পান্তাভাতের সঙ্গে ডিমভাজা ১৩২ টাকা।
[আরও পড়ুন: সিঙ্গুরে এশিয়ার বৃহত্তম পাইকারি বাজার! প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা]
একদা খাবারের তালিকায় কুলমর্যাদাহীন পান্তাভাতের দামের বহর দেখে চোখ কপালে উঠেছে অনেকেরই। অভিনেত্রী গুলশনারা খাতুন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “কী দিন এল!পান্তাভাতও গুচ্ছের টাকা দিয়ে কিনে খেতে হবে!” পড়শি রাজ্য ওড়িশায় পান্তাভাতের চাহিদা বরাবরই। জনস্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, এবার থর মরুভূমির গরমে শহরেও হাঁসফাঁস অবস্থা। এমন গরমে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে হয়। পান্তাভাত জলে ভেজানো থাকায় শরীরে জলের ঘাটতি হবে না।
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ১০০ গ্রাম পান্তাভাতে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, গরম ভাতে আয়রনের পরিমাণ মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম। এছাড়াও ১০০ গ্রাম পান্তাভাতে ৩০৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৮৩৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ৮৫০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম থাকে। গরমভাতে ক্যালশিয়াম মাত্র ২১ মিলিগ্রাম। স্বাভাবিকভাবেই পান্তাভাত চাঙ্গা রাখছে শরীর। কী থাকছে পান্তা প্ল্যাটারে? অধিকাংশ রেস্তরাঁর পান্তা প্ল্যাটারে রয়েছে জলে ভেজানো সুগন্ধী চালের ভাত, আলু সিদ্ধ, আমতেল, পিঁয়াজ, লঙ্কা আর ভাজা মরিচ।
সেক্টর ফাইভে দলমা নামে এক রেস্তরাঁয় পান্তাভাতের এমনই চাহিদা, দুপুর একটার পর আর পাওয়াই যাচ্ছে না। ক্রেতারা সকলেই তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের কর্মী। খাদ্যরসিক অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়ের আফসোস, পুরনো সব জিনিসই ভুলতে শুরু করেছে এই প্রজন্ম। অভিনেতার কথায়, ‘‘বাড়িতে বানানো পাটিসাপটা, নিমকির মতো পান্তাভাতের রেসিপিও জানেন না তেইশ-পঁচিশরা। পান্তা পেতে গেলে তাঁদের ভরসা তিনতারা রেস্তরাঁ।’’